ইতিহাসে নাম লেখালেন সৈকত

প্রথমবার আইসিসির এলিট প্যানেলে বাংলাদেশি আম্পায়ার

প্রকাশ : ২৯ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া ডেস্ক

দেশি আম্পায়ারদের মধ্যে সবার আগে যার নামটি আসে তিনি হলেন শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকত। প্রায় চৌদ্দ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ম্যাচ পরিচালনা করে আসছেন তিনি। বাংলাদেশের প্রথম আম্পায়ার হিসেবে গত বছর ভারতে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে বিশ্বকাপে সুযোগ পেয়েছিলেন সৈকত। সেখানে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড ম্যাচসহ মোট পাঁচটি ম্যাচে ফিল্ড আম্পায়ারের দায়িত্বে ছিলেন। ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ডের উদ্বোধনী ম্যাচসহ তিনটি ম্যাচে চতুর্থ আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করেছেন। এবার ইতিহাসে নাম লেখালেন এই আম্পায়ার। বাংলাদেশের প্রথম আম্পায়ার হিসেবে শরফুদ্দৌলা প্রবেশ করলেন আইসিসির এলিট প্যানেলে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) বার্ষিক পর্যালোচনা এবং বাছাই প্রক্রিয়া শেষে শরফুদ্দৌলাকে এলিট প্যানেলে যুক্ত করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এই ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। আইসিসি মহাব্যবস্থাপক ওয়াসিম খান, সাবেক ক্রিকেটার এবং ধারাভাষ্যকার সঞ্জয় মাঞ্জরেকার, নিউজিল্যান্ডের অবসরপ্রাপ্ত আম্পায়ার টনি হিল এবং পরামর্শক কার্যনির্বাহী বিশেষজ্ঞ মাইক রিলির সমন্বয়ে গঠিত একটি নির্বাচন প্যানেলে সৈকতকে এমিরেটস আইসিসি ইন্টারন্যাশনাল প্যানেল অফ আম্পায়ার থেকে এলিট প্যানেলে উন্নীত করা হয়। আইসিসির প্রধান নির্বাহী জেফ অ্যালারডাইস বিবৃতিতে শুভেচ্ছা জানান শরফুদ্দৌলাকে। ‘আইসিসি এলিট প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় শরফুদ্দৌলাকে অভিননন্দন জানাই এবং বাংলাদেশের প্রথম আম্পায়ার হিসেবে এই প্যানেলে জায়গা পাওয়ার অর্জনকে অভিবাদন জানাই। আন্তর্জাতিক ম্যাচে ও আইসিসি টুর্নামেন্টগুলোয় বহু বছরের ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের কারণে এই স্বীকৃতি তার দারুণভাবেই প্রাপ্য।’ সৈকত ২০০৬ সাল থেকে আন্তর্জাতিক প্যানেলে ঢুকলেও তার প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ ছিল ২০১০ সালের জানুয়ারিতে। মিরপুরে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার একটি ওডিআই দিয়ে তার আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়। এখন পর্যন্ত পুরুষদের ১০টি টেস্ট ম্যাচ, ৬৩টি ওডিআই এবং ৪৪টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে মাঠের আম্পায়ার হিসেবে কাজ করেছেন। একই সঙ্গে মেয়েদের ১৩টি ওডিআই এবং ২৮টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশের অনেক কিছুর প্রথমের সাক্ষী শরফুদ্দৌল্লা। পুরুষ ও নারীদের বিশ্বকাপের ম্যাচে প্রথম তিনিই বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। পরপর নারীদের দুটি বিশ্বকাপ ২০১৭ এবং ২০২১ সালে ম্যাচ পরিচালনা করেন। ২০২৩ ছেলেদের ওয়ানডে বিশ্বকাপেও ছিলেন তিনি। এরও আগে ২০১৮ সালে নারীদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ছিলেন তিনি। ছেলেদের ওয়ানডে বিশ্বকাপে তার আম্পায়ারিং বেশ প্রশংসিত হয়েছিল। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ক্যারিয়ারের বড় অর্জন তার নামের পাশে যুক্ত হয়। দেশের মাটিতে ৯টি টেস্ট পরিচালনার পর দেশের বাইরে নিরপেক্ষ আম্পায়ার হিসেবে টেস্ট ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্ব পান। অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজে আম্পায়ার ছিলেন তিনি। ৪৭ বছর বয়সী আম্পায়ার ব্রিসবেন টেস্টে ছিলেন অনফিল্ড দায়িত্বে। এর আগে অ্যাডিলেডে ছিলেন টিভি আম্পায়ার হিসেবে। সঙ্গে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এলিট প্যানেলে যোগ দিতে পেরে দারুণ উচ্ছ্বসিত এই বাংলাদেশি আম্পায়ার, ‘আইসিসি এলিট প্যানেলে নাম লেখানো খুবই সম্মানের। প্যানেলে আমার দেশ থেকে প্রথম যোগ দেওয়া বিষয়টিকে আরও বিশেষ করে তুলেছে এবং আমি আমার প্রতি প্রদর্শিত বিশ্বাসকে সঠিক প্রমাণ করতে উন্মুখ। আমি অনেক বছর ধরেই মোটামুটি অভিজ্ঞতা পেয়েছি এবং আরও চ্যালেঞ্জিং অ্যাসাইনমেন্টের জন্য প্রস্তুত।’

এমিরেটস আইসিসি এলিট প্যানেল অব আম্পায়ার: কুমার ধর্মসেনা (শ্রীলঙ্কা), ক্রিস্টোফার গ্যাফানি (নিউজিল্যান্ড), মাইকেল গফ (ইংল্যান্ড), অ্যাড্রিয়ান হোল্ডস্টক (দক্ষিণ আফ্রিকা), রিচার্ড ইলিংওয়ার্থ (ইংল্যান্ড), রিচার্ড কেটলবরো (ইংল্যান্ড), নিতিন মেনন (ভারত), আহসান রাজা (পাকিস্তান), পল রাইফেল (অস্ট্রেলিয়া), শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ (বাংলাদেশ), রডনি টাকার (অস্ট্রেলিয়া) এবং জোয়েল উইলসন (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)।

এমিরেটস আইসিসি এলিট প্যানেল অব ম্যাচ রেফারি: ডেভিড বুন (অস্ট্রেলিয়া), জেফ ক্রো (নিউজিল্যান্ড), রঞ্জন মাদুগালে (শ্রীলঙ্কা), অ্যান্ড্রু পাইক্রফট (জিম্বাবুয়ে), রিচি রিচার্ডসন (ওয়েস্ট ইন্ডিজ) এবং জাভাগাল শ্রীনাথ (ভারত)।