ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

‘আমার সাফল্যের অন্যতম কারিগর তুহিন স্যার’

বিএসপিএ অ্যাওয়ার্ড জয়ী বক্সার সেলিম হোসেন
‘আমার সাফল্যের অন্যতম কারিগর তুহিন স্যার’

দেশের ক্রীড়াঙ্গনে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার হিসেবে বিবেচিত বিএসপিএ স্পোর্টস আওয়ার্ড। যেটি শুরু হয় ১৯৬৪ সালে, দেশ স্বাধীনের পূর্বে। বিগত ছয় দশকে দেশের অনেক ক্রীড়াবিদ এই সম্মানজনক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তারমধ্যে আছেন বক্সাররাও। সবশেষ গত ২১ এপ্রিল দেশের একাদশতম বক্সার হিসেবে বিএসপিএ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন দেশসেরা বক্সার মো. সেলিম হোসেন। এজন্য তাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৩০ বছর। ১৯৯৩ সালে সবশেষ দেশের দশম বক্সার হিসেবে এই পুরস্কার জেতেন বক্সার মোজাম্মেল হক। ২০২৩ সালে বক্সিং রিংয়ে (হ্যাংজু এশিয়ান গেমসে) দারুণ সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএসপিএ)’ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হলেন জাতীয় দলের তারকা বক্সার সেলিম। রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে এক জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অত্যন্ত মেধাবী, চৌকষ এবং দক্ষ বক্সার সেলিমের হাতে ঐতিহ্যবাহী এবং মর্যাদার বিএসপিএ অ্যাওয়ার্ড তুলে দেয়া হয়। আরাধ্য এ অ্যাওয়ার্ড পেয়ে যারপরনাই আনন্দিত, অভিভূত তিনি। তবে পুরস্কারের কৃতিত্ব একার নয় বলে মন্তব্য সেলিমের। বাংলাদেশ অ্যামেচার বক্সিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম তুহিন পাশে না থাকলে এই স্বীকৃতি কখনোই জুটত না বলে মন্তব্য তার। সেলিম হোসেন বলেন, ‘পিছিয়েপড়া, ঝিমিয়েপড়া বক্সিংকে জাগিয়ে তুলতে দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তুহিন স্যার। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে স্যার যেভাবে কাজ করে চলেছেন আমাদের বক্সারদের উন্নয়নে সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।

তুহিন স্যার যেভাবে বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন, উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন- এ সবের ফল হচ্ছে আমার বিএসপিএ অ্যাওয়ার্ড জয়। স্যার পাশে না থাকলে, আমার ওপর আস্থা-বিশ্বাস না রাখলে আমি কখনোই এশিয়ান গেমসে এত ভালো ফল করতে পারতাম না। আমার সাফল্যের অন্যতম কারিগর হলেন তুহিন স্যার।’ মর্যাদার বিএসপিএ অ্যাওয়ার্ড তার ৬০ বছর পূর্তি করল এবার। ১৯৬৪ সাল অর্থাৎ দেশ স্বাধীনেরও আগ থেকে এই পুরস্কারের প্রবর্তন। তবে গেল ছয় দশকে মাত্র ১০ জন বক্সারের হাতে তুলে দেন এই সম্মানজনক স্বীকৃতি। মো. সেলিমকে নিয়ে সেই সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়াল ১১-তে। ১৯৯৩ সালে সবশেষ বক্সার হিসেবে মোজাম্মেল হক এই পুরস্কার জেতেন। সেলিমকে এই পুরস্কার জিততে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৩০ বছর। সেলিম বলেন, ‘আমাদের দেশে মেধাবী বক্সারের অভাব নেই। কিন্তু অনেক বছর আমরা এই সেক্টরে অবহেলিত ছিলাম। তাই তো আমাদের পূর্বসূরি অনেক মেধাবী বক্সার তাদের যোগ্য স্বীকৃতি পাননি।

আমি অত্যন্ত ভাগ্যবান যে, তুহিন স্যারের সময় নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ পেয়েছি। রাজশাহী থেকে আজ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেকে তুলে ধরার সুযোগ পেয়েছি। আমার এমন সাফল্যের জন্য প্রথমে পিতা-মাতাকে ধন্যবাদ জানাব। তারা আমাকে এই পৃথিবীর আলো না দেখালে আমি এমন সম্মানের ভাগিদার কখনোই হতে পারতাম না। এরপর আমার সহধর্মিণীর কথা বলব। পেশাদার জীবনে কর্মব্যস্ততায় স্ত্রীকে সেভাবে সময় দিতে পারি না। তারপরও আমার প্রতি তার কোনো অভিযোগ-অনুযোগ নেই। আমার স্ত্রীর অনুপ্রেরণাতে আমি সামনে এগিয়ে যাওয়ার আরো বেশি উৎসাহ-প্রেরণা পাই। এছাড়া আমার বাহিনীর (সেনাবাহিনীর) স্যারদের সহযোগিতার কথা বলব। আমার বাহিনীর স্যারেরা আমাকে যেভাবে সাপোর্ট করেন সেটা মুখে বলে প্রকাশের নয়।’ এক দশকের বেশি সময় ধরে বক্সিংয়ে পদচারণা হলেও সেলিমের বক্সার জীবনের সাফল্যের ফুল ফুটতে শুরু করে করোনার পর থেকে। স্পষ্ট করে বললে ২০২১ সালে। বাংলাদেশ গেমসে স্বর্ণ পদক জেতার মধ্য দিয়ে। পরের বছর জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথমবারের মতো স্বর্ণ পদক গলায় পরেন সেলিম। এরপর বিশ্ব মিলিটারি গেমস, বার্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমসে ভালো খেলে এশিয়ান গেমসেও সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখেন। এশিয়ান গেমসে অল্পের জন্য পদক হাতছাড়া করেন এ বক্সার। সেমিফাইনালে পা রাখলেই ৩৭ বছর পর (মোশাররফ হোসেন, ১৯৮৬ সিওল এশিয়ান গেমস) বক্সিং থেকে দ্বিতীয়বার ব্রোঞ্জ জেতার কীর্তির হাতছানি ছিল। কিন্তু জাপানের প্রতিযোগীর কাছে লড়াই করে হেরে পঞ্চম স্থানে থেকে এশিয়াড মিশন শেষ করেন সেলিম। তবে বাংলাদেশের ব্যর্থ এশিয়াড মিশনে একমাত্র সেলিমের চোখধাঁধানো পারফরম্যান্স আবারো নতুন করে বক্সিংকে সামনে নিয়ে আসে। সেই আলোচনার চূড়ান্ত ফল বিএসপিএ অ্যাওয়ার্ড জেতার মধ্য দিয়ে ইতি টানলেন সেলিম। তবে এই ইতি টেনেই ক্ষান্ত দিতে চান না।

সেলিমের চোখ এখন অলিম্পিকের মতো বড় মঞ্চে। সামনে প্যারিস অলিম্পিক। সেখানে ওয়াইল্ড কার্ড নিয়ে হলেও অংশ নিতে চান। অলিম্পিক থেকে পদক জিতে দেশ ও দশের মুখ উজ্জ্বল করতে চান বক্সার সেলিম।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত