বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সহ-অধিনায়ক তাসকিন

অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের স্কোয়াড ঘোষণা করা হয়েছে। চোট নিয়ে শঙ্কা থাকলেও যার জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করা হয়েছে, সেই তাসকিন আহমেদও স্কোয়াডে জায়গা পেয়েছেন। শুধু জায়গা পাওয়াই নয়, চোটাক্রান্ত এই পেসারকে দলের সহ-অধিনায়কের দায়িত্বও দেয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু।

তাসকিনকে সহ-অধিনায়ক করার একটা ব্যাখ্যাও দিয়েছেন প্রধান নির্বাচক। ‘তিনি আরেক প্রজন্মের উদীয়মান একজন খেলোয়াড়, আরেকটি বিভাগের নেতৃত্ব দিচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় দলে খেলছে বিভিন্ন সংস্করণে। সে জন্য তাকেই হয়তো প্রত্যাশিত প্রার্থী মনে হয়েছে।’ সাম্প্রতিক সময়ে অফফর্মে থাকলেও লিটন দাসের ওপর আস্থা রেখেছে বোর্ড। তবে বিপিএলে আলো ছড়িয়ে সদ্য জিম্বাবুয়ে সিরিজের দলে ফেরা মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে স্কোয়াডে রাখা হয়নি। ১৫ সদস্যের স্কোয়াডের সঙ্গে ট্রাভেলিং রিজার্ভ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিমানে উঠবেন পেসার হাসান মাহমুদ ও বাঁহাতি ব্যাটার আফিফ হোসেন। মেহেদী হাসান মিরাজের দলে থাকা নিয়ে গুঞ্জন শোনা গেলেও তা শেষ পর্যন্ত সত্যি হয়নি। ঘোষিত স্কোযাডে চমক বলতে রয়েছেন চার স্পিনার। টিকে গেছেন তানভির ইসলাম। এছাড়া সাকিব আল হাসানের সঙ্গে আছেন শেখ মেহেদী হাসান ও রিশাদ হোসেন। পাঁচ পেসারের কথা চিন্তা করলেও চার পেসার নিয়েই যাচ্ছে বাংলাদেশ। তাসকিনের চোটের কারণে বিশ্বকাপের স্কোয়াডের সঙ্গে একজন বাড়তি পেসার হিসেবে হাসান মাহমুদকে নিয়ে যাচ্ছে বিসিবি। আইসিসির বেঁধে দেয়া আগামী ২৫ মে’র মধ্যে তাসকিন সুস্থ না হলে বিশ্বকাপের স্কোয়াডের সঙ্গে যোগ দিবেন তিনি।

এছাড়া বিশ্বকাপের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তিন ম্যাচের প্রস্তুতিমূলক সিরিজে খেলবেন হাসান। তাসকিনের চোট ছাড়া বিশ্বকাপের স্কোয়াডে কৌতূহলের জায়গা ছিল কেবল আর একটিই। সেখানে নির্বাচক কমিটি ও টিম ম্যানেজমেন্টের আস্থা পেয়েছেন পেসার তানজিম হাসান। দলে ঠাঁই পাননি পেস বোলিং অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচক জানালেন, আগে যে দল আইসিসিতে তারা পাঠিয়েছিলেন, সেখান থেকে পরিবর্তন এই একটিই। সাইফের জায়গাটি নিয়েছেন তানজিম।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সদ্য সমাপ্ত সিরিজে পারফরম্যান্স খুব ভালো ছিল না দুজনের কারও। দুই ম্যাচ খেলে তানজিমের উইকেট ছিল একটি। এক ম্যাচে চার ওভারে ২৬ রান দিলেও পরের ম্যাচে চার ওভারে তিনি দিয়েছেন ৪২ রান। সাইফ চার ম্যাচ খেলে উইকেট শিকার করেছেন আটটি, যৌথভাবে যা সিরিজের সর্বোচ্চ। কিন্তু ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন ৯.৩১। বিশেষ করে শেষ দুই ম্যাচে তিনি রান দিয়েছেন চার ওভারে ৪২ ও ৫৫। এটিই তার বিপক্ষে গেছে বলে আভাস পাওয়া গেল প্রধান নির্বাচকের কথায়। ম্যাচের বিশেষ যে পরিস্থিতিতে তার কাছে যেটুকু চাওয়া ছিল, সাইফ তা পূরণ করতে পারেননি বলেই মনে করেন নির্বাচকরা। তাসকিন চোটে পড়েন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে ফিল্ডিংয়ের সময়। তার স্ক্যান রিপোর্ট পাঠানো হয় যুক্তরাষ্ট্রে। তার চোটের এখনকার অবস্থা বিস্তারিত জানাননি প্রধান নির্বাচক। মেডিকেল বিভাগ থেকে তা বিস্তারিত জানানো হবে। তবে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজে টানা চারটি ম্যাচে তাকে না খেলালেই যে ভালো হতো, সেটা মেনে নিয়েছেন তিনি। প্রধান নির্বাচক এটিকে বলছেন, ‘ভাগ্যের লিখন।’

তবে বিশ্বকাপে তাঁকে সুস্থ অবস্থায় পাওয়ার আশা নির্বাচকদের, ‘যতটুকু তথ্য আছে, সেটা হলো বিশ্বকাপ চলাকালীন সময়ে সে সুস্থ হয়ে উঠবে। আপনারা জানেন যে এবারের নিয়ম হলো একজন চোটে থাকা ক্রিকেটারকেও দলে রেখে টুর্নামেন্টে ঢুকতে পারবেন এবং উনি যদি ভালো হয়ে ওঠেন, তাহলে ভালো। আর না হলে পরিবর্তন করা যাবে। তবে তাসকিন যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সিরিজ খেলতে পারছে না।’ আইপিএল থেকে দারুণ ছন্দে নিয়ে ফেরা মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে রয়েছেন আরেক পেসার শরিফুল ইসলাম। বিশ্বকাপ দলে পঞ্চম পেসারের প্রয়োজন পড়লে কাজ চালাবেন সৌম্য সরকার। পেসার একজন বাড়তি না নিয়ে স্পিনার তানভির ইসলামকে ১৫ জনের দলে রেখেছেন নির্বাচকরা। সেন্ট ভিনসেন্টের উইকেটে স্পিন ধরবে বলেই ধারণা করছেন তারা। বিশেষ করে, বিশ্বকাপে সময় যত গড়াবে, উইকেটে স্পিনারদের সহায়তা ততই বাড়তে থাকবে বলে মনে করছেন তারা। টানা ব্যর্থতার পরও টিকে গেছেন লিটন কুমার দাস। বিকল্প উইকেটরক্ষকের ভাবনাতেই দলে রেখেছেন নির্বাচকরা। ওপেনিং পজিশনে তার সঙ্গে রয়েছেন সৌম্য সরকার ও তরুণ তানজিদ হাসান তামিম।

মূল উইকেটরক্ষক-ব্যাটার স্কোয়াডে নেয়া হয়েছে জাকের আলীকে। ছন্দে থাকা তাওহিদ হৃদয় ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ রয়েছেন স্বাভাবিকভাবেই। আগামী ৭ জুন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ডালাসে শুরু বাংলাদেশের বিশ্বকাপ। ১০ জুন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচ নিউ ইয়র্কে। এরপর সেন্ট ভিনসেন্টে লড়াই নেদারল্যান্ডস ও নেপালের সঙ্গে। বিশ্বকাপের আগে যুক্তরাষ্ট্রে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ হবে ২১, ২৩ ও ২৫ মে। বিশ্বকাপের আগে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলার কথা বাংলাদেশ দলের। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য ১৫ সদস্যের বাংলাদেশ দল: নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), লিটন কুমার দাস, তানজিদ হাসান তামিম, সৌম্য সরকার, সাকিব আল হাসান, তাওহিদ হৃদয়, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, জাকের আলী, শেখ মেহেদী হাসান, রিশাদ হোসেন, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান, তানভির ইসলাম এবং তানজিম হাসান সাকিব। ট্রাভেলিং রিজার্ভ : আফিফ হোসেন ধ্রুব ও হাসান মাহমুদ।