অপ্রতিরোধ্য কিংসের পঞ্চম শিরোপা জয়

প্রকাশ : ১২ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

টানা চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ফুটবলের শিরোপা জিতে আগের মৌসুমেই রেকর্ড গড়েছিল তারা। পঞ্চম শিরোপা জিতে এবার সেই রেকর্ড আরও সমৃদ্ধ করল বসুন্ধরা কিংস। মোহামেডানের বিপক্ষে ম্যাচটি ঘিরে উত্তেজনা সৃষ্টি হলেও শেষ পর্যন্ত জয়ের হাসি হাসল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরাই। রোমাঞ্চকর ম্যাচে সাদা কালোদের হারিয়ে লিগে আধিপত্য ধরে রাখল কিংস। গতকাল শনিবার ময়মনসিংহের রফিক উদ্দিন ভূইয়া স্টেডিয়ামে মোহামেডানকে ২-১ গোলে হারিয়েছে তারা। এই জয়ে তিন ম্যাচ হাতে রেখেই শিরোপা নিশ্চিত হলো কিংসদের। বাকি তিন ম্যাচে জিতে ট্রফি উৎসব করবে ব্রুসনের দল। এই জয়ে ১৫ ম্যাচে ৪০ পয়েন্ট নিয়ে সবার নাগালের বাইরে চলে গেল কিংস। সমান ম্যাচে ২৮ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকা মোহামেডানের সামনে খোলা থাকল লিগে রানার্সআপ হওয়ার পথ। আর মোহামেডানের চেয়ে ২ পয়েন্ট কম নিয়ে তিনে আছে আবাহনী। প্রথম লেগে মোহামেডানের বিপক্ষে ১-০ গোলে হেরেছিল কিংস। চলতি লিগে সেটাই এখন পর্যন্ত তাদের একমাত্র হার। হারের মধুর প্রতিশোধও কিংস নিল শিরোপা উৎসব নিশ্চিত করার পথে। ২০১৮-১৯ মৌসুমে প্রথম লিগের মুকুট জয়ের পর থেকে এ নিয়ে টানা পাঁচবার সেরা হলো কিংস। মাঝে ২০১৯-২০ মৌসুমের লিগ করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ছয় রাউন্ড খেলার পর পরিত্যক্ত হয়েছিল। এবার বসুন্ধরা কিংসকে যা একটু চাপে রেখেছিল মোহামেডানই। কিন্তু ফিরতি লেগের দেখায় দলটি রক্ষণে মনোযোগ দেয় শুরু থেকে। তাতে কিংস আরও উপরে উঠে খেলার সুযোগ পেয়ে যায়। পঞ্চম মিনিটে রিমনের ক্রসে বক্সে ডিফেন্ডারদের ফাঁক গলে বেরিয়ে গেলেও বলের নাগাল পাননি দোরিয়েলতন গোমেস নাসিমেন্তো। ত্রয়োদশ মিনিটে এই ব্রাজিলিয়ানের শট উড়ে যায় ক্রসবারের উপর দিয়ে। চাপ ধরে রেখে অষ্টাদশ মিনিটে মিলিত প্রচেষ্টায় এগিয়ে যায় কিংস। শেখ মোরসালিনের ছোট পাস ধরে মিগেল ফিগেইরা দামাশেনো বল বাড়ান বক্সে। দুই ডিফেন্ডারের ফাঁক গলে বেরিয়ে গিয়ে কোনাকুনি শটে লক্ষ্যভেদ করেন দোরিয়েলতন। একটু পরই মোজাফ্ফরভের দূরপাল্লার ফ্রি কিক উড়ে যায় কিংসের ক্রসবারের উপর দিয়ে। ৩৯তম মিনিটে উজবেকিস্তানের এই মিডফিল্ডারের শট বাঁক খেয়ে পোস্টে ঢোকার আগেই ফেরান মেহেদী হাসান শ্রাবণ। মোহামেডানেরও সমতায় ফেরা হয়নি। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ব্যবধান হয় দ্বিগুণ। ডান দিক থেকে মোরসালিনের কর্নারে দূরের পোস্ট থেকে হেডে লক্ষ্যভেদ করেন দোরিয়েলতন। ব্রাজিলিয়ান এই ফরোয়ার্ড বক্সে ছিলেন বিনা পাহারায়! ৬০তম মিনিটে রবসন দি সিলভা রবিনিয়োর ফ্রি কিক আটকান মোহামেডান গোলরক্ষক সুজন হোসেন। পাঁচ মিনিট পর ম্যাচে ফেরে সাদাকালো জার্সিধারীরা। শাহরিয়ান ইমনকে বল বাড়িয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন মিনহাজ রাকিব; ফিরতি পাস ধরে নিখুঁত শটে খুঁজে নেন জাল। এই গোলে আত্মবিশ্বাসে আরও উজ্জীবিত হয়ে ওঠে মোহামেডান। শাণাতে থাকে আক্রমণ। ৮২তম মিনিটে উত্তাপ ছড়ায় ভিন্ন কারণে। রবিনিয়োর ট্যাকলের পর বলের নিয়ন্ত্রণ নিতে বিশ্বনাথ ঘোষের সঙ্গে লড়াইয়ে পড়ে যান মোজাফ্ফরভ। পড়ে থাকা উজবেক ফরোয়ার্ডের হাঁটু পা দিয়ে মাড়িয়ে দেন বিশ্বনাথ, মোজাফ্ফরভ উঠে দাঁড়িয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন বিশ্বনাথকে। রেফারি মোজাফ্ফরভকে হলুদ কার্ড দেন। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে বক্সের ঠিক উপর থেকে ইমানুয়েল সানডের নিচু জোরালশট শ্রাবণ ঝাঁপিয়ে ফেরালে হতাশায় মাথায় হাত ওঠে মোহামেডানের।

একটু পরই বাজে শেষের বাঁশি। গ্যালারিতে থাকা কিংস সমর্থকেরা লাল ধোয়ার কুণ্ডুলি উড়িয়ে মেতে ওঠে আনন্দে। মুন্সীগঞ্জের শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লে. মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে চট্টগ্রাম আবাহনী ও শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের ম্যাচটি হয়েছে গোলশূন্য ড্র। আর রাজশাহীর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে এগিয়ে গিয়েও ব্রাদার্স ইউনিয়নের বিপক্ষে ১-১ ড্র করেছে ফর্টিস একাডেমি। ৩৯তম মিনিটে ওমার সারের গোলে এগিয়ে যায় ফর্টিস; ৭৩তম মিনিটে ব্রাদার্সকে সমতায় ফেরান নয়ন হোসেন। ১৫ রাউন্ড শেষে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম স্থানে আছে চট্টগ্রাম আবাহনী। তাদের চেয়ে ১ পয়েন্ট কম নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে ফর্টিস; ২ পয়েন্ট কম নিয়ে সপ্তম স্থানে শেখ জামাল। ৭ পয়েন্ট নিয়ে তলানিতে আছে ব্রাদার্স।