চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিদায়

তামিম-মেয়ার্সের নৈপুণ্যে কোয়ালিফাইয়ারে বরিশাল

প্রকাশ : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) প্লে-অফ রাউন্ডা শুরুর ঘণ্টা তিনেক আগেই লোকে-লোকারণ্য মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়াম। কারো গায়ে জার্সি, কারো মাথায় প্রিয় দলের ব্যান্ড। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে জনস্রোতে জোয়ার এলো আরও। চারিদিকে গ্যালারি যেন দর্শকে টইটুম্বুর। কিন্তু মাঠের লড়াইয়ে মিলল না তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার সেই ঝাঁজ। ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ফরচুন বরিশালের কাছে পাত্তাই পেল না চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। অথচ গ্রুপ পর্বের দুই ম্যাচেই বরিশালকে হারিয়েছিল চট্টগ্রাম। গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে দারুণ বোলিং করে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের পুঁজিটা হাতের নাগালে রাখতে রাখেন দারুণ ভূমিকা। তবে সতীর্থ বোলাররাও জ্বলে উঠেছিলেন দারুণভাবে। এরপর ব্যাট হাতে তো ঝড় তুললেন কাইল মেয়ার্স। ঝড়ো ব্যাটিং করেন অধিনায়ক তামিম ইকবালও। তাতে রীতিমতো বিধ্বস্ত হয়েই আসর থেকে বিদায় নিল চট্টগ্রাম। অসাধারণ এক জয় তুলে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার নিশ্চিত করল ফরচুন বরিশাল। গতকাল সোমবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) এলিমিনেটর রাউন্ডের ম্যাচে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে ফরচুন বরিশাল। প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৩৫ রান করে চট্টগ্রাম। জবাবে ৩১ বল বাকি থাকতেই লক্ষ্যে পৌঁছায় বরিশাল। অথচ গ্রুপ পর্বের দুই ম্যাচেই বরিশালকে হারিয়েছিল চট্টগ্রাম। সিলেটে দুই দলের প্রথম লড়াইয়ে ১০ রানে হারে বরিশাল। আর দ্বিতীয় লড়াইয়ে তারা হারে ১৬ রানে। কিন্তু নকআউট পর্বে এসে ঠিকই জয় তুলে নিল তামিম ইকবালের দল। ১৩৬ রানের সাদামাটা লক্ষ্য তাড়ায় নেমে শুরুতে বড় বিপদেই পড়তে পারতো বরিশাল। শুভাগত হোমের বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে শুরুতেই খালি হাতে বিদায় নেন ওপেনিংয়ে নামা সৌম্য সরকার। আল-আমিন হোসেনের করা পরের ওভারের প্রথম বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট সীমানায় ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন আরেক ওপেনার অধিনায়ক তামিম ইকবাল। তবে সে সুযোগ লুফে নিতে পারেননি সৈকত আলী। জীবন পেয়ে তার সদ্ব্যবহার দারুণভাবে করেন তামিম। আল-আমিনের সে ওভারে তিনটি বাউন্ডারি মারার পর শুভাগতর পরের ওভারে মারেন আরো দুটি। আর তিনে নামা মেয়ার্স তো তাণ্ডব চালাতে থাকেন।

শুভাগত দ্বিতীয় ওভারে প্রথম ছক্কা পাওয়া এ ব্যাটার চট্টগ্রাম অধিনায়কের পরের ওভারে টানা পাঁচটি বাউন্ডারি মারেন। এর মধ্যে ছক্কা তিনটি। ফলে পাওয়ার প্লেতেই ১ উইকেটে ৭৩ রান করে বরিশাল। পাওয়ার প্লে শেষেও থামেনি এ দুই ব্যাটারের আগ্রাসন। নিয়মিত বাউন্ডারি মেরে এগিয়ে যেতে থাকেন তারা। এরই মধ্যে ২৫ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন মেয়ার্স। অবশ্য বিলাল খানের করা ঠিক পরের বলেই কাট করতে গিয়ে উইকেটরক্ষক ইমরান উজ্জামানের হাতে ক্যাচ তুলে সাজঘরে ফেরেন এই ওপেনার। ভাঙে ৯৮ রানের জুটি। ২৬ বলে তিনটি চার ও ৫টি ছক্কায় ৫০ রান করেন মেয়ার্স। এরপর ডেভিড মিলার নেমে ১৩ বলে ১৭ রান করে আউট হন রোমারিও শেফার্ডের শিকার হয়ে। তবে তাতে কোনো সমস্যা হয়নি। বাকি কাজ মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে শেষ করেন তামিম। ৪১ বলে ফিফটি স্পর্শ করা বরিশাল অধিনায়ক শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ৫২ রানে। ৪৩ বলে ৯টি চারের সাহায্যে সাজান নিজের ইনিংস। এদিন ব্যাটিং লাইনআপে চট্টগ্রামের বড় ভরসার নাম ছিলেন তানজিদ হাসান। কিন্তু এদিন তাকে শুরুতেই ছাঁটাই করেন সাইফউদ্দিন। তার শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে আকাশে তুলে দেন এই ওপেনার। সে ক্যাচ ধরতে কোনো ভুল হয়নি উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের। ২ রান আসে তার ব্যাট থেকে। জশ ব্রাউন আশা দেখাচ্ছিলেন। ব্যক্তিগত ২০ রানে একটি সহজ জীবনও পেয়েছিলেন। কিন্তু ইনিংস লম্বা করতে পারেননি। ২২ বলে ৩৪ রান করে ওবেড ম্যাককয়ের শিকার হন তিনি। অবশ্য সীমানায় দারুণ ক্যাচ ধরেছেন ডেভিড মিলার। দুটি চার ও ৩টি ছক্কায় এই রান করেন এই অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটার। এছাড়া কিছুটা চেষ্টা চালিয়েছেন অধিনায়ক শুভাগত হোম। তিনিও পারেননি ইনিংস লম্বা করতে।

১৬ বলে চারটি চারের সাহায্যে ২৪ রান করেন। ব্যর্থ হয়েছেন টম ব্রুস (১৭), সৈকত আলী (১১), রোমারিও শেফার্ডরাও (১১)। বরিশালের পক্ষে কাইল মেয়ার্স ও সাইফউদ্দিন দুইজন চার ওভার বলে সমান ২৮ রান খরচ করে সমান দুটি করে উইকেট নেন। চার ওভার বল করে তাদের চেয়ে এক রান বেশি দিয়ে দুটি উইকেট পান ম্যাককয়ও।