অতীত ভুলে আজ নতুন শুরু চান শান্ত

প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

বিগত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট ম্যাচ ঘিরে বাইশগজে বিরাজ করে বাড়তি উত্তেজনা, যার সূত্রপাত ঘটেছিল ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কায় মাটিতে হওয়া নিদাহাস ট্রফি থেকে। সেবার বাংলাদেশের ‘নাগিন উদযাপন’র জবাবে শ্রীলঙ্কার পুরো দলও মাঠেই মেতে উঠেছিল নাগিন-নাচে। এরপর সে উত্তেজনার রসদ হিসেবে নিত্যনতুন অনুষঙ্গও যোগ হচ্ছে। গেল বছর ভারতে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে বিশ্বকাপে সাকিব আল হাসানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস টাইমড আউট হওয়া নিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটেই তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল। চলতি বছর প্রথমবার বাংলাদেশ সফরে এসেছে শ্রীলঙ্কা। লঙ্কানদের কাছে এরই মধ্যে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশ। সিলেটের মাটিতে তিন ম্যাচের একটিতে কেবল জয় পায় নাজমুল হোসেন শান্তর দল। সেই দুঃস্মৃতি ভুলে নতুন মিশনে টাইগাররা এখন বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। সেখানে আজ থেকে শুরু হবে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। তিন সংস্করণের মধ্যে ওয়ানডেকেই নিজেদের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা মনে করত বাংলাদেশ। ২০১৫ সালের পর থেকে ৫০ ওভারের ক্রিকেটেই যে সবচেয়ে বেশি ভালো করতে দেখা গেছে তাদের। তবে এই ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২০২৩ সালে। বিশ্বকাপ ব্যর্থতাসহ বছরজুড়েই বিবর্ণ পারফরম্যান্সে এলোমেলো অবস্থা ছিল দলের। নতুন নিয়মিত নাজমুল হোসেন শান্ত মনে করেন, এই সংকট সাময়িক। সিরিজের প্রথম ওয়ানডের আগের দিন গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রামে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন স্বাগতিক অধিনায়ক। ওয়ানডে ম্যাচ দেখতে দর্শকদের সমাগম খুব একটা হবে না চট্টগ্রামে, কেন না টাইগাররা খুব একটা আকর্ষণ করতে পারেনি বন্দরনগরী দর্শকদের। শান্ত বলেন, ‘এক ম্যাচ ভালো খেললে আমাদের সব কিছু ঠিক হয়ে যায়। আবার এক ম্যাচ হারলে আমরা অনেক খারাপ দল হয়ে যাই। এটা অতীতে হয়ে আসছে। রমজান শুরু হয়েছে, এটার কারণেও হতে পারে। এটা নিয়ে আমরা খুব বেশি চিন্তিত না।’

বাংলাদেশ অধিনায়ক অবশ্য দর্শকদের সমর্থন গ্রহণ করার পাশাপাশি, দুয়োধ্বনিও গ্রহণ করছেন। তিন ফরম্যাটের নতুন অধিনায়ক বিশ্বাস করেন দর্শকরা আশা করেন আরো ভালো ক্রিকেট খেলার। শান্তর ভাষ্যে, ‘আমাদের সমর্থকরা সবসময় মাঠে আসেন, খেলা দেখেন, দলকে সমর্থন করেন। মাঝেমধ্যে আবেগে যেসব কথাবার্তা বলেন এগুলো আমাদের কারণেই বলেন কারণ তারা আশা করেন আমরা আরো ভালো ক্রিকেট খেলতে পারি। তাই আমরাও আমাদের দিক থেকে শতভাগ চেষ্টা করি তাদের কীভাবে ভালো ফিডব্যাক দিতে পারি।’ ২০২৩ সালে ৩২টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ জিততে পারে ১১ ম্যাচে, হার ১৮টিতেই। অথচ ২০১৫ থেকে ২০২২ পর্যন্ত ১০৯ ম্যাচ খেলে ৬১টিতে জয়, আর ৪৫ ম্যাচে হারে বাংলাদেশ। বিশেষ করে এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপে শান্তদের পারফরম্যান্স ছিল হতশ্রী। এই সময়ে খেলার বাইরের নানান ইস্যুতে হাওয়া অনেক গরম হয়েছে, বিতর্কের চাপ সইতে হয়েছে প্রবলভাবে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নতুন বছরে নতুন আরেকটি ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে শান্ত পুরো বিষয়টাকে বিশাল উদ্বেগের দৃষ্টিতে দেখতে চান না, ‘সব সময় চ্যালেঞ্জ থাকবে। আন্তর্জাতিক যেকোনো দলের বিপক্ষে খেলার আগে চ্যালেঞ্জ থাক। যেটা বললেন ২০১৫ থেকে ২০২২ পর্যন্ত আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলেছি। কাজেই একটা বছর খারাপ যেতেই পারে। কিন্তু দল হিসেবে ঘুরে দাঁড়িয়ে এই বছরটা ভালোভাবে ফেরাটা গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য ভালোভাবে প্রস্তুত।’ গত বছর যেখানে ৩২টি ওয়ানডে খেলেছিল বাংলাদেশ, এবার খেলবে স্রেফ ছয়টি। যার তিনটি হবে লঙ্কানদের বিপক্ষে। বাংলাদেশ তাও ৬টি খেলবে। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ভারতের সামনে এই বছর কোন ওয়ানডে সিরিজই নেই। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের কারণ প্রচুর পরিমাণ টেস্ট তো আছেই, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কারণে আছে কুড়ি ওভারের অনেক খেলা। ওয়ানডে বিশ্বকাপের কারণে গত বছর যেমন ছিলো ওয়ানডের বছর, এই বছর তেমনটি টি-টোয়েন্টির। জুনে যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে হতে যাওয়া বিশ্বকাপ ঘিরেই চলবে আন্তর্জাতিক সূচির আবহ। টি-টোয়েন্টির বছরে ওয়ানডের জন্য নিজেদের তাতিয়ে তোলার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা দেখছেন না শান্ত। তার মনে হচ্ছে এই বাস্তবতা মেনে নিয়েই নিজেদের মানিয়ে চলছেন ক্রিকেটাররা, ‘খুব একটা প্রভাব ফেলে না (নিজেদের চাঙ্গা করতে)। কারণ এই জিনিসটা আমরা সবাই মানিয়ে নিয়েছে। গত চার-পাঁচ বছর ক্রিকেট এভাবেই এগুচ্ছে।’