ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কুসাল-তুশারার নৈপুণ্যে সিরিজ শ্রীলঙ্কার

ইতিহাস গড়া হলো না বাংলাদেশের

ইতিহাস গড়া হলো না বাংলাদেশের

আগের দুই ম্যাচে ১-১ এ সমতা থাকায় সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি রূপ নিয়েছিল অঘোষিত ফাইনালে। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ১৭৪ রানে আটকাতে পারলেও নিজেরা ১৭৫ রান করতে পারেনি। একের পর এক উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে রান যখন মাত্র ৩২ ততক্ষণে লেজ বেরিয়ে যায় বাংলাদেশের। দলের শীর্ষ ছয় ব্যাটার তখন সাজঘরে। বড় হার তখন চোখ রাঙাচ্ছে বাংলাদেশকে। এরপর কী দারুণ ব্যাটিংই না করলেন রিশাদ হোসেন। গড়লেন দেশের হয়ে ছক্কার নতুন রেকর্ডও। তার বিদায়ের পর গর্জে ওঠে তাসকিন আহমেদের ব্যাটও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লড়াইটা করতে পারেননি তারা। ফলে সুযোগ পেয়েও ইতিহাস গড়তে পারেনি লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। বাংলাদেশের হয়ে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ডও নিজের করে নিয়েছেন লেগস্পিনার রিশাদ। তবে দলকে জেতানোর মতো পর্যাপ্ত সময় হাতে ছিল না রিশাদের। বড় শট খেলতে গিয়ে আউট হয়েছেন। তাতে নিশ্চিত হয়েছে বাংলাদেশের হারও। তাসকিন নিজেও চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ব্যাটাররা যেদিন ব্যর্থ, সেদিন শেষের ঝড়টাও টাইগারদের দিতে পারেনি জয়ের সুবাস। নুয়ান তুশারার হ্যাটট্রিক আর ৫ উইকেট শিকারের দিনে বাংলাদেশ আরো একবার স্বাদ পেল সিরিজ হারের। লঙ্কানদের বিপক্ষে আগে কখনোই সিরিজ জেতা হয়নি টাইগারদের। সিলেটে প্রথম ম্যাচে তিন রানের হারের পর দ্বিতীয় ম্যাচে জয়। তৃতীয় ম্যাচে তাই প্রত্যাশার পারদ কিছুটা উঁচুতেই ছিল বাংলাদেশের জন্য। কিন্তু তুশারার কল্যাণেই জয় আসেনি বাংলাদেশের ভাগ্যে। ২৮ রানের জয় নিয়ে সিরিজ নিজেদের করল সফরকারী শ্রীলঙ্কা। ১৭৫ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুটাই নড়বড়ে ছিল বাংলাদেশের জন্য। ইনিংসের প্রথম বলেই অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের বলে আসে এলবিডব্লিউ’র আবেদন। আম্পায়ার তা ফিরিয়ে দিলেও রিভিউ নেয় লঙ্কানরা। লিটন জীবন পান আম্পায়ার্স কলের সুবাদে। যদিও সেটা কাজে লাগাতে পারেননি এই ওপেনার। ১১ বলে ৭ রান করে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার বলে নিজের উইকেট হারান লিটন। এরপরের পর্বটা কেবলই তুশারার। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে প্রথম তুশারাকে বোলিংয়ে আনলেন অধিনায়ক হাসারাঙ্গা। মুহূর্তেই বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ ধসে পড়ল তাসের ঘরের মতো। ওভারের দ্বিতীয় বলে নাজমুল হোসেন শান্ত, তৃতীয় বলে হৃদয় এবং চতুর্থ বলে মাহমুদউল্লাহকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিক তুলে নেন তুশারা। এখানেই থামেনি তার ধ্বংসযজ্ঞ। নিজের দ্বিতীয় ওভারে এসে ফিরিয়ে দিয়েছেন সৌম্য সরকারকেও। হ্যাটট্রিক করার পথে বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তকে তুশারা ফিরিয়েছেন দুর্দান্ত এক ইনসুইং ডেলিভারিতে। বেসামাল শান্ত অফ স্ট্যাম্প খুইয়েছেন তার ইনসুইংয়ে। এরপর হৃদয় এসে কিছু বুঝে ওঠার আগেই আউট হয়ে গেলেন। এবার দ্রুতগতির আউটসুইংয়ের পাশাপাশি ইয়র্কার দিয়েছেন তুশারা। বোল্ড হয়ে ফেরেন হৃদয়। মাহমুদউল্লাহ এসেও ভরসা হতে পারেননি। তুশারার আরেকটি আউটসুইং ডেলিভারিতে সাজঘরে ফেরেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটার। তবে ভাগ্যকে কিছুটা দুষতে পারেন তিনি। এলবিডব্লিউতে আউট হলেও ইম্প্যাক্ট ও উইকেট হিটিং দুটোতেই ছিল ‘আম্পায়ার্স কল’। অর্থাৎ, আম্পায়ার যদি আউট না দিতেন তাহলে এলবি হতেন না মাহমুদউল্লাহ। সেক্ষেত্রে হ্যাটট্রিকও হতো না তুশারার। এক ওভার পর আবার আঘাত হেনেছেন তুশারা। এবার তার শিকার হয়েছেন সৌম্য সরকার। আগের তিন উইকেটের মতো এবারেও সুইং আর গতিতেই পরাস্ত করেছেন টাইগার ওপেনারকে। দুই ওভারে দুই রান দিয়ে নিয়েছেন ৪ উইকেট। এবারের সিরিজে জাকের আলি অনিককে নিয়ে হইচই ছিল বেশ। তিনিও এদিন ব্যর্থ। অভিজ্ঞ লঙ্কান স্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার বাড়তি স্পিনের বলটা ব্যাটে ছোঁয়াতে ব্যর্থ জাকের। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি। শেখ মেহেদিকে নিয়ে এরপর রিশাদ চেষ্টা করেছেন ইনিংস মেরামতের। দুজনের জুটি ছিল ৪৪ রানের। পরাজয়ের ব্যবধান কমানোই ছিল লক্ষ্য। দুজনের কেউই ঝুঁকি নেননি। খেলতে চেয়েছেন বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। এরই মধ্যে রিশাদ অবশ্য বড় শট খেলেছেন মাহিশ থিকসানার বলে। সেটাই আত্মবিশ্বাসের পালে দিয়েছে হাওয়া। মেহেদি ছিলেন হাসারাঙ্গার দ্বিতীয় শিকার। সরাসরি বোল্ড হয়ে ফিরেছেন তিনি। বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে ৭৬ রানে নেই ৭ উইকেট। দলীয় শত রান পার হওয়া নিয়েই ছিল শঙ্কা। তবে সেখান থেকে পথ দেখালেন তাসকিন-রিশাদ। ২১ বলে দুজনে তুললেন ৪১ রান। বড় শট খেলে পরাজয়ের ব্যবধান কমানোর চেষ্টা করেছেন দুজনে। সেটায় সফলও হয়েছেন। রিশাদ পেয়েছেন ফিফটি। সফরকারী বোলারদের নাভিশ্বাস তুলে ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে তিনি ফিফটি করেছেন। টাইগারদের হারের ব্যবধান কমিয়ে তিনি ফিরেছেন ৩০ বলে ৫৩ রান করে। বিধ্বংসী এই ইনিংস খেলতে সাতটি ছয় হাঁকিয়েছেন রিশাদ। আর তাতেই দেশের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ ছয়ের রেকর্ড তিনি নিজের দখলে নিয়ে নিলেন। চলতি সিরিজেই সেই রেকর্ডটি নতুন করে লিখিয়েছিলেন জাকের আলি অনিক। অভিষেক ইনিংসেই তিনি ৬ ছক্কা হাঁকান, যা ছিল টাইগারদের হয়ে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ছয়ের রেকর্ড। সেটাই এদিন ভেঙে দেন স্পিন অলরাউন্ডার রিশাদ। তার আউটের পর বাংলাদেশের হয়ে লড়াই জিইয়ে রেখেছিলেন তাসকিন। ২১ বলে তিন চার আর ২ ছক্কায় করেছেন ৩১ রান। পরাজয়ের ব্যবধানটাও কমিয়েছেন তাতে। শেষ ব্যাটার হিসেবে যখন আউট হয়েছেন, তখন বাংলাদেশের স্কোর ১৪৬। টাইগারদের পরাজয় ২৮ রানে। এর আগে টস জিতে সফরকারী শ্রীলঙ্কাকে আগে ব্যাট করতে পাঠায় বাংলাদেশ। নিয়মিত বিরতিতে উইকেটের দেখা পেলেও এদিন টাইগার বোলারদের ভুগিয়েছেন কুশাল মেন্ডিস। তার ৮৬ রানের ইনিংস সফরকারীদের দিয়েছেন লড়াকু এক পুঁজি। কুশাল ছাড়া বড় রান করা হয়নি কারোরই। তবে দলীয় স্কোর ঠিকই চলে যায় ১৭৪ পর্যন্ত। বাংলাদেশের বিপক্ষে ২৮ রানের জয়ে এদিন সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছে লঙ্কানরা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত