ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সিরিজে সমতা ফেরাতে আজ মাঠে নামছে বাংলাদেশ

সিরিজে সমতা ফেরাতে আজ মাঠে নামছে বাংলাদেশ

সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের মতো পরীক্ষিত সৈনিককে ছাড়াই সিলেটে শ্রীলঙ্কার মোকাবিলায় ব্যর্থ টাইগাররা। ঘরের মাঠে অনভিজ্ঞ এক দল নিয়ে মাঠে নেমে ভরাডুবি হয়েছে স্বাগতিকদের। তাই চট্টগ্রামে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ফেরানো হয়েছে বিশ্বখ্যাত অলরাউন্ডারকে। এতে উজ্জীবিত বাংলাদেশ শিবির। সিরিজে সমতা ফেরাতে আজ দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে লঙ্কানদের মুখোমখি হচ্ছে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথম দিনের খেলা শুরু হবে সকাল ১০টায়। প্রথম ম্যাচে বাজে হারের পর টেস্টে বাংলাদেশের পারফরমেন্স নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে সাকিবের অন্তর্ভুক্তিতে টাইগাররা ঘুড়ে দাঁড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রথম টেস্টের দুই ইনিংসে ২শর নীচে অলআউট হয়ে ৩২৮ রানের বড় ব্যবধানে পরাজিত হয়েছে বাংলাদেশ। দলের বেশিরভাগ ব্যাটারই বাজে শট খেলে প্রতিপক্ষকে উইকেট উপহার দিয়েছেন। দলের এমন পারফরমেন্সে মূলত টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি তাদের আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দ্বিতীয় ইনিংসে দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ খেলোয়াড় মোমিনুল হকের লড়াকু ৮৭ রানে অনবদ্য ইনিংস বাংলাদেশকে আরও বড় হারের লজ্জা থেকে রক্ষা করে। চোখের সমস্যা থেকে সেরে উঠে পুরোপুরি ফিট হওয়ায় মাঠে নামতে প্রস্তুত সাকিব। আগামীকাল যদি খেলতে নামেন তাহলে এক বছর পর প্রথমবারের সাদা পোশাকে দেখা যাবে তাকে। গত বছর ভারতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের পর থেকে জাতীয় দলের জার্সি কোনো ম্যাচই খেলেননি সাকিব। দীর্ঘদিন মাঠে বাইরে থাকার পর ফেরাটা তার জন্য অবশ্য কিছুটা চ্যালেঞ্জিংও হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর মতে, সাকিবের মতো চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটার। সব চ্যালেঞ্জকে অতিক্রম করে কিভাবে পারফর্ম করতে হয় সেটি বেশ ভালোই জানেন। আয়ারল্যান্ড ও ভারতের বিপক্ষে নিজের সর্বশেষ টেস্ট সিরিজের শেষ চার ইনিংসে দু’টি ৮০’র বেশি রানের ইনিংস খেলেছেন সাকিব। তারপরও বড় চিন্তার বিষয় হলো, ২০১৭ সালের পর থেকে টেস্ট ফরম্যাটে কোন সেঞ্চুরি পাননি তিনি। ২০১৭ সালের মার্চে কলম্বোতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে সেঞ্চুরি করেছিলেন সাকিব। নিজেদের ঐ শততম টেস্টটি জিতে স্মরণীয় রেখেছে বাংলাদেশ। আর সেটিই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মুখোমুখি হওয়া এখন পর্যন্ত ২৫ টেস্টের মধ্যে বাংলাদেশের একমাত্র জয়। প্রতিপক্ষের শক্তিশালী আক্রমণে ক্ষতবিক্ষত হলে দুমড়েমুচড়ে পড়া স্বাভাবিক। লড়াইয়ের তেজ খুব কম থাকে। কিন্তু চট্টগ্রামে বাংলাদেশ শিবির রয়েছে ফুরফরে মেজাজে। ব্যর্থতার বাতাবরণ ফুঁড়ে চট্টগ্রামে জয়ের আলোকরশ্মির অপেক্ষায় বাংলাদেশ। ড্রেসিংরুমে নেই পুরোনো ব্যর্থতার ছাপ। সামনে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা দেওয়া হয়েছে। আর শক্তভাবে ঘুরে দাঁড়াতে কি করার প্রয়োজন সেই কাজগুলোই করা হচ্ছে। এই ম্যাচে বাংলাদেশের দায়িত্বে আছেন নিক পোথাস। ড্রেসিংরুমের পরিবেশ নিয়ে জানতে চাইলে পোথাস আশার আলো দেখালেন, ‘ছেলেরা এই টেস্টে ভালো করতে ক্ষুধার্ত। তারা সবসময়ই ভালো করতে চায়। তারা দল হিসেবে অসাধারণ। ভালো করার ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় তারা বিশ্বাসী। তাদের হাসি দেখলে হয়তো বুঝতে পারবেন। আমাদের ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব এই মনোভাবটাকে দলের ভেতরে টিকিয়ে রাখা যতক্ষণ না পর্যন্ত আমরা সমান্তরালে আসি। তারপর আমাদের এগিয়ে যাওয়া নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের দলে আবেগের কোনো জায়গা নেই। ড্রেসিংরুমের পরিবেশ বেশ ভালো।’ নিজেদের প্রস্তুতি নিয়ে পোথাস বেশ সন্তুষ্ট, ‘আমরা আরেকটি টেস্ট ম্যাচের জন্য যেভাবে প্রস্তুতি নেই এবারও সেই কাজটা করছি। আমরা পেছনে কি হয়েছে ভাবছি না। সামনে তাকিয়ে আছি। আমরা ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়েছি এবং সামনে কি হবে সেগুলো নিয়ে ভাবছি। সেগুলোই আগামী টেস্ট ম্যাচে প্রয়োগ করবো।’ এদিকে ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এখনও জয়ের দেখা পায়নি বাংলাদেশ। ২০২২ সালে ভারতের কাছে ২-০ ব্যবধানে হারের পর অবশ্য ২০২৩ সালে কোনো টেস্ট সিরিজ হারেনি বাংলাদেশ। কিন্তু আগের টেস্টের বাজে পারফরমেন্স দলের জয়ের ধারাকে এখন হুমকির মুখে ফেলেছে। তবে দলে সাকিবের অন্তর্ভুক্তি দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া বাংলাদেশকে বাড়তি আত্মবিশ্বাস যোগাবে। সাকিবের ফেরায় স্বাভাবিকভাবেই একাদশে পরিবর্তন আনতে হবে বাংলাদেশকে। প্রথম টেস্টে বাজে শট খেলে আউট হবার কারণে একাদশে জায়গা ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে লিটনের। যদি লিটনকে বাদ দেয়া হয় তাহলে উইকেটরক্ষকের ভূমিকায় জাকির হাসান এবং ওপেনার হিসেবে সাদমান ইসলামকে দলে নেয়া হতে পারে। সাধারনত ইনিংস শুরু করলেও, তখন জাকির পাঁচ বা ছয় নম্বরে খেলতে পারেন। শেষমেশ পোথাস যে বার্তা দিলেন তাতে দাঁড়ায় এই ম্যাচটা জিতে বাংলাদেশ সিরিজে সমতা আনতে চায়। এজন্য সামর্থ্যরে সবকুটু উজাড় করেই খেলবেন শান্ত, জাকির, সাকিবরা, ‘সামনে ম্যাচটা আমরা জিততে চাই। আসলে প্রত্যেকেই মাঠে নেমে জিততে চায়। উইকেট যেমনই হোক আমাদের খেলতে হবে। মানিয়ে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এটাই সহজ কাজ।’ বাংলাদেশকে চোখ রাঙাতে পারে চট্টগ্রামের শেষ পাঁচ টেস্টের পারফরম্যান্স। যেখানে বাংলাদেশ চারটিতেই হেরেছে। ড্র করেছে একটি। একমাত্র ড্রটি এসেছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। এছাড়া ভারত, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে হেরেছে। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ভয়ে থাকার যথেষ্ট কারণও আছে। চোটের কারণে দ্বিতীয় টেস্ট থেকে ছিটকে যাওয়ায় পেসার কাসুন রাজিথাকে মিস করবে শ্রীলঙ্কা। তার জায়গায় দলে সুযোগ পেয়েছেন আরেক পেসার অসিথা ফার্নান্দো। তাই বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের মিশনে একাদশে পরিবর্তন আনতে হবে শ্রীলঙ্কাকেও।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত