আনন্দ নিমিশে বিষাদে পরিণত

প্রসবকালীন জটিলতায় সাফজয়ী ফুটবলারের মৃত্যু

প্রকাশ : ১৫ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

ছয় বছর আগে সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ নারী ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। সেই দলের অন্যতম সদস্য রাজিয়া খাতুন। ২০২০ সালে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) ক্যাম্প ছেড়েছিলেন সাফজয়ী এই নারী ফুটবলার। করেছিলেন বিয়ে। গেল কয়েক দিন ধরেই তার বাড়ি সাতক্ষীরার কালীগঞ্জে লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামে বইছিল আনন্দের জোয়ার। গত বুধবার রাতে একটি ফুটফুটে পুত্র সন্তানের জন্ম দেন রাজিয়া। তার পরেই যেন বিষাদে পরিনত হয় তার বাড়ির পরিবেশ। সন্তান প্রসব পরবর্তী জটিলতায় পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে পাড়ি জমান সাফ জয়ী এই নারী ফুটবলার।

রাজিয়ার পরিবার এই মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। জানা গেছে, সন্তান প্রসবের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয় তার। সেই রক্তক্ষরণেই প্রাণ হারিয়েছেন। রাজিয়া খাতুনের খালাতো ভাই মো. রোকোনুজ্জামান মোড়ল বলেন, ‘বুধবার রাতে রাজিয়া গ্রামের বাড়িতে একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন।

এরপর তার কিছু জটিলতা দেখা দেয়। রাতে অ্যাম্বুলেন্স ডেকে আনা হয়েছিল। কিন্তু একটা সময় অবস্থা ভালো হওয়ায় সেই অ্যাম্বুলেন্স ফেরত পাঠানো হয়। এরপর ভোরের দিকে হঠাৎ করেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন রাজিয়া। পরে আবার অ্যাম্বুলেন্স এনে তাকে সাতক্ষীরা হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।’ একসময় বয়সভিত্তিক দলে নিয়মিত ছিলেন রাজিয়া। বাফুফের ক্যাম্প থেকে বাদ পড়েছেন বছর চারেক আগে। এরপর ঘরোয়া লিগ খেলেছেন। বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন গোলাম রব্বানী ছোটন। তাই রাজিয়াকে খুব কাছ থেকেই চেনেন তিনি। রাজিয়ার মৃত্যুর খবরে স্মৃতিচারণ করে ছোটন বলেন, ‘২০১৭ সালে থাইল্যান্ডে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের মূল পর্বে রাজিয়া খেলেছিল। পরের বছর সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ ভুটানের চ্যাম্পিয়ন দলেও ছিল। সিনিয়র দলে ক্যাম্পও করেছে কিছু দিন। পারফরম্যান্স অবনতির জন্য ২০১৯ সালের দিকে ক্যাম্প থেকে বাদ পড়ে।’ রাজিয়ার আকস্মিক মৃত্যুতে খুবই ব্যথিত জাতীয় দলের নিয়মিত মুখ সানজিদা আক্তার। ইস্টবেঙ্গলের হয়ে খেলতে এখন আছেন ভারতে। সেখান থেকেই ব্যথিত কণ্ঠে বলেন, ‘আমাদের ক্যারিয়ার একই সময়েই শুরু মূলত।

ক্যাম্প থেকে বাদ পড়ার পর ও লিগ খেলেছে এবং পরবর্তীতে বিয়ে করেছে। বাচ্চা হওয়ার মুহূর্তে ও মারা গেছে শুনে খুবই খারাপ লাগছে। আমরা একজন বন্ধু হারালাম।’ বাংলাদেশের নারী ফুটবলের প্রেক্ষাপটে বাফুফের ক্যাম্প থেকে বাদ পড়ার পর আবার ফিরে আসা কঠিন। লিগ অনিয়মিত এবং এতদিন ফিটনেস ধরে রাখাও কষ্ট। ক্যাম্প থেকে বাদ পড়ার পরেও ফুটবলের সঙ্গে ছিল। এফসি ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কাচারিপাড়া দুই দলে গত দুই লিগ খেলেছিলেন রাজিয়া। এফসি ব্রাহ্মণবাড়িয়া দলের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন জুবায়ের বলেন, ‘এক মৌসুম আগের লিগে আমাদের দলে খেলেছে রাজিয়া। সাতক্ষীরায় তার বাড়ি। আমাদের সাবেক খেলোয়াড়ের প্রসবকালীন মৃত্যুতে আমরা খুবই ব্যথিত।’ ২০০১ সালের ২৫ জানুয়ারি জন্ম নেয়া রাজিয়া বাংলাদেশের নারী ফুটবলের উত্থানের শুরুর দিকের একজন। এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ রিজিওনাল (সেন্ট্রাল ও দক্ষিণ এশিয়া) চ্যাম্পিয়নশিপে ২০১৩ ও ১৫ সালে চ্যাম্পিয়ন দলে ছিলেন তিনি। এরপর অনূর্ধ্ব-১৬ ও অনূর্ধ্ব-১৯ দলেও খেলেছেন। রাজিয়ার মৃত্যুতে দেশের ফুটবলে নেমে এসেছে গভীর শোক। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) এক শোক বার্তায় তার পরিবারের প্রতি গভির সমবেদনা প্রকাশ করেছে।