ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা টেস্ট সিরিজ

‘টাইমড আউট’ সেলিব্রেশন থামবে না

‘টাইমড আউট’ সেলিব্রেশন থামবে না

দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে মুখোমুখি বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা। তারিখটি ছিল ৬ নভেম্বর ২০২৩। সাকিব আল হাসানদের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে যাওয়ার স্বপ্ন শেষ গেছে। তবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে দিল্লির ম্যাচটি ছিল ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ সেদিন জিতেছিল। তবে জয় ছাপিয়ে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে অদ্ভুত এক আউট। বাংলাদেশের সৌজন্যে ওয়ানডে ক্রিকেট প্রথমবার স্বাক্ষী হয় ‘টাইমড আউট’র। বিশ্বকাপ মঞ্চে ব্যাট করার আগেই একজন ব্যাটার আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে গেলেন, ক্রিকেট দুনিয়ার ঝড় ওঠা স্বাভাবিক। ফলে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ ‘টাইমড আউট’ হওয়ার পর দুইভাবে বিভক্ত হয়ে যায় ক্রিকেট বিশ্ব। একদল বলতে থাকে, নিয়মের মধ্যে থেকেই আউট হয়েছেন ম্যাথুজ। আরেক দল ক্রিকেটচেতনা সামনে এনে সমালোচনার তীরে বিদ্ধ করতে থাকেন সাকিব ও বাংলাদেশকে। বিশ্বকাপের ওই ঘটনা ক্রিকেটপ্রেমীদের জানা। সেদিন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যাটিং পজিশনে গিয়ে গার্ড নিতে না পারায় ‘টাইমড আউট’ হয়েছিলেন ম্যাথুজ। একজন ব্যাটার আউট হওয়ার পর অন্য ব্যাটার নেমে ক্রিজে দাঁড়ানোর মধ্যে একটা সময় বেঁধে দেওয়া আছে। ক্রিকেটের আইন প্রণয়নকারী সংস্থা মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) আইন অনুযায়ী, একজন ব্যাটার ৩ মিনিটের মধ্যে ক্রিজে তৈরি না থাকলে বিপক্ষ দল আপিল করতে পারবে। তবে বিশ্বকাপে এই সময়সীমা কমিয়ে ২ মিনিট করেছিল আইসিসি। ম্যাথুজ এই সময়ের মধ্যে ক্রিজে তৈরি হতে পারেননি। বাংলাদেশ দল বিষয়টা বুঝতে পেরে আম্পায়ারের কাছে আবেদন করে। তারই ভিত্তিতে ‘টাইমড আউট’ হন ম্যাথুজ। নিয়মের মধ্যে থেকেই আউট হয়েছিলেন শ্রীলঙ্কান ব্যাটার। তারপরও বিতর্কের আগুন জ্বলে ওঠে। ম্যাথুজ তার সময়ক্ষেপণ করার কারণ হিসেবে হেলমেটের স্ট্র্যাপ ভেঙে যাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন আম্পায়ারদের। বারবার হেলমেট দেখিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, তার দেরি হওয়ার কারণ। তবে কিছুতেই কাজ হয়নি। ক্রিজে পৌঁছানোর আগেই আউট হয়ে ফিরতে হয় তাকে। ওই ঘটনায় জলঘোলা হয়েছে অনেক। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ও অধিনায়ক সাকিবকে ধুয়ে দেন ম্যাথুজ। বাংলাদেশ দল থেকেও জানানো হয়, নিয়ম মেনেই আউট হয়েছেন ম্যাথুজ। আর আউট তারা নয়, দিয়েছেন আম্পায়ার। এই ঘটনা বিশ্বকাপেই শেষ হতে পারতো। কারণ, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার কেউই সেমিফাইনালে খেলতে পারেননি। কিন্তু হয়নি। বরং আগ্নেয়গিরির লাভার মতো ফুঁসে উঠেছে আবার।

বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার দ্বৈরথ এমনিতেই উত্তেজনার ডালিতে সাজানো। নিদাহাস ট্রফির ‘নাগিন ড্যান্স’ তো ক্রিকেট ইতিহাসেই ঢুকে গেছে। সেখানে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে ‘টাইমড আউট’। বিশ্বকাপের পর প্রথমবার দ্বিপাক্ষিক সিরিজ শুরুর আগেই গা ঝেরে নতুন করে সামনে আসে ওই আউটের ঘটনা। যদিও সিরিজ শুরুর আগে সংবাদ সম্মেলনে দুই পক্ষ থেকেই এসেছিল ‘প্রীতিময়’ বক্তব্য। ‘টাইমড আউট’ এখন অতীত, বর্তমানেই থাকবে দল- এমন বার্তা আসে দুই পক্ষ থেকে।

কিন্তু টি-টোয়েন্টি দিয়ে শুরু হওয়া সিরিজে দেখা গেল অন্য চিত্র। প্রথম ম্যাচেই ফিরে আসে ‘টাইমড আউট’। অভিস্কা ফার্নান্ডোকে আউট করে শরিফুল ইসলাম হাতঘড়ি দেখিয়ে করেন ‘টাইমড আউট’ সেলিব্রেশন। ব্যস ‘মৃতু’ আগ্নেয়গিরি জ্বলে ওঠে দৈত্য আকার নিয়ে। শরিফুলের শুরু করা উদযাপন কীভাবে ফিরিয়ে দেবে, সেই সময় খুঁজতে থাকে শ্রীলঙ্কা। মোক্ষম সময় পেয়েও যায় তারা। সিলেটের টি-টোয়েন্টি সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতে নেওয়ার পর ট্রফি নিয়ে ‘টাইমড আউট’ উদযাপনে মাতে লঙ্কানরা। সফরকারীদের এই উদযাপন দেখে বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত কিছুটা বিরক্ত হয়েছিলেন। ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার মনে হয় ওরা যেটা করছে, টাইমড আউট নিয়েই তো দেখিয়েছে, ওটা থেকে বেরোতে পারেনি। আমার মনে হয়, বের হওয়া উচিত, বর্তমানে থাকা উচিত।’

শান্ত কিংবা বাংলাদেশ কী বর্তমানে থাকতে পারলেন? ওই লঙ্কানদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জেতার পর একই কাজই তো করলেন তারা! ২-১ ব্যবধানে ৫০ ওভারের সিরিজ জয়ের পর ট্রফি নিয়ে অন্যরকম এক উদযাপন করলো বাংলাদেশ। যেখানে মুশফিক নিলেন বিশ্বকাপের ম্যাথুজের চরিত্র। দিল্লির ওই ম্যাচে ম্যাথুজ যেভাবে সময়ক্ষেপণের কারণ হিসেবে তার হেলমেটের স্ট্র্যাপ ভেঙে যাওয়ায় কথা বলেছিলেন। আম্পায়ারদের কাছে গিয়ে বারবার হেলমেটের ভাঙা অংশ দেখিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন, সেই দৃশ্যই সিরিজ জয়ের পর অভিনয় করে দেখালেন মুশফিক। যদিও সংবাদ সম্মেলনে মুশফিকের উদযাপন প্রসঙ্গে শান্ত বলেছেন, ‘আমার জাস্ট উদযাপন করেছি। মনের মতো করে উদযাপন করেছি। মনে যেটা এসেছে সেভাবে সেলিব্রেট করেছি।’

নতুন বিতর্ক উসকে দিতে চাননি বলেই হয়তো ‘টাইমড আউট’ উদযাপন এড়িয়ে গেলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। তবে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ কিংবা বিশ্বকাপের ওই ‘টাইমট আউট’ যারা দেখেছেন, তাদের বোঝার বাকি নেই ওই ঘটনাই অভিনয়ের মাধ্যমে ফিরিয়ে এনেছেন মুশফিক।

সুতরাং, ‘টাইমড আউট’ সেলিব্রেশন থামছে না। বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার দ্বৈরথে আবারও ফিরবে এই দৃশ্য। সামনেই দুই দলের টেস্ট সিরিজ। সেখানেও হয়তো নতুন ভঙ্গিতে দেখা মিলবে। তাই বলাই যায়, ‘টাইমড আউট’ সেলিব্রেশন চলছে, চলবে!

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত