ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শেষ মুহূর্তের গোলে সর্বনাশ

ফিলিস্তিনের সঙ্গে লড়াই করে হারল বাংলাদেশ

ফিলিস্তিনের সঙ্গে লড়াই করে হারল বাংলাদেশ

গেল সপ্তাহে কুয়েতে বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের যৌথ বাছাইয়ের ম্যাচে ফিলিস্তিনের সঙ্গে ৫-০ গোলে হেরেছে বাংলাদেশ। তা নিয়ে কোনো আক্ষেপ ছিল না লাল সবুজ দলের কোচ হাভিয়ের কাবরেরার। কারণ, ফিফা র‍্যাংকিংয়ে জামাল ভূঁইয়াদের চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে ফিলিস্তিন। তবে ঘরের মাঠে ৮৬ ধাপ এগিয়ে থাকা দেশটির বিপক্ষে পয়েন্ট আদায়ের পরিকল্পনা এটেছিল স্বাগতিকরা। সে অনুযায়ী সফলতার দিকে এগোচ্ছিল বাংলাদেশ। ৯৪ মিনিট পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিকে আটকে রেখেছিল লাল-সবুজ দলের ফুটবলাররা। তবে শেষ রক্ষা হলো না। একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে গোল হজম করে হৃদয় ভাঙল বাংলাদেশের। অতিরিক্ত সময়ের গোলে হারতেই হলো কাবরেরার শিষ্যদের। ‘মহান স্বাধীনতা দিবসে অন্তত একটি পয়েন্টের প্রত্যাশা ছিল জামাল-রাকিবদের কাছে। ‘ঘরের মাঠে বাংলাদেশ আরও বেশি শক্তিশালী’ বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার এমন আশ্বাসই বোধহয় বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনাতে দর্শকের ঢল। এমনিতেও বাংলাদেশের যে কোনো ম্যাচেই দর্শকদের থাকে সীমাহীন আগ্রহ। গতকাল মঙ্গলবারও জামালদের উৎসাহ দিতে কার্পণ্য করেননি বাংলাদেশের ফুটবল দর্শকরা। ম্যাচজুড়ে শক্তিধর ফিলিস্তিনের বিপক্ষে দারুণ ফুটবলও খেলেছে বাংলাদেশ। তবে সেই পুরানো বদভ্যাসে ৩ পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারেনি তারা। গতকাল মঙ্গলবার বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় ফিরতি ম্যাচে ফিলিস্তিনের বিপক্ষে ১-০ গোলে হেরেছে বাংলাদেশ। ফিলিস্তিনের হয়ে জয়সূচক গোলটি করেন মিচেল তারমানানি। পুরো ম্যাচেই এদিন দুর্দান্ত সব সেভ করে বাংলাদেশকে ম্যাচে রাখেন গোলরক্ষক মিতুল মার্মা। ঝাঁপিয়ে পড়ে দুর্দান্ত সব সেভ করেছেন, সেভ করেছেন ওয়ান টু ওয়ানও; রুখে দিয়েছেন দূরপাল্লার জোরালো শটও। যদিও একটি ভুল করেছিলেন, তবে ভাগ্য সঙ্গে থাকায় বেঁচে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু এই গোলরক্ষক চোটে পড়ে ছিটকে যাওয়ার পর গোল হজম করতে হয় বাংলাদেশকে। কিংস অ্যারেনায় এদিনই প্রথম হারের স্বাদ পেল বাংলাদেশ।

এর আগের চারটি ম্যাচেই অপরাজিত ছিল দলটি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুটি ড্র, মালদ্বীপের বিপক্ষে জয় ও সবশেষ লেবাননের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করেছিল বাংলাদেশ। এদিনও ড্রই মনে হচ্ছিল ম্যাচে ভাগ্য। কিন্তু শেষ দিকে বদলে যায় সব। এই জয়ে এশিয়ান কাপের পাশাপাশি বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের পরের রাউন্ডটাও প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছে ফিলিস্তিন। লেবাননের বিপক্ষে ড্র করলেই তৃতীয় রাউন্ড নিশ্চিত হবে দলটির। চার ম্যাচে ৭ পয়েন্ট তাদের। অন্যদিকে তলানিতে থাকা বাংলাদেশের সংগ্রহ চার ম্যাচে ১ পয়েন্ট। এদিন একাদশে দুটি পরিবর্তন আনেন বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। আগের ম্যাচে সেন্টার ব্যাক তপু বর্মণের সঙ্গে প্রথাগত সেন্টারব্যাক না থাকলেও এদিন শাকিল হোসেনকে রাখেন তিনি। বিশ্বনাথ ঘোষ খেলেন তার স্বাভাবিক রাইট ব্যাক পজিশনে।

এছাড়া সোহেল রানা জুনিয়রের জায়গায় নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরেন সোহেল রানা সিনিয়র। এদিন গোল করার মতো প্রথম সুযোগ দ্বাদশ মিনিটে তৈরি করে ফিলিস্তিন। মোহাম্মেদ রাশিদের ফ্রিকিক ঠেকান মিতুল। ২৪তম মিনিটে প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে নেয়া জামালের ফ্রিকিক পোস্টঘেঁষে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ৩৫তম মিনিটে ওদেই দাবাঘের শট আটকে দেওয়ার চার মিনিট পর মুসাব বাত্তার ফ্রি কিকে শেহাব কুম্বরের হেড দারুণ দক্ষতায় ঠেকান মিতুল। পরের মিনিটে তপুর ভুল পাসে বিপদ হতে পারত। ৪৪তম মিনিটের নিজেদের সেরা সুযোগটি পায় বাংলাদেশ। রাকিব হোসেনের হেড থেকে বল পেয়ে দুই ডিফেন্ডারের ফাঁক দিয়ে দারুণ এক থ্রু পাস দেন অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া। বল ধরে টোকা দেন ফয়সাল আহমেদ ফাহিম, কিন্তু পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে আসা গোলরক্ষকের গায়ে লাগলে নষ্ট হয় সেই সুবর্ণ সুযোগ। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই বিপদ ডেকে এনেছিল বাংলাদেশ। সতীর্থকে পাস দিতে গিয়ে দাবাঘের পায়ে বল তুলে দিয়েছিলেন মিতুল। বল ধরে গোলরক্ষককে এড়িয়ে আরেক খেলোয়াড়কে এড়িয়ে যে শট নেন এই ফরোয়ার্ড তা অল্পের জন্য বারপোস্ট ঘেঁষে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। বড় বাঁচা বেঁচে যায় স্বাগতিকরা। ৫৭তম মিনিটে দাবাঘের হেড দারুণ দক্ষতায় এক হাত দিয়ে ফিস্ট করে আবারও বাংলাদেশকে রক্ষা করেন মিতুল। ১০ মিনিট পর বদলি খেলোয়াড় আলাদিন হাসানের শট ঠেকান এই গোলরক্ষক। ৭৪তম মিনিটে কর্নার থেকে সৃষ্ট জটলায় ওদেই খারৌবের শট ঠেকান মিতুল। ৮৩তম মিনিটে বড় ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। চোটে পড়ে মাঠ ছাড়েন মিতুল। মাঠ থেকেই সরাসরি হাসপাতালে নেয়া হয় তাকে। তার জায়গায় মাঠে নামেন মেহেদী হাসান শ্রাবণ। নেমেই একবার ফ্লাইট মিস করে বিপদ ডেকে এনেছিলেন প্রায়। তবে ডিফেন্ডারদের দৃঢ়তায় বেঁচে যায় বাংলাদেশ। তবে ম্যাচের যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে ইসা ফয়সালের বাড়ানো বল থেকে বক্সে গোলরক্ষককে পেয়েও পরাস্ত করতে পারেননি রাকিব। বল হারিয়ে লুটিয়ে পড়েন। তখন তাকে টেনে মাঠের বাইরে নিয়ে যান ফিলিস্তিনের আহমেদ মাহাজনেহ। যে কারণে হলুদ কার্ড দেখেন তিনি। পরে রেফারির সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে দেখেন লাল কার্ড। ফলে দশ জনের দলে পরিণত হয় ফিলিস্তিন। তবে পরের মিনিটেই মেহদী হাসান শ্রাবণ বলের ফ্লাইট মিস করেন। ফিলিস্তিনও টের পেয়ে যায় বাংলাদেশের রক্ষণের এই দুর্বলতা। সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়েই গোলরক্ষক শ্রাবণকে পরাস্তও করে তারা। ৯০+৪ মিনিটে মিকাইল তেরমানীনি পেছন থেকে এসে দারুণ শটে বল জড়িয়ে দেন বাংলাদেশের জালে (১-০)। শেষের দিকে এসে গোল হজম যেনো বাংলাদেশ ফুটবল দলের অতীত ইতিহাসকেই মনে করিয়ে দেয় আরো একবার। এই গোলেই জয় নিশ্চিত হয় ফিলিস্তিনের। তাতে হৃদয় ভাঙে বাংলাদেশের।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত