দ্বিতীয় ইনিংসে জ্বলে উঠলেন হাসান-খালেদ

ধারহীন ব্যাটিংয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে বাংলাদেশ

প্রকাশ : ০২ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

ক্রিকেটের অভিজাত ফরম্যাট হিসেবে বিবেচনা করা হয় টেস্টকে। প্রায় দুই যুগ আগে টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়েছে বাংলাদেশ। এখনও সাদা পোশাকের ক্রিকেট ভালোমতো রপ্ত করতে পারেনি টাইগাররা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিলেটে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম টেস্টে রীতিমতো ভরাডুবি হয়েছে লাল সবুজের প্রতিনিধিদের।

দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে সেই ধারা অব্যাহত রেখেছে টাইগাররা। চট্টগ্রামে প্রথম ইনিংসে ৫৩১ রান সংগ্রহ করেছিল শ্রীলঙ্কা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে টাইগাররা। ফলে স্বাগতিকরা প্রথম ইনিংসে থেমেছে ১৭৮ রানে। ৩৫৩ রানে এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও আবার ব্যাটিংয়ে নামে লঙ্কানরা। তবে এ যাত্রায় জ্বলে ওঠেন টাইগার পেসাররা। অভিষেক টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট শিকার হাসান মাহমুদের। তাতে তৃতীয় দিন শেষে ৬ উইকেট হারিয়ে ১০২ রান সংগ্রহ পায় শ্রীলঙ্কা। এতে ৪ উইকেট হাতে নিয়ে ৪৫৫ রানে এগিয়ে শ্রীলঙ্কা। গতকাল সোমবার চট্টগ্রামে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের তৃতীয় দিনের খেলা শেষে ৪৫৫ রানে এগিয়ে আছে শ্রীলঙ্কা।

দ্বিতীয় ইনিংসে তাদের সংগ্রহ ২৫ ওভারে ৬ উইকেটে ১০২ রান। ক্রিজে আছেন জীবন পাওয়া অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ৫০ বলে ৩৯ রানে। তার সঙ্গে প্রবাথ জয়সুরিয়া খেলছেন ১৭ বলে ৩ রানে। বাংলাদেশের হয়ে অভিষিক্ত পেসার হাসান ৫১ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট। ২ উইকেট নিতে খালেদের খরচা ২৯ রান। তাদের দাপটের পরও ব্যাটিং ব্যর্থতায় বাংলাদেশ রয়েছে বড় ব্যবধানে পিছিয়ে। চমকপ্রদ কিছু না ঘটলে এই ম্যাচে তাদের জয় পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। জিততে হলে নাজমুল হোসেন শান্তর দলকে গড়তে হবে রেকর্ড। টেস্টে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জেতার কীর্তি ওয়েস্ট ইন্ডিজের দখলে। ২০০৩ সালে অ্যান্টিগায় ৪১৮ রানের লক্ষ্যের পেছনে ছুটে ৩ উইকেটে জিতেছিল তারা। দ্বিতীয় ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। কাট করার প্রয়াসে হাসানের বল স্ট্যাম্পে টেনে আউট হন ওপেনার দিমুথ করুনারত্নে।

তার সংগ্রহ ৫ বলে ৪ রান। প্রথম ইনিংসেও ব্যাটের ভেতরের কানায় লেগে হাসানের বলে বোল্ড হয়েছিলেন তিনি। পরের ওভারেই আবার উল্লাসে মাতে বাংলাদেশ। এবারে বোল্ড হয়ে যান তিনে নামা কুসল মেন্ডিস। খালেদের অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বল ড্রাইভ করার চেষ্টায় ব্যর্থ হন তিনি। ইনসাইড এজ হয়ে তাকে দ্রুত ফিরতে হয় সাজঘরে। ২ বল খেলা কুসলের রান ২। ক্যাচ ছাড়ার ধারা অব্যাহত না থাকলে আরেকটি উইকেটের জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হতো না। হাসানের করা অষ্টম ওভারে জীবন পান ম্যাথিউস। তখন তিনি ছিলেন ৭ রানে। ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে স্লিপে যাওয়া বল হাতেও নিয়েছিলেন শাহাদাত হোসেন দিপু। তবে পারেননি মুঠোবন্দি করতে। ১৫ রানে ২ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর ইনিংস মেরামতের কাজে লাগেন আরেক ওপেনার নিশান মাদুশকা ও ম্যাথিউস। তাদের জুটি বিপজ্জনক হওয়ার আগেই থামাতে পারে বাংলাদেশ। পেসারদের দারুণ বোলিংয়ে ২৯ রানের মধ্যে তারা তুলে নেয় আরও ৪ উইকেট। ত্রয়োদশ ওভারে হাসানই দলকে দেন ব্রেক থ্রু। ততক্ষণে অবশ্য লঙ্কানদের লিড ছাড়িয়ে যায় চারশ। ইতিবাচক মেজাজে থাকা মাদুশকা শর্ট লেংথ ডেলিভারি পয়েন্ট দিয়ে কাট করতে চেয়েছিলেন। তবে বল চলে যায় সোজা এক্সট্রা কভারে। মেহেদী হাসান মিরাজ ক্যাচ লুফে বিদায় করেন ৪৫ বলে ৩৪ রান করা মাদুশকাকে। নিজের পরের ওভারে হাসান পান তৃতীয় শিকারের দেখা। দীনেশ চান্দিমালকে থিতু হতে দেননি তিনি। কোনো ফুটওয়ার্ক ছাড়াই বলে খোঁচা মারলে তা চলে যায় প্রথম স্লিপে। এই দফায় আর ভুল করেননি শাহাদাত।

দুইবারের চেষ্টায় বল জমান হাতে। ৭ বলে চান্দিমালের রান ২। ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে টিকতে না দিয়ে হাসান নেন চতুর্থ উইকেটের স্বাদ। অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বল জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলার চেষ্টায় বিপদ ডেকে আনেন শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক। ক্যাচ গ্লাভসবন্দি করেন উইকেটরক্ষক লিটন দাস। ৭ বলে ১ রান আসে ধনঞ্জয়ার ব্যাট থেকে। গোটা সিরিজে বাংলাদেশকে ভোগানো কামিন্দু মেন্ডিসকে এবার আর ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে দেননি খালেদ। ইনিংসের ২০তম ওভারের শেষ বলে ষষ্ঠ উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার রান তখন ৮৯। খালেদের ফুল লেংথ ডেলিভারি ড্রাইভ করতে গেলে কামিন্দুর ব্যাট ছুঁয়ে বল চলে যায় লিটনের হাতে। শুরুতে আম্পায়ার আউট না দিলে রিভিউ নিয়ে মেলে সফলতা। ১৭ বলে ৯ রনে বিদায় ঘটে কামিন্দুর। দিনের বাকি সময়ে আরও ৫ ওভার খেলা হয়। তবে আর কোনো বিপদ ঘটতে দেননি ম্যাথিউস ও প্রবাথ। হাসানের ১১ ও খালেদের ৯ ওভারের বাইরে বাংলাদেশের স্পিনাররা করেন কেবল পাঁচ ওভার। সাকিব আল হাসান ৪ ওভার ও তাইজুল ইসলাম ১ ওভার হাত ঘোরান। সারা দিনে পড়েছে মোট ১৫ উইকেট। আগের দিনের ১ উইকেটে ৫৫ রান নিয়ে খেলতে নেমে বাকি ৯ উইকেটে আর মাত্র ১২৩ রান যোগ করতে পারে বাংলাদেশ। টেস্টে এই নিয়ে টানা পাঁচ ইনিংসে দুইশর নিচে গুটিয়ে গেছে তারা। সবগুলোই ঘরের মাঠে।