টিকিট নিয়ে হাহাকার কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্য

প্রকাশ : ০২ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

ঢাকা থেকে সিলেট ঘুরে ফের ঢাকা হয়ে চট্টগ্রাম পর্ব শেষ করে আবারো রাজধানীতে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। তবে এবার বেজে উঠেছে বিদায়ের সানাই। গতকাল শুক্রবার পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে উৎসবের মঞ্চায়ন। তার আগে দশম আসরের ফাইনাল ঘিরে মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়াম ও এর আশপাশে উপচে পড়েছে দর্শক। সন্ধ্যায় শিরোপা লড়াইয়ে মুখোমুখি হবে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ও ফরচুন বরিশাল।

কিন্তু দুপুর থেকেই মিরপুর স্টেডিয়াম এলাকা লোকে-লোকারণ্য হয়ে যায়। প্রায় সব দর্শকদের গায়ে জার্সি, তবে রং একই হওয়ায় দূর থেকে মেলানো কষ্ট হয়ে যায়, কে কোন দলের সমর্থক। যে দিকেই চোখ যায় সব লালে-লাল। টসের আগেই গ্যালারির সব আসন কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। লড়াইটি শিরোপা নির্ধারণী হওয়ায় সমর্থকদের আগ্রহ ও উন্মাদনার পারদ আগের সবকিছুকে ছাড়িয়ে উঠেছে চূড়ায়। এমন উত্তেজনার ম্যাচে একটি টিকিট যেন সোনার হরিণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিটের দেখা মেলেনি। সেই হাহাকার দেখা গেছে আজও। দৌরাত্ম্য বেড়েছে ব্ল্যাকারদের। তিনগুণ-চারগুণ দামে দর্শকরা টিকিট কাটছেন কালোবাজারিদের কাছ থেকে। হতাশা আর ক্ষোভ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী রেজাই রাব্বী বলেন, ‘দেখলেন ভাই, কাউন্টারে সাইনবোর্ড ঝোলানো যে টিকিট নেই, কিন্তু বাইরে ঠিকই পাওয়া যাচ্ছে।’ স্টেডিয়ামের এক নম্বর গেট সম্বলিত টিকিট কাউন্টারে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে, ‘বিপিএল ফাইনালের টিকিট ইনডোর স্টেডিয়ামে পাওয়া যাবে।’ কাউন্টারের আশপাশে হাঁটতে দেখে এক ব্যক্তি ৩০০ টাকা মূল্যের ইস্টার্ন গ্যালারির টিকিট বিক্রি করতে চাইলেন ১ হাজার ২০০ টাকায়। এত টাকা খরচ করার সাধ্য নেই তাই মুখ কালো করে এদিক-সেদিক হাঁটতে লাগলেন তাশরিফ ও তার বন্ধুরা। ফাইনাল শুরুর আগে স্টেডিয়াম এলাকার সার্বিক চিত্র ছিল এমনই।

কেউ অনেক প্রতীক্ষার পর পেয়েছেন টিকিট, কেউ টিকিটের জন্য ঘুরছেন হন্যে হয়ে। কালোবাজারির অভিযোগ প্রায় সবার মুখে মুখে। মাঠের চারপাশে ঘুরে সেসবের সত্যতাও মিলেছে বেশ কয়েক দফায়। দুই ছেলেকে নিয়ে খেলার দেখার আশায় স্টেডিয়ামে এসে টিকিট নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়ে ক্ষোভ ঝারলেন সাইফুল ইসলাম সাইফ। ‘সেই কিশোর বয়স থেকে অসংখ্য ম্যাচ দেখেছি এই স্টেডিয়ামে বসে। টিকিট নিয়ে সমস্যা আগেও অনেকবার দেখেছি। কিন্তু প্রতিবারই ব্যবস্থা করতে পেরেছি। এবার কোথাও টিকিট পাচ্ছি না। মনে হচ্ছে বাসায় টিভিতেই খেলা দেখতে হবে।’ সাইফের মতো টিকিটপ্রত্যাশী মানুষের ভিড় দেখা যায় স্টেডিয়ামের বিভিন্ন গেটে। সকাল থেকেই দেখা যায় দর্শক সমাগম। তাদের অনেকের টিকিট থাকলেও, টিকিটপ্রত্যাশী দর্শকই যেন বেশি ছিল এলাকাজুড়ে। ইনডোর কিংবা শেরে বাংলার বিভিন্ন গেটের সামনে কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্য দেখা গেছে প্রকাশ্যেই। ৩০০ টাকার টিকিট ১ হাজার টাকায়, ৮০০ টাকার টিকিট আড়াই হাজার টাকায়ও বেচাকেনা হয়। কালোবাজারিদের নিজেদের মধ্যে মারামারির ঘটনাও ঘটেছে স্টেডিয়ামের এক নম্বর গেটের কাছে। টিকিট ভাগাভাগি নিয়ে শুরুতে কথা কাটাকাটি, পরে হাতাহাতি শুরু করেন দুজন। পরে পুলিশ এসে তাদের উত্তমণ্ডমধ্যম দিয়ে স্টেডিয়াম এলাকা থেকে বিদায় করেন। শুধু কালোবাজারি নয়, অনলাইনে পেমেন্ট করে টিকিট নিশ্চিত করার পরও কাউন্টার থেকে সেটি সংগ্রহ করতে না পারার অভিযোগও মিলেছে কয়েকজনের কাছ থেকে। দুপুরের পর ইনডোর স্টেডিয়ামের বুথে অনলাইনে কাটা টিকিট দেয়া হয়েছে কিছু। কিন্তু টিকিট হাতে না পেয়ে হতাশ রাহাত হোসেন। উমর ফারুক বলেন, ‘অনেক আশা নিয়ে গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডের টিকিট করেছিলাম অনলাইনে। অফিস বাদ দিয়ে সকালে কাউন্টারে এসে দেখি মারামারি। অফিস শেষ করে আবার এসে দেখি কাউন্টারে কেউ নেই। পুরো টাকাটাই লস। অনলাইনে টিকিট কেটেও তো শান্তি নেই।’ অনলাইনে টিকিট কেটে সেটি সংগ্রহ করতে না পারার অভিযোগ ছিল প্রথম কোয়ালিফায়ার ম্যাচেও। ফাইনালেও যেন বদলায়নি সেই চিত্র। অনলাইনে টিকিট করেও যদি সেই টিকিট কাউন্টার থেকে সংগ্রহ করার ঝামেলা পোহাতেই হয়, তাহলে এই অনলাইনে করে লাভ কি, এই প্রশ্ন তুললেন অনেকেই। টিকিটের অব্যবস্থাপনার অভিযোগের বিষয়ে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান শেখ সোহেল ও বিসিবি প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরিকে কয়েকবার ফোন করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। সর্বনিম্ন ২০০ টাকায় ছিল ইস্টার্ন গ্যালারির টিকিট। গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডের টিকিটের দাম ২ হাজার ৫০০ টাকা। ভিআইপি স্ট্যান্ডের টিকিট ১ হাজার ৫০০ টাকা। এ ছাড়া, ক্লাব হাউজ ৮০০ টাকায় এবং নর্থ ও সাউথ স্ট্যান্ডের টিকিটের দাম ৫০০ টাকায় বিক্রি করেছে বোর্ড। কিন্তু খুব কম সংখ্যক দর্শকই কিনতে পেরেছেন নির্ধারিত মূল্যে।