২০১৬-১৭ মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেও আর্থিক সংকটের কারণ দেখিয়ে নিজেদের সরিয়ে নেয় ফকিরাপুল ইয়ংমেন্স ক্লাব। কিন্তু ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বরে ক্যাসিনোকাণ্ডে সবার আগে ফকিরাপুলের ক্লাবটির নাম উঠতেই বেরিয়া আসে ক্লাবপাড়ার নানা ভয়ংকর সব খবর। সেই সময় কারোরই বুঝতে বাকি নেই, ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত ক্লাবটির কর্মকর্তারা ফুটবলের পরিবর্তে কোন খেলায় বেশি মনোযোগী ছিলেন।
ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে তালাবদ্ধ হওয়া ক্লাবটিতে যে আঁধার নেমে এসেছিল, তা কাটাতে কেটেছে চারটি বছর। ক্লাবের দরজায় তালা, আর মাঠে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্সশিপ লিগ খেলে ফুটবলে যে ঐতিহ্য তা ধরে রাখার প্রয়াস ছিল নতুন কমিটির কর্মকর্তাদের। তারই ধারাবাহিকতায় সাফল্যের দেখা মিলেছে। ২০২৩-২৪ মৌসুমে ২৭ পয়েন্ট নিয়ে বিসিএলে চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রিমিয়ার লিগে উন্নীত হয়েছে ফকিরাপুল। গত বুধবার কমলাপুর স্টেডিয়ামে ট্রফি হাতে নিয়ে দলের প্লেয়ার এবং কর্মকর্তারা যখন উচ্ছ্বাসে মাতোয়ারা ছিলেন, দূরে দাঁড়িয়ে থাকা অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে ‘এবার কি লিগে খেলবে ফকিরাপুল?’ সেই প্রশ্নের উত্তরটা খুব জোরালো গলায় দিয়ে দিলেন ক্লাবটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান মাইন, ‘যেহেতু কোয়ালিফাই করেছি, অবশ্যই প্রিমিয়ার লিগে টিম করব। অন্তত একটা বছর করে দেখি। আমরা তো ওইভাবে ফাইট করতে পারব না, টিকে থাকার চেষ্টা করব।’ অথচ এবারও শঙ্কার দোলাচলে ছিলেন ফকিরাপুলের কর্তারা। ক্যাসিনোর মতো অন্ধকার জগতে ডুবে থাকা ক্লাবটি চলছে এলাকার কিছু মানুষের অনুদানে। প্রায় পাঁচ বছর আগে জুয়ায় নাম ওঠার পর মুখ ফিরিয়ে নেয় স্পন্সররা। ‘কলঙ্ক’ মাথায় নিয়ে কারও কাছে সহযোগিতার হাতও বাড়াতে পারেননি ক্লাবের নীতিনির্ধারকরা। যে কারণে বিসিএলের শুরুতে নানা শঙ্কা কাজ করছিল তাদের মাথায়। কিন্তু লিগের দ্বিতীয় লেগে ক্লাবটি ক্লিক করায় পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনেন তারা।
এবার সবাই একটা মতক্যৈ পৌঁছেন, প্রিমিয়ার লিগে উঠলে যত সমস্যাই থাকুক, তারা খেলবেন। আর এই খেলার মূলেই আছে ৬৫ বছরের এই ক্লাবটির ইমেজ পুনরুদ্ধার করা। ‘মাঝখানে ক্যাসিনোকাণ্ডে নাম জড়িয়ে একটা নেতিবাচক শিরোনামে এসেছে ক্লাবটি। আমরা মূলত চাচ্ছি আমাদের নেগেটিভ ধারণা থেকে বের হতে। যেটা হয়েছে, তখন হয়তো আমরা ছিলাম না; কিন্তু আমাদের লোকজনই ছিল। যেভাবে হোক একটা খারাপ ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে। সেটার কারণে আমরা ওইভাবে স্পন্সর পাই না বা কারও কাছে যাওয়া যায় না। আমরা চাচ্ছি ইমেজ সংকটটা কাটিয়ে ওঠে মোটামুটি একটু ঘুরে দাঁড়াতে। সেজন্য একটু কষ্ট হলেও বিপিএলে খেলার চেষ্টা করব’- বলেন ক্লাবটির সাধারণ সম্পাদক। ক্লাবটি তালাবদ্ধ থাকলেও গত বছরের শেষে দরজা খুললেও শুধু কাঠামো, ছাদ আর দেয়াল ছাড়া কিছুই ছিল না ফকিরাপুল ইয়ংমেন্স ক্লাবের। সবকিছুর সঙ্গে খোয়া গেছে ক্লাবের পুরোনো অনেক ট্রফি। এখনও সেভাবে গুছিয়ে উঠতে পারেনি ফকিরাপুল।