তাসকিন কি আদৌ খেলতে পারবেন?

প্রকাশ : ১৫ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

বিশ্বকাপ স্কোয়াডে তো তাসকিন আহমেদ জায়গা পেলেন, কিন্তু কোনো ম্যাচে আদৌ কি খেলতে পারবেন- বড় প্রশ্ন এখন এটিই। স্বয়ং প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেনের কণ্ঠেই অনিশ্চয়তার সুর। বিশ্বকাপের ঠিক আগে এমন চোটের জন্য দুর্ভাগ্যকেই দায় দিলেন তিনি। তবে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টানা চার ম্যাচে তাসকিনকে না খেলালে হয়তো এই চোট এড়ানো যেত, সেই আক্ষেপও আছে প্রধান নির্বাচকের।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সদ্য সমাপ্ত সিরিজের চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে ফিল্ডিংয়ের সময় চোট পান তাসকিন। শেষ ম্যাচে খেলা হয়নি তার। ওই ম্যাচ চলাকালেই স্ক্যান করানো হয় জাতীয় দলের গতিতারকার। সেই রিপোর্টের ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।

দল ঘোষণার সময় মঙ্গলবার প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন জানালেন, বিশ্বকাপ দলে রাখা হলেও এখনো ফিট নন তাসকিন। ‘(তাসকিনের ব্যাপারে) চিকিৎসা বিভাগ হয়তো ভালো জানাতে পারবে। আমাদের যতটুকু তথ্য জানা আছে, ওই তথ্যের আলোকে আমরা আশা রাখছি, তিনি হয়তো বিশ্বকাপ চলার কোনো একটা পর্যায়ে সুস্থ হয়ে যাবেন। সেই আলোকেই তাকে দলভুক্ত করা হয়েছে।’ এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজেও খেলার সম্ভাবনা নেই তাসকিনের। এ বিষয়ে লিপু বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সিরিজের ক্ষেত্রে বলতে পারি, এখন পর্যন্ত চিকিৎসা বিভাগ থেকে যা বলা হয়েছে, আমার মনে হয় না, তাসকিন সেখানে থাকতে পারবে। তবে দলের সঙ্গে রিজার্ভ হিসেবে যারা যাচ্ছে, তারা সেখানে খেলার জন্য প্রস্তুত থাকবেন।’

প্রধান নির্বাচক আরও জানিয়েছেন, শেষ পর্যন্ত যদি তাসকিন সুস্থ হতে না পারেন, তাহলে বিকল্প পথে হাঁটবে দল। যে জায়গায় সুযোগ পেতে পারেন অতিরিক্ত হিসেবে দলের ভ্রমণসঙ্গী হাসান মাহমুদ। আইসিসির আগের নিয়মে অবশ্য এই সুযোগটি পেত না বাংলাদেশ। এবারের আসরে দল বাছাই ও বদলির ক্ষেত্রে নিয়মে কিছুটা পরিবর্তন এনেছে আইসিসি। এবার স্কোয়াডে চোটাক্রান্ত একজন ক্রিকেটারকে রাখতে পারবে দলগুলো। আগের নিয়মে এই সুযোগ ছিল না। শুধুমাত্র দল ঘোষণার পর চোট পেলেই বদলি ক্রিকেটার নেয়ার সুযোগ দিত আইসিসি। নতুন নিয়মের সুযোগে তাসকিনকে বিশ্বকাপ দলে রাখলেও প্রশ্নের জায়গা আসলে শেষ হচ্ছে না। যাকে বিশ্বকাপে পাওয়া নিয়েই রয়েছে শঙ্কা, তার কাঁধেই কেনো সহ-অধিনায়কত্বের ভার!

এই প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচক অবশ্য বল ঠেলে দিয়েছেন বিসিবির কোর্টে। ‘তাসকিন আরেক প্রজন্মের উদীয়মান একজন ক্রিকেটার। একটা বিভাগকে (পেস) সে নেতৃত্ব দিচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় দলের হয়ে খেলছে বিভিন্ন সংস্করণে। সেজন্য হয়তো তাকে যোগ্য দাবিদার মনে করেছে বিসিবি।’ তাসকিনের চোটের ক্ষেত্রে অবধারিতভাবেই চলে আসে তাকে টানা খেলানোর প্রসঙ্গ। চোটের পুরোনো ইতিহাস মাথায় রেখে কাঁধের চোটের পুনর্বাসন চলায় আইপিএলের নিলাম থেকেই সরিয়ে নেয়া হয় তাসকিনের নাম। কিন্তু দেশে রাখা হলেও বিশ্রাম তেমন পাননি তিনি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির পর তিনি নিজ থেকেই বিরতি চেয়ে নেন টেস্ট ক্রিকেট থেকে। সাদা পোশাকের ওই দুই ম্যাচ না খেললেও তখন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে আবাহনী লিমিটেডের হয়ে ব্যস্ত সময় কাটে তার। এরপর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও খেলানো টানা চার ম্যাচ। চট্টগ্রামে সিরিজ জয় নিশ্চিত করার পরও মিরপুরে চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে বিশ্রাম দেয়া হয়নি তাসকিনকে। আর ওই ম্যাচেই ফিল্ডিংয়ের সময় পান চোট। তাই প্রধান নির্বাচকের কাছে প্রশ্ন রাখা হলো, তাসকিনের চোটপ্রবণতা মাথায় রেখে আরেকটু সতর্ক থাকা যেত কি না?

এই প্রসঙ্গে কিছুটা অসহায়ই শোনাল গাজী আশরাফ হোসেনকে। ‘একটা জিনিস ঘটার পরে কিন্তু অনেক কিছুই মনে হয়। আমরা নিজেরাও আক্ষেপ করেছি, হয়তো (তাসকিনের চোট) এড়ানো যেত। সত্যি বলতে, আমাদের তরফ থেকে আমরা সুনির্দিষ্টভাবে কোনো পরামর্শ দিইনি।’ টিম ম্যানেজমেন্টকে দোষারোপ না করে ভাগ্যের ওপর দায় চাপালেন প্রধান নির্বাচক। ‘শরিফুলের সঙ্গে কথা বলে আমরা তাকে শেষ দুই ম্যাচ থেকে সরিয়ে নিয়েছিলাম। তবে চতুর্থ ম্যাচের আগে সেভাবে কোনো... আসলে টিম ম্যানেজমেন্টকে দোষ দেয়া ঠিক হবে না। এক্ষেত্রে আমরা সুনির্দিষ্ট কিছু তাদেরকে বলিনি। তবে এটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে হয়ে গেল। হয়তো এড়ানো যেত। সবই ভাগ্যের লিখন।’ বিশ্বকাপের আগে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজ খেলতে বুধবার রাতে দেশ ছাড়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশের। আগামী ২১, ২৩ ও ২৫ মে হিউস্টনে হবে ম্যাচ তিনটি। এরপর ৭ জুন শুরু বাংলাদেশের বিশ্বকাপ অভিযান। প্রথম ম্যাচে প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা।