ঢাকা ১১ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সুমনা দেশকে দিতে চান আরো

সুমনা দেশকে দিতে চান আরো

অনেকটা অভিমানেই ২০১৮ সালে দেশ ছেড়ে অস্ট্রেলিয়ায় চলে যান বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার জান্নাতুল ফেরদৌস সুমনা। ২০১৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি ক্রিকেট ক্লাব এনএসডব্লিউ উইমেন্স প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের ফাস্ট গ্রেডের দলটিতে খেলার সুযোগটি লুফে নেন। এর বাইরে আরো তিনটি ক্লাবে খেলার সুযোগ হয়েছে সুমনার। অস্ট্রেলিয়ায় লেখাপড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ক্লাবে খেলে বেড়ানো সুমনা দেশের জার্সি আবার গায়ে জড়িয়ে মাঠ মাতানোর স্বপ্ন বুকে লালন করে প্রায় ৫ বছর পর সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন।

প্রিমিয়ার লিগে রূপালী ব্যাংকের হয়ে ২২ গজে লড়াইয়ের অপেক্ষায় আছেন তিনি। এই ক্রিকেটারের স্বপ্ন একটাই- আবার জাতীয় দলে ফেরা। অস্ট্রেলিয়াতে সুমনার প্রথম মৌসুম কেটেছিল সিডনি ক্রিকেট ক্লাবে। তার ছোঁয়াতেই ক্লাবটি শিরোপা খরা কাটিয়েছে নিউ সাউথ ওয়েলস প্রিমিয়ার লিগের ওয়ানডে প্রতিযোগিতা জিতে। সিডনিকে চ্যাম্পিয়ন করেই ঠিকানা বদলে ফেলেন তিনি। ২০২০-২১ মৌসুম ব্যাংকসটাউন ক্লাবের হয়ে মাঠ মাতিয়েছেন। এই ক্লাবের হয়ে ব্যাট-বলে আলো ছড়িয়ে বর্ষসেরা ক্রিকেটার হন সুমনা। ১২ ম্যাচে ২০ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ব্যাটিংয়েও দলের তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৯৬ রান আসে তার ব্যাট থেকে। পরের মৌসুমেও এই ক্লাবের হয়ে খেললেও তারপর ঠিকানা বদলে ফেলেন তিনি। গত মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ান ক্যাপিটাল টেরিটোরি দলের হয়ে অভিষেক হয়ে যায় সুমনার। এত কিছুর পরও তার লক্ষ্য একটাই- ফের বাংলাদেশের জার্সি গায়ে জড়ানো।

আলাপকালে সুমনা সেই গল্পই শোনালেন- ‘দেখেন আমার বয়স এখন কতই বা হয়েছে। আমি ২০১৮ সালে দেশ ছাড়লেও আমার ভাবনাতে সব সময়ই ছিল জাতীয় দল। আমি কেবল সুযোগের অপেক্ষাতে ছিলাম। ওখানে নিয়মিত খেলেছি। এবার রূপালী ব্যাংক আমাকে সুযোগ দিয়েছে। আশা করি এখানে ভালো করে জাতীয় দলে ফিরতে পারব। সবকিছুর ঊর্ধ্বে জাতীয় দলে খেলা। দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা সব সময়ই বিশেষ কিছু, আমি ওই দিনটির অপেক্ষাতে প্রহর গুনছি।’

২০১৬ সালের আগস্টে আয়ারল্যান্ড সফরে প্রথমবার জাতীয় দলে সুযোগ হয় সুমনার। তবে অভিষেকের জন্য অপেক্ষা করতে প্রায় ২ বছর। ২০১৮ সালের মার্চে ২০ বছর বয়সী অলরাউন্ডার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পা রাখেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পচেফস্ট্রুমে। ওই সফরে দুটি ওয়ানডে ও একটি টি-টোয়েন্টি খেলেই থেমে যায় সুমনার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার! স্পিনিং অলরাউন্ডার হলেও তিন ম্যাচের কোনোটিতেই বল হাতে দেখা যায়নি তাকে। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে বেশ কয়েকটি মৌসুম খেলে গত মাসে দেশে ফেরেন সুমনা। সামনেই এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের মতো আসর। এর আগে চলতি মাসেই শুরু হবে মেয়েদের প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ। আসন্ন এই লিগকে ফেরার মঞ্চ বানাতে চান সুমনা। রূপালী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব থেকে প্রিমিয়ার লিগ খেলার প্রস্তাব পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা লুফে নেন স্পিনিং এই অলরাউন্ডার। এমন সুযোগের অপেক্ষাতেই দীর্ঘ রজনী পার করে যাচ্ছিলেন তিনি। ফলে সুযোগটা পাওয়া মাত্রই ছুটে আসেন দেশে।

তিনি বলেন, ‘হুট করে না। পরিকল্পনা করেই আসা। একেবারেই যে চলে এসেছি সেটাও না। পরিস্থিতি হয়তো আবার ফেরত নিলেও নিতে পারে। দেখা যাক ..। বাংলাদেশে খেলেতে আসলাম। খেলতে থাকি। দেখি কতদিন থাকতে পারি। পারফরম্যান্সে ওপর নির্ভর করবে সবকিছু। আমি চেষ্টা করব প্রিমিয়ার লিগে এমন কিছু করতে, যাতে নির্বাচকদের ফোকাস আমার ওপর থাকে।’ অল্প সময়ের জন্য দেশের হয়ে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন সুমনা। তাতে মন ভরেনি তার। সুমনা মনে করেন দেশকে এখনো অনেক কিছু দেওয়ার বাকি, ‘অনেক দিন দেশের বাইরে খেলেছি, অফার পেয়ে ভাবলাম, দেশে আসি। দেশে খেলব। আমার তো এখনো অনেক কিছু দেওয়ার আছে। বিদেশে খেলে আমার অভিজ্ঞতাও এখন অনেক হয়েছে। আমি আশা করি এই অভিজ্ঞতা এবার কাজে লাগাতে পারবো। আমি বিশ্বাস করি, দেশকে আমার এখনো অনেক কিছু দেওয়ার আছে। সামনের প্রিমিয়ার লিগ আছে ওখানে খেলতে চাই। সামনে এশিয়া কাপ আছে বিশ্বকাপ আছে। সুযোগ পেলে তো দেশের হয়ে খেলতে চাই। দীর্ঘদিন ধরে এই অপেক্ষাতেই আছি।’

দেশে এসে অনুশীলন করার পাশাপাশি সুমনা এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ও ভারতের নারী দলের মধ্যকার পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ধারাভাষ্যকার হিসেবে কাজ করছেন। ধারাভাষ্য দেওয়ার অভিজ্ঞতা না থাকলেও সময়টাকে দারুণ উপভোগ করছেন বলে জানালেন সুমনা, ‘ধারভাষ্যকার হিসেবে তো অভিজ্ঞতা খুব একটা নেই। তারপরও সুযোগটা যখন পেলাম, লুফে নিলাম। ভালোই লাগছে। আমি তো একেবারেই নতুন, শেখার অনেক কিছুই আছে। বাংলাদেশে এই সেক্টরে খুব বেশি মেয়ে নেই। তবে আস্তে আস্তে অনেকের আগ্রহ বাড়ছে। সত্যি কথা আমার এই সেক্টরে ভবিষ্যতে নিয়মিত হওয়ার ইচ্ছে আছে। তবে এই মুহূর্তে আমার স্বপ্ন কেবল একটাই, জাতীয় দলে ফেরার লড়াই করা।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত