ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে দৌড়ে রোমাঞ্চিত মুশফিক-শান্তরা

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে দৌড়ে রোমাঞ্চিত মুশফিক-শান্তরা

দেশের ক্রীড়াঙ্গনের সূতিকাগার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম। এখানে খেলেছেন লিওনেল মেসি ও জিনেদিন জিদানের মতো মহাতারকারা। ফুটবলের পাশাপাশি ক্রিকেটের মিনি বিশ্বকাপ, এশিয়া কাপ হকি, বক্সার মুহম্মদ আলীর প্রদর্শনী ম্যাচসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয়েছে এই মাঠে। ১৯৫৫ সালে এই স্টেডিয়ামেই ভারতের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ‘হোম’ টেস্ট খেলেছিল পাকিস্তান। তার ৪৫ বছর পর এ মাঠেই অভিষেক টেস্ট খেলে বাংলাদেশ, প্রতিপক্ষ ছিল সেই ভারতই। একসময়ে দেশের ক্রিকেটের তীর্থস্থান ছিল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম। সময়ের প্রয়োজনে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে এই মাঠ ব্যবহার করেছে ফুটবল ও ক্রিকেট। তবে ২০০৬ সাল এই মাঠ পাকাপাকিভাবে বরাদ্দ পায় ফুটবল। এরপর মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম হয়ে যায় ক্রিকেটের নতুন ঠিকানা। মাঝে ২০১১ বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অবশ্য হয়েছে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে। চলতি বছরের জুনে মাঠে গড়াবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। তার আগে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। টাইগারদের নতুন স্ট্রেন্থ অ্যান্ড কন্ডিশনিং কোচ নাথান কেইলি ক্রিকেটারদের ফিটনেস লেবেল পরখ করতে চান। তাই দীর্ঘদিন পর নাজমুল হোসেন শান্ত, লিটন দাসদের ফিটনেস পরীক্ষার জন্য বেছে নেয়া হয়েছে দেশের খেলাধুলার অনেক ইতিহাসের সাক্ষী এই মাঠটিকে। ফলে দেড় যুগেরও বেশি সময় পর আবার ক্রিকেটারদের কলতানে হলো মুখরিত বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম। গতকাল শনিবার সকাল ৬টা থেকে বাংলাদেশ জাতীয় দলের পুলভুক্ত ক্রিকেটাররা একে একে হাজির হন বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের এক নম্বর ভিআইপি গেটে। এরপর নতুন বসানো অ্যাথলেটিকস টার্ফে ক্রিকেটাররা ফিটনেস পরীক্ষা দিয়েছেন। চাইলে এই পরীক্ষা করানো যেত নিজেদের মিরপুর স্টেডিয়ামেই। কিন্তু অ্যাথলেটিকস টার্ফের পরীক্ষা হয় নিখুঁত। দৌড়াতেও সুবিধা। সেজন্য বিসিবির নতুন ট্রেনার ন্যাথান কিলির চাওয়াতেই অ্যাথলেটিক্স টার্ফে চলে এই ট্রেনিং। শুরুতে হালকা জগিং ও ব্যায়ামে শরীরের জড়তা কাটানোর পর ন্যাথান কিলি ৩৫ ক্রিকেটারদের করণীয় বুঝিয়ে দেন। ক্রিকেটারদের জন্য অবশ্য রোমাঞ্চের পাশাপাশি অভিজ্ঞতা বেশ কঠিনই ছিল। হালকা গা-গরমের পরই শুরু হয়ে যায় তাদের শারীরিক মূল্যায়নের পরীক্ষা। এরপর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের অ্যাথলেটিকস ট্র্যাকে ১৬০০ মিটার দৌড়ের পালা। নিশ্চিতভাবেই কঠিন হবে এই পর্ব, তা বুঝতে পেরেছিলেন মুশফিকুর রহিম। তাই তো দৌড় শুরুর আগে খুনসুটি করে সেরা দৌড়বিদের জন্য স্বর্ণ পদকের আবদার করে বসেন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার।

সত্যিই সেই ব্যবস্থা থাকলে স্বর্ণ পদক পেতেন তানজিম হাসান ও নাহিদ রানা। দুই দলে ভাগ করে ৪*৪০০ মিটার দৌড়ে প্রথম হন দুই তরুণ পেসার। দৌড় শেষ করে বিশ্বের দ্রুততম মানব উসাইন বোল্টের মতোই উদযাপন করেন নাহিদ। তবে এই দৌড়ে যে উত্তীর্ণ-অনুত্তীর্ণ বা প্রথমণ্ডদ্বিতীয় বলতে কিছু নেই, সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপে সেটিও মনে করিয়ে দেন ট্রেনার ইফতি। মূলত টানা খেলার মধ্যে থাকায় জাতীয় দল ও আশপাশে থাকা ক্রিকেটারদের ফিটনেসের সবশেষ অবস্থা বোঝার জন্য এই মূল্যায়ন করতে চেয়েছিলেন জাতীয় দলের নতুন অস্ট্রেলিয়ান ট্রেনার কিলি। নিয়মিত ক্রিকেটারদের মধ্যে আইপিএলে থাকায় মোস্তাফিজুর রহমান, চোট থেকে ফেরার পথে থাকায় সৌম্য সরকার ও যুক্তরাষ্ট্রে থাকায় ছিলেন না সাকিব আল হাসান। এছাড়াও তাসকিন আহমেদ ও তাইজুল ইসলামকেও দেখা যায়নি গত সপ্তাহে পেশির টান পাওয়ার কারণে। ফিটনেশ সেশনে শেষে ট্রেনার ইফতেখার ইসলাম ইফতি গণমাধ্যমে বলেছেন খেলোয়াড়দের সামগ্রিক ফিটনেসের অবস্থা বুঝতে চেয়েছেন তারা, ‘এই পরীক্ষার মাধ্যমে বুঝলাম খেলোয়াড়দের অবস্থাটা কেমন। এটার মধ্যে পাশ-ফেলের কিছু নেই। ডিপিএল গিয়েছে, বিপিএল গিয়েছে। এরপরে ওদের ফিটনেসের অবস্থা কি সেটা জানার জন্য (এই উদ্যোগ)। এটা জানার পর খেলোয়াড়দের কাকে কি অনুশীলন করাতে হবে এটা খুঁজে বের করব। ওদের জানিয়ে দেব, ওভাবে আমরা প্রয়োগ করব।’ ৩৮ পেরোনো মাহমুদউল্লাহ ও ৩৬ পেরোনো মুশফিকুর রহিম এই ফিটনেস ট্রেনিংয়ে নজর কেড়েছেন বেশ। আপাতত খেলোয়াড়দের ফিটনেসে সন্তুষ্ট ট্রেনাররা। তবে আরও উন্নতির জায়গা দেখছেন তারা। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে রানিং সেশনের পর খেলোয়াড়রা ফিরেছেন মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে। সেখানে জিম সেশন আছে তাদের। ১৬০০ মিটার রানিংয়ে মাহমুদউল্লাহ সবার পরে আসলেও উনিশ-কুড়ির তানজিদণ্ডসাকিব ও ২৫-২৮ বয়সি মিরাজ-শান্তদের সঙ্গে যেভাবে অ্যাফোর্ট দিয়েছেন তাতে তালি পেয়েছেন। এছাড়া যারা ছিলেন প্রত্যেকেই নিজেদের নিবেদন দেখিয়েছেন। প্রথমবার অ্যাথলেটিকস টার্ফে দৌড়ানোর উচ্ছ্বাস, রোমাঞ্চ টের পাওয়া গেছে ভালোমতোই। সঙ্গে ক্রিকেটের পুরোনো ঠিকানায় রোমাঞ্চে ডুবে গেছেন তারাও। স্মৃতি রোমন্থনে ক্রিকেটারদের নানা গল্প শুননিয়েছেন নাফিসরা। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম যেখানে মিলেমিশে হয়েছে একাকার। ক্রিকেটারদের এই বিশেষ সেশনে উপস্থিত ছিলন ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের ম্যানেজার ও সাবেক ক্রিকেটার শাহরিয়ার নাফীস। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ক্রিকেট জীবন শুরু করা নাফীস করেন স্মৃতি রোমন্থন, ‘আমাদের খেলার প্রতি আগ্রহ তৈরি হওয়া, খেলা দেখে শেখা সব এই স্টেডিয়ামকে কেন্দ্র করেই। এখনো মনে আছে খুব সম্ভবত ১৯৯৩ বা ১৯৯৪ সালে প্রথম এই মাঠে এসেছিলাম খেলা দেখতে। কাজিনরা যেহেতু খেলতেন, ফারুক ভাই (ফারুক আহমেদ) জাতীয় দলের অধিনায়ক ছিলেন। পাশাপাশি আইকনিক যত খেলোয়াড়রা ছিলেন তাদের দেখে খেলা শুরু। আমার বাংলাদেশে ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলা এখানে শুরু। আমার প্রথম যে গুরুত্বপূর্ণ ইনিংসটা আন্ডার নাইনটিতে একটা অনুশীলন ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে, সেটা এই মাঠে। জাতীয় দলে আমি এখানে কোন খেলা পাইনি, এটা আমার একটা আক্ষেপ। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গণ মানেই বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম। এখানে আসলে আপনার ভালো না লেগে ফেরার কোনো সুযোগই নেই।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত