তিন মাস পর বাফুফে ভবনে সালাউদ্দিন

পাপনের প্রশংসা, হামজা চৌধুরী সম্পর্কে যা বললেন

প্রকাশ : ১৪ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের দিনে বাফুফে ভবনে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের নামফলক উন্মোচন করেছিলেন কাজী মো. সালাউদ্দিন। তারপর আর ফেডারেশনে পা পড়েনি বাফুফে সভাপতির। প্রায় তিন মাস (৮৭ দিন) পর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ভবনে আসলেন তিনি।

গতকাল বুধবার দুপুর ২টার একটু আগে সালাউদ্দিন ফেডারেশনে পৌঁছান। সভাপতির আগমন উপলক্ষ্যে নির্বাহী কমিটির তিন-চারজন কর্মকর্তাও এসেছিলেন। ঘণ্টাখানেক সভাপতির কক্ষে দাপ্তরিক আলাপ সেরে মিডিয়ার সামনে এসেছিলেন বাফুফে সভাপতি। সেখানে বিভিন্ন বিষয়ে মন্তব্যের একপর্যায়ে তিনি যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপনের প্রশংসা করেছেন। ওপেন হার্ট সাজার্রির ধকল অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছেন তিনি। ফলে বাহ্যিকভাবেও তাকে অনেকটা সুস্থ দেখা গেছে। বিগত সময়ের তুলনায় গলার শুষ্কতা একটু বেশি বোধ হয়েছে। এছাড়া তেমন বাড়তি কোনো বিষয় পরিলক্ষিত হয়নি। নিজের শারীরিক পরিস্থিতি, ফুটবলীয় কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে সাধারণ আলোচনার পর ওঠে আসে তার বাসায় যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপনের সফরের বিষয়টি। সালাউদ্দিনের বাসায় সৌজন্য সাক্ষাতের পর পাপন বলছিলেন, ‘দীর্ঘদিনের সম্পর্ক একদিনে নষ্ট হওয়ার নয়।’

পাপন অকপটে বলেছিলেন তিনিও খেলোয়াড় সালাউদ্দিনের ভক্ত। তার খেলা দেখতেই মাঠে যেতেন। সালাউদ্দিন অসুস্থ থাকায় তখন তার কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। ফেডারেশনে এসে সালাউদ্দিনও পাপনের প্রসঙ্গে একই কথা বললেন, ‘আমাদের অনেক দিনের সম্পর্ক। আজ-কালের নয়। পারিবারিক সম্পর্ক।’ পাপন সালাউদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাতের পর অনেক প্রশংসাই করেছেন। এটা সালাউদ্দিনের প্রত্যাশিতই ছিল, ‘আমাদের মধ্যে খুব সৌহাদ্যপূর্ণ কথা হয়েছে। পাপন এরকম স্ট্যাটমেন্ট দেবে, সেটা প্রত্যাশিতই ছিল। আমার কাছেও পাপনের একই প্রত্যাশা।’ বিসিবি সভাপতি হলেও পাপন যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী হয়েছেন। ক্রীড়ামন্ত্রী হয়ে ফুটবলে জোর দেওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি। পাপনের মন্তব্য সম্পর্কে সালাউদ্দিন বলেন, ‘পাপন খুব শিক্ষিত ছেলে। ও যেটা বলেছে সেটা সঠিক। যেখানে ২১১ দেশ যুদ্ধ করে। যা অন্য কোনো খেলায় পাবেন না।’ সাম্প্রতিক সময়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ফুটবলার হামজা চৌধুরীর বাংলাদেশের জার্সিতে খেলার আগ্রহ প্রকাশ এবং বাফুফে থেকে তাকে পাওয়ার প্রক্রিয়া শুরুর বিষয় নিয়ে। হামজা এবং প্রবাসী ফুটবলার নিয়ে বাফুফে সভাপতির ভাবনা কি জানতে চাইলে কাজী মো. সালাউদ্দিন বলেন, ‘প্রবাসী ফুটবলার আর হামজা চৌধুরীর বিষয়টা এক নয়। হামজার খেলার বিষয়টি পুরোপুরি নির্ভর করছে তার ক্লাবের সিদ্ধান্তের ওপর। আমাদের অফিস তার সঙ্গে যোগাযোগ করছে। বাংলাদেশের জার্সিতে তার খেলতে হলে অনেক বিষয় আছে। হামজা খেলতে চাইলেই হবে না। সে খেলতে চাইলে তাকে অবশ্যই তার ক্লাবের অনুমতি নিতে হবে। তারপর হামজার চাহিদা কেমন সেটাও তো দেখতে হবে। আসলে এখানে অনেক কিছু আছে। হামজা খেলতে চাইলে কেন নেব না। আমরা তাকে সেধেই নেবো।’ কাজী সালাউদ্দিনের কাছে প্রশ্ন ছিল, ‘আপনি কখনো কোথাও বলেছেন কি না যে, হামজা চৌধুরী বাংলাদেশে খেলতে চাইলে তাকে যোগ্যতার প্রমাণ করতে হবে? বাফুফে সভাপতি তখন ওই সাংবাদিককে পাল্টা প্রশ্ন করেন ‘আচ্ছা বলেন, আমাকে দেখে কি পাগল মনে হয়? আমি তো ফুটবল খেলে এসেছি। হামজা বাংলাদেশে খেলতে চাইলে তাকে যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে এ কথা কেউ যদি বলে তাহলে তো সে পাগল (হাসি)।’ প্রসঙ্গত, বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের হৃদযন্ত্রের সমস্যা এক দশক আগেই ধরা পড়েছিল। চিকিৎসকের নির্দেশনা চললেও গত বছর ১৬ ডিসেম্বর ফেডারেশন থেকে ফেরার পথে বুকে ব্যথা অনুভব করেন। এরপর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে পরিবার। এনজিওগ্রামে কয়েকটি ব্লক ধরা পড়ায় বাইপাস সার্জারি করা হয় সালাউদ্দিনের। ২৮ ডিসেম্বর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে কাজী সালাউদ্দিনের হৃদযন্ত্রের ব্লক অপসারণের জন্য সফল অস্ত্রোপচার করা হয়। দীর্ঘ ২৫ দিন হাসপাতালে থাকার পর তিনি বাসায় ফিরেছিলেন জানুয়ারির ৯ তারিখ। তারপর থেকে তিনি ডাক্তারের পরামর্শে বাসায়ই বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তার মেয়ে ও মেয়ের জামাই কাজী সালাউদ্দিনকে নিয়ে গিয়েছিলেন জার্মানি। ২৮ দিন পর গত মঙ্গলবার দেশে ফিরেছেন তিনি। তার একদিন পর গতকাল বুধবার বাফুফে ভবনে পা রাখেন কাজী সালাউদ্দিন। সভাপতির আগমন উপলক্ষ্যে নির্বাহী কমিটির কয়েকজন কর্মকর্তাও এদিন ফেডারেশনে আসেন।