বিসিবির বোর্ড সভা আজ

যেসব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসতে পারে

প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় ব্যস্ত ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। যে কারণে পিছিয়ে দেয়া হয়েছিল বিসিবির কার্য নির্বাহী পরিষদের সাধারণ সভা। অবশেষে ছয় মাসেরও বেশি সময় পর হতে যাচ্ছে বোর্ড সভা। আজ দুপুরে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে বিসিবির কার্যালয়ে শুরু হবে এই আলোচনা। দীর্ঘ সময় পর হতে যাওয়া এই সভায় আলোচনায় আছে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। তার মধ্যে সবচেয়ে আগ্রহে বিশ্বকাপ ব্যর্থতার তদন্ত প্রতিবেদন, জাতীয় দলের নেতৃত্ব ও নির্বাচক প্যানেল। এজেন্ডায় থাকবে শেখ হাসিনা স্টেডিয়ামের অবকাঠামো নির্মাণের চূড়ান্ত নিলাম। নতুন কোচ নিয়োগ, জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের কেন্দ্রীয় চুক্তি। এছাড়া তামিম ইকবালের খেলা, না খেলাও আলোচনায় আসতে পারে। এ বিষয়ে গতকাল রোববার বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরি সুজন বলেন, ‘আমরা আশা করছি আগামীকাল ৪টায় শুরু হবে বোর্ড মিটিং। আমাদের মিটিংয়ে অর্থনৈতিক ব্যাপারগুলোর পাশাপাশি নির্বাচক প্যানেল নিয়ে আলোচনা হবে। এছাড়া আমাদের স্টেডিয়ামের কাজ নিয়ে বোর্ডকে আপডেট জানানো হবে। স্টেডিয়াম সংশ্লিষ্ট কিছু বিষয় অনুমোদনের জন্য বোর্ডে পেশ করা হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এটা আমাদের এজেন্ডায় রাখা আছে। বোর্ডে আলোচনার পর যদি বলার মতো কিছু থাকে তখন আপনারা জানতে পারবেন। আমাদের সিলেক্টরদের মেয়াদ কিন্তু শেষ হয়ে গেছে। এরপর তো মেয়াদ আরও বাড়ানো হয়েছিল। বোর্ডে আলোচনার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যাবে।’ গত বছর জুন মাসে সর্বশেষ সাধারণ সভা করেছিল বিসিবি। মাঝখানে জাতীয় নির্বাচনের কারণে ব্যস্ত ছিলেন বিসিবি সংশ্লিষ্ট অনেকেই। নির্বাচনের পর কিছু বাস্তবতার ছবিও বদলেছে। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন নতুন সরকারে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। বিসিবির আরেক পরিচালক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল প্রথমবার সংসদ সদস্য হয়েছেন।

বোর্ড সভার আলোচনায় প্রাধান্য পাবে

বিশ্বকাপ ব্যর্থতার পর্যালোচনা রিপোর্ট : গত অক্টোবর-নভেম্বরে ভারতে হয়ে যাওয়া বিশ্বকাপে চরম ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ দল। বিশ্বকাপের আগে নাটকীয়ভাবে তামিম ইকবালের না থাকা, সাকিব আল হাসানের বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার এবং বিশ্বকাপে দলের পারফর্ম না করার কারণ খতিয়ে দেখতে একটি কমিটি করে বিসিবি। তিন সদস্যের সেই কমিটি সংশ্লিষ্ট সভার সঙ্গে কথা বলে তাদের প্রতিবেদন তৈরি করেছে। সেই প্রতিবেদন বোর্ড সভায় জমা দেয়ার পর তা নিয়ে হবে আলোচনা।

জাতীয় দলের নির্বাচক প্যানেল : মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় দলের নির্বাচক প্যানেলের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ডিসেম্বরে। মেয়াদ শেষ হলেও এখনো কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন নান্নু, হাবিবুল বাশার সুমন আর আব্দুর রাজ্জাক। তাদের মেয়াদ বাড়ানো হবে নাকি নতুন নির্বাচক প্যানেল নিয়োগ দেয়া হবে তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বোর্ড সভায়। একটি সূত্রে জানা গেছে, আগামী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে বর্তমান নির্বাচক প্যানেলের মেয়াদ। দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্বে থাকা প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু নানান কারণে সমালোচিত হলেও তার জায়গায় অন্য কেউই তেমন আলোচনায় নেই। তবে মিনহাজুলকে সরিয়ে হাবিবুল বাশারকে প্রধান নির্বাচক করার সম্ভাবনাও আছে। সেক্ষেত্রে নির্বাচক প্যানেলে নতুন একজনকে যুক্ত করতে হবে। সেই একজন হিসেবে আসতে পারেন হান্নান সরকার।

জাতীয় দলের নেতৃত্ব : জাতীয় দলের নেতৃত্ব বোর্ড সভায় আনুষ্ঠানিক এজেন্ডায় না থাকলেও এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বাস্তবতা আছে। গত ওয়ানডে বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে সাকিব একটি সাক্ষাতকারে জানিয়ে যান, বিশ্বকাপ শেষে আর একদিনও নেতৃত্ব দিতে চান না তিনি। এই অবস্থান থেকে সাকিব সরে এসেছেন কি না, তা স্পষ্ট করেননি। তিনি বল ঠেলে দিয়েছেন বোর্ডের দিকে। সাকিবের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করেছে তার ফিটনেস ইস্যুও। আঙুলের চোটে বিশ্বকাপের শেষ দিকে ছিটকে যাওয়া এই ক্রিকেটার বিশ্বকাপের পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই সিরিজে ছিলেন না। ওই সময় অবশ্য নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত দেখা যায় তাকে। বিপিএলের আগে তার চোখের সমস্যা আসে নতুন করে আলোচনায়। চোখের সমস্যায় বিপিএলের আগে এবং মাঝেও চিকিৎসা নিতে দেশের বাইরে যান তিনি। পরে কেবল বোলার হিসেবে কিছু ম্যাচ খেলতে দেখা গেছে তাকে। বিপিএল খেলতে পারলেও সাকিব আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তীব্রতা নেওয়ার মতন অবস্থায় আছেন কি না, তা দেখার বিষয়। সব সংস্করণেই তাকে খেলানো যাবে কি না এটাও অনিশ্চিত। বিপিএলের পর পরই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঘরের মাঠে তিন সংস্করণের সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ।

এই সিরিজ পুরোটাই সাকিব খেলতে পারবেন কি না, না পারলে কে নেতৃত্ব দেবে তা ঠিক করার বিষয় আছে। নেতৃত্বের ইস্যু ঝুলিয়ে না রেখে তরুণ কাউকে লম্বা সময়ের জন্য দায়িত্বে দেওয়া নিয়ে বিশ্বকাপের পর থেকেই আলোচনা জারি আছে। যদিও বিসিবির নীতি নির্ধারকরা এখনো সাকিবের দিকেই তাকিয়ে আছেন। নতুন বছরের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে কোনো ক্রিকেটাররা আছেন তাও এখনো প্রকাশ করা হয়নি। কেন্দ্রীয় চুক্তিতে তাকে না রাখতে বছর শেষের আগেই জানিয়েছিলেন তামিম ইকবাল। তিনি থাকছেন না নিশ্চিত। আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরবেন কি না তা বিপিএলের মাঝেও জানানোর কথা বলেছিলেন তামিম (ফেরার প্রায় নেই বললেই চলে)। এছাড়া মাহমুদউল্লাহকে ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি দুই সংস্করণে চুক্তিতে রাখা হবে কি না, সেই সিদ্ধান্তও আনুষ্ঠানিক রূপ পাবে এই সভায়।