টেস্টে কবে ধারাবাহিক সাফল্য পাবে বাংলাদেশ?

প্রকাশ : ০৫ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এম জাফিউল ইসলাম

টেস্ট আঙিনায় প্রায় দুই যুগ পার করেও সাদা পোশাকের ক্রিকেটটা এখনো পুরোপুরি রপ্ত করতে পারেনি টাইগাররা। মাঝে মাঝে চমক দেখালেও ধারাবাহিক পারফর্ম করতে পারছেন না লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। কি করলে বা কি পদক্ষেপ নিলে উন্নতি করা যায় তা দৃশ্যমান হয়নি বিগত সময়েও। হঠাৎ আলোর ঝলকানির অংশ হিসেবে গত বছর নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট জিতেছিল বাংলাদেশ। তারপর আবার ফিরে গেছে আগের অবস্থানে। সবশেষ ঘরের মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টানা দুই টেস্টে ভরাডুবি হয়েছে শান্ত-লিটনদের। চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ের কারণে প্রথম টেস্টে ৩২৮ রান এবং দ্বিতীয় টেস্টে ১৯২ রানে হেরেছে। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ফিল্ডিংটাও যুতসই করতে পারেনি স্বাগতিকরা। যে কারণে ক্যাচ মিসের প্রতিযোগিতা হয়েছে। তবে কী তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর মুশফিকুর রহিমদের অভাব বোধ করেছে দল- এমন প্রশ্ন জেগে উঠাই স্বাভাবিক সমর্থকদের মনে। চট্টগ্রাম টেস্ট শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে দেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট নিয়ে হতাশার কথা জানিয়েছেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। আবার প্রস্তুতি ঘাটতির কথা বলেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এ বিষয়ে বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রস্তুতি বলতে কী বুঝাচ্ছেন। প্রস্তুতির জন্য জাতীয় লিগ ছাড়া সুযোগ নাই, কারণ সিরিজের পর সিরিজ হতে থাকে। আপনি দেখেন কোনো প্লেয়ার সময় পায় বেশি টেস্ট খেলার? এই সুযোগটা নাই। সিরিজ হলে টেস্ট, ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি থাকে। জাতীয় দলের প্লেয়ার হিসেবে এডজাস্ট করেই খেলতে হবে। বেশি করে টেস্ট খেলতে পারলে তো ভালোই হতো। কিন্তু সেই সুযোগটা হয় না।’ তিনি আরো বলেন, ‘এবারও আমাদের ‘এ’ দলের প্রোগ্রাম আছে। তারা পাকিস্তান যাবে, আবার পাকিস্তান দল আসবে এখানে। নিউজিল্যান্ডও আসবে। ভালো হত যদি ইন্ডিয়া সিরিজের আগে খেলতে পারত। কিন্তু সেভাবে সুযোগ পাওয়া যায় না। সুযোগ পেলে আরও ভালো হত। (নির্দিষ্ট সিরিজের আগে) এখন সুযোগ বের করা বেশ কঠিন।’ ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার ব্যাপারে জালাল বলেন, ‘আগেও ছিল (ঘরোয়া টুর্নামেন্ট), এখনও আছে। আমরা চাই বেশিরভাগ প্লেয়াররা যেন এনসিএল ও বিসিএল খেলে। খেললে আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। আগে কিছু প্লেয়ার ইগ্নোর করত। আর এখন তাদের সময় হচ্ছে না। ন্যাশনাল খেলার শিডিউল সো টাইট। এজন্য তারা সুযোগ পাচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে এনসিএলে খেলার সময় সিরিজ চলছে। আমাদের দেখতে হবে বেশিরভাগ প্লেয়ার যদি সুযোগ থাকে, তারা যেন তা কাজে লাগায়। (খেলাটা) বাধ্যতামূলক করা যায় না, অনেক সময় সমস্যা থাকে। আমরা চেষ্টা করেছিলাম অনেক, কিন্তু এটা হয় না।’ লঙ্কানদের বিপক্ষে টেস্টে ব্যর্থতা জন্য ঈদের পর বিসিবি পর্যালোচনায় বসবে বলে জানিয়েছেন জালাল, ‘আমাদের যে রিসোর্স আছে তাদের নিয়েই তো খেলতে হবে। আপনি এর বাইরে কীভাবে যাবেন। আমাদের প্লেয়ার যারা আছে, তারাই খেলছে এখানে। জাতীয় দলের প্লেয়ারদের সঙ্গে বাকিদের একটা তফাৎ থাকে। আমরা কিন্তু চেষ্টা করি মানসম্পন্ন প্লেয়ার খেলানোর, আমরা নজর দিচ্ছি সেদিকে। ঈদের পর নির্বাচক, কিছু প্লেয়ার, ক্রিকেট অপারেশন্স আমরা সবাই বসব। সেখানে (এই সিরিজ নিয়ে) রিভিউ করব।’ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে স্বাগতিকদের পেস বোলিং ডিপার্টমেন্ট ছাড়া আর কোন বিভাগের পারফরমেন্সে সন্তুষ্ট নন প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। তবে কাউকে তিনি আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করাননি। তিনি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের পারফরমেন্সটাকে নিবিঢ় পর্যবেক্ষণ করতে চান। এই হয়নি, সেই হয়নি, অমুকে পারেনি। তমুকে ব্যর্থ। এসব না বলে তিনি টেস্ট দলের বর্তমান অবস্থা, ভুল-ত্রুটি, ঘাটতি, সীমাবদ্ধতা খুঁজে বের করার দিকেই অধিক মনোযোগি হয়েছেন। সে সঙ্গে এই খারাপ ও অনুজ্জ্বল পারফরমেন্সের কারণ অনুসন্ধান এবং তা কাটানোর সম্ভাব্য পথ বের করার দিকেই মূলতঃ তার চোখ। তাই ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং বিভাগ এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে না গিয়ে তিনি উন্নতির পথ খোঁজার কথাই বলেছেন। লিপুর দৃষ্টিতে লঙ্কানদের বিপক্ষে ফুল মার্ক পেয়েছে টাইগার পেসাররা। ‘পেসাররা মোটামুটি উৎরে গেছে। তবে ব্যাটিংটা ভাল হয়নি একদমই। ওপেনিংয়ে সমস্যা, মিডল অর্ডারে কেউ লম্বা ইনিংস খেলতে পারেননি। শুরু ভাল হয়নি। প্রথম সেশনে ব্যাকফুটে চলে যাওয়া, সেখান থেকে ইনিংসটাকে নতুনভাবে সাজানোর কাজগুলো হয়নি।’ সরাসরি মন্তব্য না করলেও কথা প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচক বলে ফেলেছেন, দলে তামিম, মুশফিক আর রিয়াদের মত সিনিয়র ও অভিজ্ঞ পারফরমাররা ছিলো না। এই তিন অভিজ্ঞ, দক্ষ ও সিনিয়র ক্রিকেটারের অনুপস্থিতিটাও তার চোখে পড়েছে। তাদের দলে ফিরিয়ে আনা যায় কি না? এবং সেটা কিভাবে? এমন চিন্তাও আছে তার। তামিম, মুশফিক আর রিয়াদের বিকল্প হিসেবে যারা খেলেছেন, সেই জাকির হাসান, মাহমুদুল হাসান জয় ও শাহাদাত হোসেন দিপুদের নিয়েও তাই বলে কোন কটাক্ষ করেননি লিপু। তার কথা, ‘দলের তরুণরা ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফরম করেই জাতীয় দলে জায়গা করে নিয়েছে।’ তাদের দীর্ঘ পরিসরের ফরম্যাটে হাত পাকানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন খুব প্রধান নির্বাচক। ‘আমি টেস্টে যে অবস্থা দেখলাম, সেখান থেকে উত্তরণের জন্য দরকার সম্মিলিত প্রচেষ্টা। শুধু ক্রিকেটার, কোচিং স্টাফ আর টিম ম্যানেজমেন্ট ও নির্বাচকরা মিলে এ অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারবে না। এ জন্য দরকার একটা সমন্বিত কার্যক্রম।’ তিনি নিজে ক্রিকেট অপারেশন্স, হেড কোচ, সব কোচিং স্টাফ এবং ক্রিকেটারদের সাথে বসার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন। বলেছেন ‘আমাদের সামনে বেশ কিছু টেস্ট ম্যাচ আছে। কাজেই টেস্ট টিমের উন্নতির জন্য সবাই মিলে বসতে হবে। সবার কথা শুনতে হবে। আমি সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে বসে কথা বলতে চাই। উন্নতির পথ খুঁজে বের করতে চাই।’