ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মুমিনুল হকের ১৩ রানের আক্ষেপ

লঙ্কান এক্সপ্রেসে বিধ্বস্ত বাংলাদেশ

লঙ্কান এক্সপ্রেসে বিধ্বস্ত বাংলাদেশ

সিলেট টেস্টে বাংলাদেশের ব্যাটার আর শ্রীলঙ্কার পেসারদের মধ্যে যে লড়াই হলো তা একেবারেই একপেশে। এই লড়াইয়ে একমাত্র মুমিনুল হক ছাড়া আর কেউ ধর্য্যরে পরীক্ষায় পাশ করতে পারেননি। অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম আর বিশ্বখ্যাত অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের অভাব বোধ হওয়া তো স্বাভাবিকই। লাল সবুজ দলের এই দুই তারকাকে ছাড়া তারুণ্য-নির্ভর দলটি রীতিমতো বিধ্বস্ত হয়েছে লঙ্কান এক্সপ্রেসের কাছে। জয়ের মঞ্চটা তৃতীয় দিনেই সাজিয়ে রেখেছিলেন শ্রীলঙ্কান পেসাররা। ফলে চতুর্থ দিনে খেলা শেষ হওয়া নিয়ে অতি আশাবাদিরা সংশয়ে ছিলেন না। কারণ শ্রীলঙ্কার জন্য সমীকরণটা ছিল অতি সহজ, বাংলাদেশের জন্য ছিল আকাশ ছোঁয়ার মতো। দেখার ছিল বাকি ৫ উইকেট নিয়ে আর কতটা পথ এগোতে পারে টাইগার ব্যাটাররা। মুমিনুল হকের সৌজন্যে এক সেশনের কিছু বেশি লড়াই হলো। বলা যায়, লঙ্কানদের কেবল অপেক্ষায় রাখলেন মুমিনুল। ‘প্রিয়’ প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আগের ১১ টেস্টে ৪ সেঞ্চুরি মুমিনুলের। সংখ্যাটি এদিন পাঁচে নিয়ে যাওয়ার সুযোগও এসেছিল। বোলাররা, ব্যাটারের ভূমিকায় নেমে তাকে সমর্থনও করলেন। কিন্তু ৩২৮ রানের বিশাল পরাজয়ের দিন আক্ষেপ থেকে গেল মুমিনুলের জন্য। ১৩ রানের জন্য ১৩তম সেঞ্চুরি মিস তার। প্রথম ইনিংসে ১৮৮ রানে গুটিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ ১৮২ রানে থেমে গেল দ্বিতীয় দফায়। তখন ঘড়ির কাঁটায় দুপুর ১টা ৫৮ মিনিট। সব মিলিয়ে দিনে খেলা হলো ১৮৬ মিনিট। তাতেই শ্রীলঙ্কা ৫ উইকেট নিয়ে নিশ্চিত করে সিলেট টেস্ট। আর বাংলাদেশের আরেকটি টেস্ট হারের ‘লজ্জা।’ এই ‘লজ্জা’ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বহুবারই পেয়েছে বাংলাদেশ।

২০০৯ সালে চট্টগ্রামে ৪৬৫ রানে হার যা এখনো নিজেদের সর্বোচ্চ রানে পরাজয়। ২০০২ সালে কলম্বোতে ২৮৮ রানে হার, ২০১৭ সালে গলে ২৫৯ রানে পরাজয়। বারবার শ্রীলঙ্কার ‘ভূত’ যেন বাংলাদেশের-ই ঘাড়ে পড়ে! ক্রিকেটীয় বাস্তবতায় নিশ্চিত হার জেনে দিন শুরু বাংলাদেশের। ফকফকা আকাশ টেস্ট ক্রিকেটকে আমন্ত্রণ জানায় দুহাত ভরে। এ রকম অবস্থায় খেলা যতটুকু লম্বা করা যায়, হারের ব্যবধান যতটা কমানো যায় সেই চিন্তাই থাকে। সঙ্গে কিছুটা ব্যক্তিগত অর্জন। এমন ম্যাড়ম্যাড়ে পরিস্থিতিতে প্রথম উইকেটের জন্য শ্রীলঙ্কাকে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। প্রথম ইনিংসে দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১৪৭ মিনিট ক্রিজে থেকে ৪৭ রান করা তাইজুল দিনের তৃতীয় ওভারে ফেরেন সাজঘরে। পেসার রাজিথার ভেতরে ঢোকানো বলে এলবিডব্লিউ হন। রিভিউ নিয়ে বাঁচতে চেয়েও টিকে থাকতে পারেননি। সেখান থেকে মিরাজকে সঙ্গে নিয়ে মুমিনুলের নতুন লড়াই শুরু হয়। কিছুটা সময়ের জন্য দুজনের ব্যাট উইকেট আগলে রাখে। বল পুরোনো হতে থাকায় শ্রীলঙ্কার বোলারদের তেজও কমতে থাকে। সুযোগ কাজে লাগিয়ে দৃষ্টিনন্দন কয়েকটি শটে রানও তুলে নেন দুই ব্যাটসম্যান। জমাট ৮৩ মিনিট ও ৬৬ রানের যুগলবন্দিতে প্রথম ঘণ্টায় আর কোনো উইকেট না হারিয়ে কাটিয়ে দেন তারা। মনে হচ্ছিল প্রথম সেশনটাও কাটিয়ে দেবেন তারা। কিন্তু রাজিথা বোলিংয়ে ফিরে শ্রীলঙ্কাকে সপ্তম উইকেটের স্বাদ দেন। ভাঙেন মিরাজ মুমিনুল জুটি। জায়গায় দাঁড়িয়ে রাজিথার লেন্থ বল ড্রাইভ করতে গিয়ে দ্বিতীয় স্লিপে ধনঞ্জয়া ডি সিলভার হাতে ক্যাচ দেন মিরাজ।

৫০ বলে ৬ বাউন্ডারিতে সাজানো ৩৩ রানের ইনিংসটি থেমে যায় সেখানে। সকালের সেশনে বলার মতো আর কিছু হয়নি। ২৫ ওভারে ৮২ রান যোগ করে ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ম্যাচটা দ্বিতীয় সেশনে নিয়ে যাওয়াও যেন এই টেস্ট বিবেচনায় অন্যরকম এক অর্জন। পরাজয় নিশ্চিতের পরও টেস্ট ক্রিকেটের আসল খেলাটাই খেলল! মধ্যাহ্ন বিরতির পর প্রথম পাঁচ ওভারে শরিফুল ও মুমিনুলের জুটি জমে যায়। এ সময়ে মুমিনুল তুলে নেন তার ১৭তম ফিফটি। শরিফুল তাকে সঙ্গ দিচ্ছিলেন ভালোভাবেই। কিন্তু ষষ্ঠ ওভারে জীবন দিয়েও বেঁচে যাওয়া শরিফুল অষ্টম ওভারে ফিরতি ক্যাচ দেন রাজি থাকে। সেখানে থেমে যায় বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানের ৪২ বলে ১২ রানের লড়াই। রাজিথা পরের উইকেট নিতে সময় নেননি। খালেদকে গোল্ডেন ডাকের তিক্ত স্বাদ দেন। এই স্বাদ অবশ্য তার জন্য নতুন নয়। ক্যারিয়ারের ১২তম ডাককে সঙ্গী করেছেন প্রথম ইনিংসে ২২ রান করা এই ব্যাটসম্যান। তাকে ফিরিয়ে ক্যারিয়ারের তৃতীয় এবং বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় ফাইফারের স্বাদ পান ডানহাতি পেসার। একা হয়ে পড়া মুমিনুল শতরান করতে পারেন কি না সেটাই ছিল দেখার বিষয়। একপ্রান্ত থেকে চেষ্টা করে গেছেন তিনি। কিন্তু বেশি সময় টিকতে পারেননি শেষ ব্যাটসম্যান নাহিদ রানা। সেঞ্চুরি থেকে ১৩ রান দূরে থমকে যেতে হয় মুমিনুলকে। কারণ, অভিষিক্ত নাহিদ রানার পেশাদার ক্রিকেটে ব্যাট করার অভিজ্ঞতাও নেই। তবুও রাজিথার ওভার কোনোমতে রুখে দিয়েছিলেন। কিন্তু লাহিরু কুমারার বাউন্সারে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দেন রানা। বাংলাদেশ অলআউট হয়েছে ১৮২ রানে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টেস্ট হেরেছে ৩২৮ রানের বিশাল ব্যবধানে। টেস্টে রানের হিসেবে এর চেয়েও বড় পরাজয় অবশ্য পাঁচটি আছে বাংলাদেশের। সবচেয়ে বড় ৪৬৫ রানের হার লঙ্কানদের বিপক্ষেই, ২০০৯ সালে চট্টগ্রামে। শ্রীলঙ্কার তিন পেসার মিলেই নিয়েছেন ম্যাচে বাংলাদেশের ২০ উইকেট। ৮ উইকেট শিকার করেন রাজিথা, ভিশ্ব ফার্নান্দোর উইকেট ৭টি, লাহিরু কুমারার পাঁচটি। আগামী ৩০ মার্চ চট্টগ্রামে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে মুখোমুখি হবে দুই দল। শেষ টেস্ট জিতে ড্র করতে চাইবে টাইগাররা, এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত