ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

হকির আকাশে নতুন ‘চাঁদ’

হকির আকাশে নতুন ‘চাঁদ’

কিশোর বেলা থেকেই স্বপ্ন দেখেছেন ফুটবলার হওয়ার। শুরুটাও হয়েছে সেখানেই। খেলেছেন ঢাকা পাইওনিয়ার ফুটবল লিগেও। কিন্তু তার ভাগ্যেই যেন ফুটবল লিখা নেই। তাই তো এখন হকি খেলোয়াড় হিসেবে টার্ফ মাতাচ্ছেন। এরইমধ্যে দেশ-বিদেশে নিজের মেধা ও যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে দেশের জন্য সাফল্য বয়ে এনেছেন। জাতীয় বয়সভিত্তিক হকি দলের মেধাবী ডিফেন্ডার আসাদুজ্জামান চাঁদের কথাই বলা হচ্ছে এখানে। এবারের প্রিমিয়ার ডিভিশন হকি লিগে যে ক’জন তরুণ ডিফেন্ডার আলো ছড়াচ্ছেন চাঁদ তাদের অন্যতম। চলমান লিগে অ্যাজাক্স স্পোর্টিং ক্লাবের জার্সিতে দুর্দান্ত খেলছেন তিনি। এরইমধ্যে ৯ ম্যাচ খেলা হয়ে গেছে। প্রতিটি ম্যাচেই দলের অপরিহার্য অংশ হিসেবে শুরুর একাদশে ছিলেন। অনেকদিন ধরেই সাদামাটা দল গড়ে ৫/৬ নম্বরে থেকে লিগ সমাপ্ত করে আসছে অ্যাজাক্স। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন। শুরুতে চ্যাম্পিয়নশিপের কথা ভাবলেও এখন ৩/৪ নম্বরে থেকে লিগ শেষ করার লক্ষ্য দলটির। সেই লক্ষ্যকে মাঠে বাস্তবায়নের জন্য চাঁদরা যথাসম্ভব চেষ্টা করছেন। লিগের প্রথম পর্বের আর এক ম্যাচ বাকি অ্যাজাক্সের। ওই ম্যাচ জিতলেই সুপার সিক্স নিশ্চিত হয়ে যাবে দলটির। টানা দ্বিতীয়বারের মতো ঘরোয়া হকির সর্বোচ্চ আসর প্রিমিয়ার লিগে খেলছেন নাটোর সদর উপজেলার ধরাইল গ্রামের সন্তান চাঁদ। ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবের জার্সিতে ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত সবশেষ লিগে যাত্রা শুরু তার। ওই আসরের পারফরম্যান্সের পর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০২২ সাল থেকেই বয়সভিত্তিক জাতীয় দলগুলোতে ডাক পড়ে তার। গত বছর তো ওমানে অনুষ্ঠিত এএইচএফ কাপ অনূর্ধ্ব-২১ টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি জিতে নিজেকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিয়েছেন। গত বছর জাতীয় দলেও ডাক পড়েছিল। ফাইভণ্ডএ-সাইড টুর্নামেন্টে প্রাথমিক দলে ছিলেন। অথচ চাঁদ হতে চেয়েছিলেন একজন ফুটবলার। ২০১৫ সালে ঢাকায় পাইওনিয়ার লিগেও খেলেছেন। গোল করেছেন। অথচ পরের বছরেই জীবনে এসেছে নতুন বাঁকবদল। চাঁদের জীবনে সেই বাঁকবদলের রূপকার হলেন দেশের জনপ্রিয় হকি কোচ আলমগীর আলম। সবার পছন্দের আলমগীর স্যার। বিকেএসপির হকি কোচ। আলমগীর আলমের হাত ধরে নাটোর থেকে সাভারের বিকেএসপিতে পা রাখা ২০১৬ সালে। এরপর ২০২২ পর্যন্ত বিকেএসপিতে কাটিয়ে এখন পুরোদস্তুর পেশাদার হকি খেলোয়াড় চাঁদ। ফুটবলের প্রতি চাঁদের ঝোঁকটা ছিল স্কুল থেকেই। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জাতীয় প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল আসর ‘বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপে’ নিজ জেলা নাটোরের হয়ে অংশ নিয়েছেন। সেখানে ভালো করার পর এসেছেন ঢাকাতে পাইওনিয়ার লিগ খেলতে। পরে হকি ইভেন্টে বিকেএসপিতে ভর্তি হন। সেখানে ভর্তি হওয়ার আগে এলাকার কামাল মাস্টারের কাছে হকির অ আ ক খণ্ড প্রাথমিক জ্ঞানের তালিম নিয়েছেন। এরপর প্রিয় আলমগীর স্যার ছাড়াও বেসিক কোচ শেখ মোহাম্মদ নান্নুর কাছে দীক্ষা নিয়েছেন। প্রিয় জাহিদ হোসেন রাজু স্যারকেও ভুলে যাননি। মালয়েশিয়ান ইমান গোবিনাথান কৃষ্ণমূর্তিকেও নিজের পছন্দের কোচের তালিকায় স্থান দিয়েছেন আসাদ্দুজ্জামান চাঁদ। খেলাধুলাতে কখনোই বারণ ছিল না চাঁদের। বাবা, মা বরং উৎসাহই দিতেন। কিন্তু নাটোর ছেড়ে ছেলে বিকেএসপিতে ভর্তি হবে, ঢাকায় পা রাখবে- এটা চাঁদের মা শুরুতে মানতে পারেননি। একমাত্র ছেলে সন্তানকে ইট-কাঠের শহরে পাঠাতে আপত্তি ছিল। কারণ ঢাকায় ছেলে-ধরারা যদি চাঁদকে ধরে নিয়ে যায়- মায়ের এই ভয় ছিল। চাঁদ বাবা-মাকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে, বিকেএসপিতে খেলাধুলার পাশাপাশি পড়াশুনা করে একদিন নামডাক, যশ-খ্যাতি সব আসবে। বাবা-মাকে ভুল আশ্বাস দেননি। এটা ঠিক যে, এখনো অনেক বড় কিছু হতে পারেননি। তবে চাঁদের সেরা হওয়া কেবলই সময়ের ব্যাপার। দেশের নামকরা ডিফেন্ডার মামুনুর রহমান চয়ন, ফরহাদ আহমেদ শিতুল, রোমান সরকারদের বিরাট ভক্ত চাঁদ। তাদের কাতারে না হোক একদিন তাদের মতো জাতীয় দলের জার্সিটা গায়ে জড়াতে চান এবং সেটা আগামী বছর ২০২৫ সালেই। তবে জাতীয় দলে ক্ষণিকের অতিথি হতে নয়; দীর্ঘমেয়াদে খেলতে চান আসাদুজ্জামান চাঁদ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত