ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

প্রথমশ্রেণির ক্রিকেটের মান বৃদ্ধির এখনই সময়

প্রথমশ্রেণির ক্রিকেটের মান বৃদ্ধির এখনই সময়

সাদা পোশাকের ক্রিকেটে দুই যুগ পার করেও হোয়াইটওয়াসের লজ্জা এড়ানোর কৌশল রপ্ত করতে পারেনি টাইগাররা। ক্রিকেটের অভিজাত ফরম্যাট টেস্ট খেলায় যে ধৈর্যর পরীক্ষা দিতে হয়। তা এখনও দেখাতে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্ত কিম্বা লিটন দাসরা। যে কারণে ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টানা দুই টেস্টে ভরাডুবি হয়েছে লাল সবুজের প্রতিনিধিদের। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে এই দুর্দশার কারণ হিসেবে দেশের প্রথমশ্রেণির ক্রিকেট নিয়ে হতাশার কথা জানিয়েছেন অধিনায়ক শান্ত। প্রথমশ্রেণির মান নিয়ে আক্ষেপের কথা জানান লঙ্কানদের বিপক্ষে দেশের একমাত্র সফল ব্যাটার মুমিমুল হক। সিনিয়র ক্রিকেটাররা তো সুযোগ থাকার পরও প্রথমশ্রেণির দুই ক্রিকেট প্রতিযোগিতা জাতীয় ক্রিকেট লিগ বা বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ খেলেন না। এই মৌসুমের বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ শেষ হয়েছে গত নভেম্বরে। এরপর লাল বলের ক্রিকেটে খেলার কোনো সুযোগ নেই। অথচ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা মাঠে নেমেছে সাদা বলের ক্রিকেটে টানা তিন মাস খেলার পর। বিসিএল ওয়ানডে ফরম্যাটের পর, বিপিএল এবং ঢাকা লিগ। ফলে প্রস্তুতির বিশাল এক পার্থক্য ছিল। ক্রিকেটের মান নিয়ে রয়েছে আরও বড় প্রশ্ন। শেষ কয়েক মৌসুমে তাও মিনহাজুল আবেদীন নান্নু ও হাবিবুল বাশারের নির্বাচক কমিটি কিছু ঘাসের উইকেট বানিয়েছিলেন। তাতে কয়েকজন ভালোমানের পেস বোলার উঠে এসেছে। কিন্তু ওইটুকু বাদে প্রথমশ্রেণির ক্রিকেট থেকে ‘পিকনিক টুর্নামেন্টের’ কালিমা খুব একটা সরেনি। লিগ শুরু হওয়ার দুদিন আগে জড়ো হয়ে বিভাগীয় ক্রিকেটাররা অনুশীলন করেন। এরপর টানা খেলা। ওই প্রতিযোগিতা শেষে সারা বছর আর লাল বলের ক্রিকেটের খবর থাকে না। কোনো মূল্যায়ন হয় না। নতুন কোনো ক্রিকেটারও খোঁজা হয় না। দেশের প্রথমশ্রেণির ক্রিকেট নিয়ে সন্তুষ্ট না নতুন প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপুও। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটারদের আরো অনেক বেশি করে দীর্ঘ পরিসরের ম্যাচ খেলা দরকার। প্রধান নির্বাচকের উপলব্ধি, প্রথমশ্রেণির ম্যাচ বেশি করে এবং নিয়মিতভাবে খেলতে হবে। দীর্ঘ পরিসরের ম্যাচ বেশি না খেললে টেস্ট খেলার মেজাজ, ধৈর্য, টেকনিক, টেম্পারমেন্ট বাড়ানোর কোনো পথ নেই। দেশের মাটিতে একদমই বা নামমাত্র প্রথমশ্রেণির ম্যাচ খেলার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে টেস্টে। তাই ক্রিকেটারদের দেশে দীর্ঘ পরিসরের ম্যাচ খেলানোর ব্যবস্থা করতে রীতিমত মরিয়া লিপু। প্রধান নির্বাচকের মতে, যত বেশি সম্ভব, বেশি করে প্রথমশ্রেণির ম্যাচ খেলতে হবে। সেইসঙ্গে প্রথমশ্রেণির ক্রিকেটের গুণমান বৃদ্ধি ও আনুষাঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর জোর তাগিদও অনুভব করছেন তিনি। লিপু বলেন, ‘ক্রিকেটাররা বেশি বেশি প্রথমশ্রেণির ম্যাচ খেললে নিজেদের যথাযথভাবে প্রস্তুত করতে পারবে। ক্রিকেটাররা যাতে একটা মানসম্পন্ন ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ পরিবেশে জাতীয় লিগ ও বিসিএল খেলতে পারে, সে উদ্যোগ গ্রহণের এখনই সময়।’ জাতীয় দলের সঙ্গে বার বার দেশের প্রথমশ্রেণির ক্রিকেটের সূচির একটা ক্ল্যাশ হয়। তাই লিপুর মাথায় একটা নতুন চিন্তা এসেছে। তার প্রস্তাব, জাতীয় দলের সিরিজ বা সফরের সময় ঘরোয়া প্রথমশ্রেণির ক্রিকেট আয়োজন না করার। লিপু বলেন, ‘আমাদের ন্যাশনাল টিমের ক্রিকেটাররা যাতে জাতীয় দলের কার্যক্রম থেকে ফ্রি থেকে দেশে বেশি করে প্রথমশ্রেণির ম্যাচ খেলতে পারে, সেই উদ্যোগ নেয়া দরকার। এবং যে কোনো মূল্যে এটা করতে হবে। এজন্য ক্রিকেট অপস, টুর্নামেন্ট কমিটিসহ সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।’ লিপু যোগ করেন, ‘দরকার হলে প্রথমশ্রেণির ক্রিকেট বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে না করে জাতীয় দলের যখন কোনো কার্যক্রম থাকে না, তখন ভেঙে ভেঙে দুই বা তিনবারে আয়োজন করা যেতে পারে। তাহলে সবাই খেলার সুযোগ পাবে। এটা করতে হলে ক্রিকেট অপস, ন্যাশনাল টিম ম্যানেজমেন্ট আর টুর্নামেন্ট কমিটির সবাইকে নিয়ে বসতে হবে। আমি আগামীতে সবার সঙ্গে বসে সে উদ্যোগ নেয়ার চেষ্টাই করব।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত