ঐতিহ্যবাহী দল হলেও মোহামেডানের সোনালি দিন অনেক দিন ধরেই অতীত। তবে হারানো সেই দিন ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে যাচ্ছে ক্লাবটি। অবশেষে সুদিন ফিরতে শুরু করেছে সাদা কালোদের। স্বল্প বাজেটের দল গড়েও প্রিমিয়ার লিগে এখনো অপরাজিত মোহামেডান। মৌসুমের প্রথম টুর্নামেন্ট স্বাধীনতা কাপে রানার্স আপ আর তিন দিন আগেই আরেক টুর্নামেন্ট ফেডারেশন কাপের ফাইনালে উঠেছে মোহামেডান। ফুটবল দলের এমন পারফরম্যান্সে বেশ তৃপ্ত ক্লাব সভাপতি, ‘আমি অত্যন্ত সন্তুষ্ট ফুটবল দলের পারফরম্যান্সে। দুই মৌসুম আগের চেয়ে আমাদের অবস্থান এখন অনেক ভালো।’ ক্লাবের সভাপতি সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আব্দুল মুবীন গতকাল বৃহস্পতিবার অনেক দিন পর ক্লাবে এসেছিলেন। শারীরিক অসুস্থতা কাটিয়ে আজ ক্লাব প্রাঙ্গণে ফুটবলার-কোচিং স্টাফ ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। গত বছর মোহামেডান ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়নও হয়েছে। এবারও রয়েছে শিরোপার লড়াইয়ে। ফুটবল দলের এই সফলতার পেছনে মোহামেডানের সভাপতি অবদান দিলেন, ‘মাঠে খেলে খেলোয়াড়রা। এদের সাথে কোচিং স্টাফ অবশ্যই ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান আলমগীর সাহেব (ক্লাবের পরিচালক) ও তার কমিটির অবদান রয়েছে এই পারফরম্যান্সের পেছনে।’ ১ জুন ফুটবল দলবদলের নতুন তারিখ ঘোষণা করেছে ফুটবল ফেডারেশন। চলতি মৌসুম চলমান থাকলেও আগামী মৌসুমের ঘর গোছানোর কাজ শুরু করেছে কিছু ক্লাব। মোহামেডানের ফুটবলের এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পরবর্তী মৌসুমের পরিকল্পনা সম্পর্কে ক্লাবের অন্যতম পরিচালক ও ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘আমাদের দলের অনেক খেলোয়াড় অন্য ক্লাব থেকে বেশি দামে প্রস্তাব পেলেও মোহামেডানকে ভালোবেসে খেলছে। আমরা তাদের সেই সম্মান ও মর্যাদা দিয়ে থাকি। এরপরও দল গঠন ও ক্লাব পরিচালনায় অর্থ প্রয়োজন। বিশেষ করে ফুটবলে সভাপতি মহোদয় (সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আব্দুল মুবীন) ও আমিই মূলত দিয়ে থাকি। আমরা যা কমিটমেন্ট করি তা করে থাকি। আমরা এখনই এমন কিছু বলব না যা করতে পারব না। আমরা অবশ্যই ভালো দল গঠন করতে চাই। আজ সভাপতি, কোচ ও ম্যানেজারের সঙ্গে ফুটবল দল নিয়ে আলোচনা করব বিশেষভাবে।’
গত বছর ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে মোহামেডান ক্রীড়াঙ্গনে নতুন আলোড়ন তুলেছিল। এবারও ফাইনালে উঠেছে সাদা-কালোরা। গত বছর চ্যাম্পিয়নের পর বোনাস পেয়েছিলেন ফুটবলাররা। আজ ক্লাব সভাপতি এসেছেন উজ্জ্বীবিত করতে। ফাইনালে আগে এমন কোনো ঘোষণা আছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান বলেন, ‘চ্যাম্পিয়ন হলে অবশ্যই পুরস্কার থাকবে। এই ঘোষণা ক্লাব সভাপতি দিলেই সুন্দর হয়। তবে আমাদের ঘোষণা একটু ট্যাকনিক্যাল থাকবে। সবার জন্য সমান নয়।’ গত বছর ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়ন দলে গোলরক্ষক, গোলদাতা, ম্যাচে খেলা ফুটবলার এ রকম ক্রাইটেরিয়ায় বোনাস প্রদান করেছিল মোহামেডান। চীনের দুঃখ হোয়াংহো নদী, আর মোহামেডান ফুটবল দলের অনুশীলন মাঠ! ক্রিকেট মিরপুর ও হকি মওলানা ভাসানীতে অনুশীলন করলেও ফুটবল দলকে ছুটতে হয় একেক সময় একক মাঠে। ক্লাব সভাপতি আসার আগে সাবেক ফুটবলাররা অনুশীলন মাঠ নিয়ে আলোচনা করছিলেন। অনেক দিন পর সভাপতি আসায় উপস্থিত সাংবাদিকরাও মাঠ সংকটের বিষয় উথাপন করলে সভাপতি বলেন, ‘আমাদের প্রতি বছর ফুটবল, ক্রিকেট দল গঠন করতে হয়। দল গঠনে ব্যয় নির্বাহ করে মাঠ তৈরিতে সময় ও মনোযোগ দেয়া সম্ভব হয় না। আমাদের একটা জায়গা রয়েছে সেখানে দালিলিক সমস্যা রয়েছে।’ দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী ও জনপ্রিয় ক্লাব মোহামেডান। সেই ক্লাবের রয়েছে আর্থিক সংকট ও নানা সীমাবদ্ধতা। ক্লাবে নিজস্ব আয়ের উৎস ও নির্দিষ্ট খেলায় নির্দিষ্ট স্পন্সর নিশ্চিত করা যায় কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে ক্লাব সভাপতি বলেন, ‘এ রকম পরিকল্পনা রয়েছে তবে এখনই নয়।’ সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আব্দুল মুবীন ২০২১ সালে মোহামেডান ক্লাবের সভাপতি নির্বাচিত হন। ক্যাসিনো কান্ড ও নানা ঘটনায় মোহামেডান ক্লাব ছিল নেতিবাচক আলোচনায়। দুই বছরের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী ক্লাবের ভাবমূর্তি অনেকটাই ফিরেছে তার নেতৃত্বে। মোহামেডান চলতি মৌসুমে ক্রিকেটে রানার্স আপ। ফুটবলে গত বছর ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়ন। এবার স্বাধীনতা কাপের রানার্স আপ ও ফেডারেশন কাপের আবার ফাইনালে। লিগেও রানার্স আপ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। হকি লিগেও শিরোপার দৌড়ে ছিল সাদা-কালোরা। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বি আবাহনীর বিপক্ষে অঘোষিত ফাইনালে ৩-২ গোলে এগিয়েও ছিল। পরে কার্ড ঘটনাকে কেন্দ্র করে মোহামেডান প্রতিবাদ জানিয়ে মাঠ ছেড়েছে।