এই মুস্তাফিজ সেই মুস্তাফিজ

প্রকাশ : ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

মুস্তাফিজুর রহমানের সংকটটা উভয়মুখীই। খারাপ খেললে সমালোচনার হুল অনবরত ফুটতেই থাকে। আবার আইপিএলে গিয়ে পারফরম্যান্স দুর্দান্ত হওয়ার পরও যেন মুক্তি নেই এই বাঁহাতি পেসারের! চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে ৫ ম্যাচে ১০ উইকেট নেওয়া বোলারকে নিয়ে বয়ে যেতে থাকা প্রশংসার মালায় আছে সমালোচনার চোরা কাঁটাও। জাতীয় দলে তো এই চেহারায় দেখা যায় না তাঁকে! মঙ্গলবার সকালে এক অনুষ্ঠানে তাকে ঘিরে এমন সংশয়মাখা জিজ্ঞাসার মুখে পড়তে হয়েছে। এমনকি জাতীয় দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তকেও।

সব সংশয় অবশ্য তিনি মুছে দিতে চেয়েছেন, ‘যখন মুস্তাফিজ বাংলাদেশের হয়ে খেলে, তখন ওর আগ্রহটা আরো বেশি থাকে। প্রতিটা বল অনেক গুরুত্ব দিয়ে করে।’ কিন্তু বাজার চলতি হাওয়া তাতে দূরে মিলিয়ে যায় না। সত্যিই কি জাতীয় দল আর আইপিএলের মুস্তাফিজ আলাদা? ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে নিজের পুরোটা উজাড় করে দিলেও বাংলাদেশের হয়ে কি তা দেন না ‘কাটার মাস্টার’? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে ক্রিকেট কোচ ও বিশ্লেষক নাজমুল আবেদীন ফাহিম যে উপসংহারে পৌঁছেছেন, তাতে এই বোলারকে দায় দেওয়ার সুযোগ সামান্যই। ফাহিমের মতে, চেন্নাইয়ের ফ্র্যাঞ্চাইজি আর জাতীয় দলের মুস্তাফিজের মধ্যে পার্থক্য তৈরি করে আসলে দলের ভেতরের পরিবেশ। চেন্নাইয়ের পরিবেশ খুব অনুকূল হলেও বাংলাদেশ দলে সেটি ভীষণ প্রতিকূল বলেই ধরা পড়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেট কোচের বিশ্লেষণে, ‘আইপিএলে ওকে যে স্পেস দেওয়া হয় বা মানসিকভাবে যে জায়গায় রাখা হয়, ওকে যে গুরুত্ব ও সমীহ দেখানো হয়, ওর ওপর যে নির্ভরশীলতা দেখানো হয়, জাতীয় দলে খেলার সময় মুস্তাফিজকে এর কোনোটিই দেখানো হয় না।’

বাজে সময়ে ঘরের লোকের সমর্থন না পাওয়াটা এই ফাস্ট বোলারকে তার সেরায় ফিরতে দেওয়ার অন্তরায় বলেও মনে করেন ফাহিম, ‘খেলোয়াড়ের মধ্যে যে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি তৈরি হয়, সেটিকে পূরণ করে তার চারপাশের মানুষের বিশ্বাস। আমাদের এখানে ভেতর থেকেই একজন খেলোয়াড়কে এতটা কোণঠাসা করে ফেলা হয় যে সেটি ওকে সাহসী হতে দেয় না। কিন্তু বিরুদ্ধ স্রোতে সাঁতরাতে না জানলে কিসের বড় খেলোয়াড় মুস্তাফিজ? এ ক্ষেত্রেও ভিন্ন ব্যাখ্যা আছে ফাহিমের, ‘আমাদের খেলোয়াড়দের মানসিক গঠন ও বেড়ে ওঠা সাধারণত ওদের অত সাহসী করে তুলতে পারে না। ওরা যখনই কোনো হুমকি দেখে, নিজেকে গুটিয়ে ফেলে। এর মধ্যেও সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে সাকিব, মুশফিক ও তামিমরা পারবে, সবাই নয়।’ পরিবেশের কারণেই মুস্তাফিজকে আলাদা দেখায় বলে ফাহিম মনে করলেও প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেনের ভাবনা ভিন্ন। তিনি বরং এই ফাস্ট বোলারকে ক্রিকেটের কৌশলগত দিক থেকেই তুলে ধরতে চাইলেন, ‘বিশেষ উদ্দেশ্য থেকেই মুস্তাফিজকে নিয়েছে চেন্নাই। ওদের নিজেদের উইকেটে কার্যকরী হবে ভেবেই ওকে নেওয়াটা দারুণ এক সিলেকশন ছিল।’ সেই সঙ্গে বাংলাদেশ দলের সাবেক এই অধিনায়ক আরো যোগকরেছেন, ‘সবাই মুস্তাফিজের রিস্ট ওয়ার্ক নিয়ে কথা বলছে। কিন্তু চেন্নাইয়ের উইকেটে যে ওর বল গ্রিপ করছে, সেটি নিয়ে আলোচনা সামান্যই হচ্ছে। সব জায়গায়, বিশেষ করে বিশ্ব আসরে এ রকম উইকেট পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই। কাজেই মুস্তাফিজ সব জায়গাতেই একই রকম ধারাল হবে না হয়তো।’

পরিসংখ্যানও আইপিএলে দুই রকম মুস্তাফিজকে চেনাচ্ছে। চেন্নাইয়ের হোম ভেন্যুতে তিন ম্যাচ খেলে তার ইকোনমি যেখানে ৬.৭৫, সেখানে প্রতিপক্ষের মাঠে দুই ম্যাচে এর প্রায় দ্বিগুণ (১২.৭৫)।