ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রিশাদের ভেলকিতে শাইনপুকুরের বাজিমাত

লিটনের রানে ফেরার ম্যাচে আবাহনীর দাপুটে জয়

লিটনের রানে ফেরার ম্যাচে আবাহনীর দাপুটে জয়

রান খরায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের মাঝপথে বাদ পড়েছিলেন লিটন দাস। প্রধান নির্বাচক পরামর্শে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) এক ম্যাচ খেলে আবার যোগ দেন টেস্ট দলে। সেখানেও ব্যর্থ। এরপর লিগ থেকে ছুটি নিয়েছিলেন। সুপার লিগ রাউন্ডে ফিরেই কাঙ্ক্ষিত রানের দেখা পেলেন এই ওপেনার। প্রতিযোগগিতামূলক ক্রিকেটে ১১ ইনিংস পর হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন লিটন। তার সঙ্গে জুটি গড়ে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে টি-টোয়েন্টির মহড়া দিয়েছেন তাওহিদ হৃদয়। তাতেই সুপার লিগের প্রথম ম্যাচে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে দাপুটে জয় পেয়েছে আবাহনী লিমিটেড।

গতকাল সোমবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় আবাহনী। ফলে আগে ব্যাট করতে নেমে শরিফুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদের তোপে প্রাইম মাত্র ১৭৮ রানে গুটিয়ে যায় প্রাইম ব্যাংক। জবাবে লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৫ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় আবাহনী। ওপেনিংয়ে নেমে লিটন ১০৬ বলে ৫৬ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন। তার ইনিংসটি ছিল ধীরগতির। ফিফটির দেখা পান ৭৬ বলে। ইনিংসে চারের মার ছিল সাতটি। খেলেছেন দেখেশুনে, কোনো অহেতুক শট খেলতে যাননি। দল যখন জয়ের দ্বারপ্রান্তে তখনো লিটন ছিলেন ঠান্ডা মেজাজে। লিটন ছাড়া হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন তাওহীদ হৃদয়। মাত্র ২৭ বলে ৪টি চার ও ৫টি ছয়ের মারে প্রাইম ব্যাংকের বোলারদের এলোমেলো করে ৫৫ রান করেন হৃদয়। ফিফটি পান মাত্র ২৩ বলে।

এছাড়া এনামুল হক বিজয় ও নাজমুল হোসেন শান্ত সমান ২২ ও জাকের আলী অনিক ১২ রান করেন। প্রাইম ব্যাংকের হয়ে দুটি করে উইকেট নেন সানজামুল ইসলাম ও শেখ মেহেদী হাসান। এর আগে ব্যাটিং করতে নেমে শরিফুল ইসলামণ্ডতাসকিন আহমেদদের তোপে শুরু থেকে উইকেট হারাতে থাকে প্রাইম ব্যাংক। পারভেজ হোসেন ইমন (০), শাহাদাত হোসেন দিপু (৪) ও তামিম ইকবাল (১) ফেরেন শুরুতে। মাত্র ৫ রানে দলটি ৩ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকে। এরপর জাকির হাসান-মুশফিকুর রহিম দলের হাল ধরেন। দুজনে জুটি গড়ে এগোতে থাকেন। মুশফিকের আউটে ১১২ রানে ভাঙ্গে জুটি। তার ব্যাট থেকে আসে ৪৪ রান। অপর প্রান্তে থাকা জাকির তুলে নেন ফিফটি। অবশ্য ফিফটির পর বেশিদূর যেতে পারেননি। সর্বোচ্চ ৬৮ রান আসে তার ব্যাট থেকে।

জাকিরের আউটের পর সবমিলিয়ে ৪২ রান করতে পারে প্রাইম ব্যাংক। আবাহনীর হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন শরিফুল। ম্যাচসেরার পুরস্কার ওঠে তার হাতে। ২টি করে উইকেট নেন তাসকিন আহমেদ ও তানভীর ইসলাম। এই জয়ে ২৪ পয়েন্ট নিয়ে শিরোপা জয়ের আরো কাছে চলে গেছে স্কাই ব্লু খ্যাত দলটি। লিগ পর্বে ৬ পয়েন্ট এগিয়ে থেকে সুপার লিগে পা রাখে ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি। সুপার লিগে প্রথম ম্যাচে জয় শিরোপার আরও কাছে গিয়েছে আবাহনী। অন্যদিকে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে সুপার লিগে আসা প্রাইমব্যাংক প্রথম ম্যাচে মাঠ ছেড়েছে প্রাইম ব্যাংক।

দিনের আরেক ম্যাচে রোমাঞ্চকর জয় পেয়েছে শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব। বিকেএসপির ৩ নম্বর মাঠে রিশাদের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ১৩ রানের জয় দিয়ে সুপার লিগ শুরু করে শাইনপুকুর। স্রেফ ১৩৮ রানের সংগ্রহ নিয়েও তারা গাজী গ্রুপকে গুটিয়ে দেয় ১২৫ রানে। ম্যান অব দা ম্যাচ তো অবশ্যই রিশাদ। ৩ উইকেট নিয়ে অভিজ্ঞ বাঁহাতি স্পিনার আরাফাত সানিও রাখেন বড় অবদান। ব্যাটিংয়ে ব্যর্থতার পরও শাইনপুকুর জয়ের বিশ্বাসটা পায় শুরুতে সানির হাত ধরেই। গাজী গ্রুপের রান তাড়ায় শুরুতেই আনিসুল ইসলামকে ফেরান তিনি। পঞ্চাশ পূর্ণ হওয়ার পর আউট করে দেন আরেক ওপেনার মেহেদি মারুফকেও। তিনে নেমে সহজাত পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন হাবিবুর রহমান। শুরুটা করেন তিনি প্রথম দুই বলের বাউন্ডারিতে। অষ্টম ওভারে দুই চারের পর ছক্কা মারেন গতিময় বোলার নাহিদ রানাকে। ছাড় দেননি তিনি সানিকেও, টানা দুই বলে মারেন ছক্কা। তবে আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ানকে এবার ফিফটিতেও যেতে দেননি রিশাদ। তার দ্বিতীয় ওভারে বড় টার্নে বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারি কাট করতে গিয়ে পয়েন্টে ক্যাচ দেন হাবিবুর। চারটি করে চার-ছক্কায় ১৯ বলে ৪১ রান করেন তরুণ ব্যাটসম্যান। হাবিবুরের বিদায়ের পর কেউ তেমন কিছু করতে পারেননি। নিজের পরের ওভারেই প্রিতম কুমারের উইকেট নেন রিশাদ। পরে ২০তম ওভারে জোড়া আঘাত হানেন তিনি। প্রায় একই ধরনের ডেলিভারিতে কট বিহাইন্ড হন মইন খান ও সাব্বির হোসেন শিকদার। ১০০’র আগে ৬ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় গাজী গ্রুপ। স৭ নম্বরে নামা শেখ পারভেজ রহমান চেষ্টা করেন দলকে এগিয়ে নেওয়ার। নতুন স্পেলে ফিরে ২২ রান করা পারভেজকে আউট করেন আরাফাত সানি। পরে চার বলের মধ্যে শেষ ২ উইকেট নিয়ে শাইনপুকুরকে জিতিয়ে দেন বাঁহাতি স্পিনার হাসান মুরাদ। চলতি লিগে এখন পর্যন্ত ৯ ইনিংসে রিশাদের শিকার ২৩ উইকেট। এই ম্যাচ দিয়ে উইকেট শিকারিদের তালিকায় ২ নম্বরে উঠে গেছেন তিনি। ওভারপ্রতি তার রান খরচের হার স্রেফ ৩.৯৭। ম্যাচের প্রথম ভাগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে তানজিদ হাসান ছাড়া শাইনপুকুরের আর কেউই তেমন সুবিধা করতে পারেননি। প্রথম সাত ব্যাটসম্যানের মধ্যে তানজিদ একাই ছুতে পারেন ২ অঙ্ক। স্বভাবসুলভ ব্যাটিংয়ে ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৫১ বলে ৪২ রান করেন তানজিদ। হুসনা হাবিবের বল দূর থেকে খেলার চেষ্টায় ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দেন বাঁ-হাতি ওপেনার। অন্যদের ব্যর্থতায় স্রেফ ৮৩ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে শাইনপুকুর। এরপর রিশাদের ঝড়। হুসনা হাবিবের বলে তিনি মারেন ৩টি ছক্কা। বাঁহাতি পেসার রুয়েল মিয়ার বল সোজা পাঠান সীমানার ওপারে। হুসনা হাবিবকে আরেকটি ছক্কা মারতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ধরা পড়েন তিনি। শেষ দিকে দুটি ছক্কা মারেন মুকিদুল ইসলাম, যা পরে দলের জন্য মহামূল্যবান প্রমাণিত হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত