ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সিরিজ হার

টি-টোয়েন্টিতে বিব্রতকর মাইলফলক বাংলাদেশের

টি-টোয়েন্টিতে বিব্রতকর মাইলফলক বাংলাদেশের

দ্বন্দ্বের বলি হয়ে দীর্ঘ দিন জাতীয় দলের বাহিরে দেশের অন্যতম সেরা ব্যাটার তামিম ইকবাল। সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হয়ে অনিচ্ছা স্বত্বেও ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাট থেকে অবসর নিয়েছেন অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম। দলের প্রয়োজনীয় মুহূর্তের পরিক্ষিত মেহেদী হাসান মিরাজকে টি-টোয়েন্টিতে অচল বানিয়ে দেয়া হয়েছে। পেস অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের নাম আইসিসিতে পাঠিয়েও শেষ মুহূর্তে তাকে ছেঁটে ফেলা হয়েছে। অথচ বারবার ব্যর্থ হওয়া সৌম্য সরকার আর লিটন দাসকে আজগুবি ব্যাখ্যা দিয়ে দলভুক্ত করা হয়েছে। ফর্মহীন নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্বে অনভিজ্ঞ যে দলটি বিশ্বকাপ খেলতে পাঠানো হয়েছে। মূল লড়াইয়ে নামার আগেই তাদের আত্মবিশ্বাস তলানীতে পৌঁছে গেছে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সহ-আয়োজক যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজ খেলতে নেমে রীতিমতো ভরাডুবি হয়েছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের। আইসিসির সহযোগী সদস্য দেশটির কাছে সিরিজ খুইয়েছে টাইগাররা। আমেরিকার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচের পর দ্বিতীয় ম্যাচেও হেরেছে শান্ত-সাকিবরা। এবারের পরাজয়টা আরো বিব্রতকর, আরো হতাশার। মাত্র ১৪৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে পারেনি বাংলাদেশ। এই ম্যাচে শেষ ২৪ বলে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ২৬ রান। তখনো হাতে ছিল ৫ উইকেট। জাকের আলির পাশাপাশি সাকিব আল হাসানের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটারও ছিলেন। কিন্তু মাত্র ১৩ রান তুলতেই ৪ উইকেট হারায় লাল-সবুজের ক্রিকেটাররা। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে রিশাদ হোসেন যখন আউট হলেন তখনো লক্ষ্যের থেকে ৬ রান দূরে বাংলাদেশ। এই ৬ রানেই বাংলাদেশকে হারিয়ে এক ম্যাচ বাকি রেখেই সিরিজ জিতে নিল যুক্তরাষ্ট্র। টেস্ট খেলুড়ে কোনো দেশের বিপক্ষে মার্কিনিদের প্রথম সিরিজ জয় এটিই। বাংলাদেশও একটি মাইলফলক ছুঁয়েছে এই ম্যাচে। তবে তা বিব্রতকর। প্রথম দল হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে হারের সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছে বাংলাদেশ।

গতকাল বৃহস্পতিবার টেক্সাসের প্রেইরি ভিউ ক্রিকেট কমপ্লেক্সে টস হরে ব্যাটিং পাওয়া যুক্তরাষ্ট্র অধিনায়ক মোনাঙ্ক প্যাটেল বলেছিলেন, উইকেট আগের ম্যাচের চেয়ে ভালো। তাদের দৃষ্টি ছিল বড় স্কোরে। কিন্তু আটকে যান তারা ২০ ওভারে ১৪৪ রানেই। সেই রান তাড়া করতে গিয়েই খাবি খায় বাংলাদেশের ব্যাটিং। শেষ পর্যন্ত তিন বল বাকি থাকতে তারা অলআউট হয় ১৩৮ রানে। এক পর্যায়ে যদিও ম্যাচ ছিল বাংলাদেশের নাগালেই। শেষ ২৪ বলে স্রেফ ২৬ রান দরকার ছিল, উইকেট তখনো হাতে ৫টি। কিন্তু এই ম্যাচও জিততে পারেনি নাজমুল হোসেন শান্তর দল। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলকে নিয়ে আশার জায়গা এমনিতেই ছিল কম। এই সিরিজ হারকে বলা যায় আরও অশনী সংকেত। ম্যাচের প্রথম ভাগে অবস্থা খুব একটা খারাপ ছিল না বাংলাদেশের। বোলাররা বেশ গোছানো পারফরম্যান্সইউপহার দেন। যুক্তরাষ্ট্র শুরুতে উইকেট না হারালেও যথেষ্ট দ্রুততায় রান তুলতে পারেনি। স্টিভেন টেইলর ও মোনাঙ্ক প্যাটেল প্রথম ৫ ওভারে তুলতে পারেন কেবল ২৭ রান। ষষ্ঠ ওভারে সাকিব আল হাসানকে টেইললের ছক্কা-চারসহ ১৫ রানের ওভারে পাওয়ার প্লেতে রান ওঠে ৪২।

সপ্তম ওভারে আক্রমণে এসে বাংলাদেশকে ব্রেক থ্রু এনে দেন রিশাদ হোসেন। যুক্তরাষ্ট্রের দুই ওপেনারের মধ্যে স্বাচ্ছন্দ্য ছিলেন যিনি, সেই টেইলর (২৮ বলে ৩১) লং অনে ধরা পড়েন ছক্কার চেষ্টায়। পরের বলেই রিশাদের ফ্লাইট ও টার্নে বিভ্রান্ত হয়ে আউট হয়ে যান নতুন ব্যাটসম্যান আন্দ্রিয়েস হাউস। অ্যারন জোন্স ক্রিজে যাওয়ার পরপরই ছক্কায় ওড়ান রিশাদকে। তবে আরেক প্রান্তে মোনাঙ্ক পারছিলেন না টাইমিং ঠিকঠাক করতে। ১০ ওভারে ৬৮ রান তোলে যুক্তরাষ্ট্র। মোনাঙ্কের রান তখন ১৮ বলে ১৮। জোন্সের ইতিবাচক ব্যাটিংয়ে পরের তিন ওভারে ২৪ রান আসে। কিন্তু এরপর আবার কমে যায় রানের গতি। বাংলাদেশের আঁটসাঁট বোলিংয়ে সুবিধা করতে পারছিলেন না মোনাঙ্ক ও জোন্স। দলের শতরান আসে ষষ্ঠদশ ওভারে। রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টায়ই মুস্তাফিজের বলে আউট হয়ে ফেরেন জোন্স (৩৪ বলে ৩৫)। ওপেনার মোনাঙ্কের রান ১৮ ওভার শেষে ছিল ৩৬ বলে ৩৬। ১৯তম ওভারে শরিফুলের বলে একটি ছক্কা মারতে পারলেও পরের বলে বোল্ড হয়ে যান স্কুপ করার চেষ্টায় (৩৮ বলে ৪২)। প্রথম ম্যাচের দুই নায়ক কোরি অ্যান্ডারসন ও হারমিত সিং এ দিন সুবিধা করতে পারেননি। মুস্তাফিজকে একটি ছক্কা মেরে শরিফুলের বলে বোল্ড হন অ্যান্ডারসন (১০ বলে ১১)। আগের ম্যাচে ১৩ বলে ৩৩ করা হারমিত এবার আউট দুই বলে শূন্য রানেই। যুক্তরাষ্ট্র তাই পারেনি ১৫০ ছুঁতে। সাকিব ছাড়া বাংলাদেশের বাকি বোলাররা মোটামুটি ভালো বোলিংই করেন। সিরিজের দুই ম্যাচেই উইকেটশূন্য সাকিব এ দিন ছিলেন দলের সবচেয়ে খরুচে (৪ ওভারে ৩৫)। রান তাড়ায় বাংলাদেশ প্রথম ওভারে হারায় সৌম্য সরকারকে। সৌরভ নেত্রাভালকারের বলে আলতো করে ব্যাট চালান তিনি, ফলো থ্রুতে দারুণভাবে এক হাতে ক্যাচ নেন এই বাঁ-হাতি পেসার। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি শূন্য রানে আউটের রেকর্ড আরো বাড়িয়ে নিলেন তিনি (১২ বার)। এই সংস্করণে দেশের হয়ে তার ফিফটি নেই টানা ২৫ ইনিংস। ছন্দহীন লিটন কুমার দাসের জায়গায় একাদশে ফেরা তানজিদ হাসান শুরুটা করেছিলেন ভালোই। তবে একটি করে ছক্কা ও চারের পর বিদায় নেন তিনিও। জাসদিপ সিংয়ের লেংথ বল পুল করার চেষ্টায় বোল্ড হয়ে যান তিনি ১৫ বলে ১৯ করে। নাজমুল হোসেন শান্ত ও তাওহিদ হৃদয় এরপর আস্তে আস্তে এগিয়ে নেন দলকে। ৯ ওভারে দলের রান ছিল ৬২। দশম ওভারে হারমিত সিংয়ের বাঁ-হাতি স্পিনে হৃদয় ও শান্তর দুটি ছক্কায় রানের গতি বাড়ে একটু। কিন্তু এরপরই শান্ত রান আউট হয়ে যান ৩৪ বলে ৩৬ রান করে। হৃদয় ২১ বলে ২৫ করে বিদায় নেন অ্যান্ডারসনের বল স্টাম্পে টেনে। একটু পর মাহমুদউল্লাহ যখন ৩ রানে বোল্ড হয়ে যান, শঙ্কার মেঘও জমা হতে থাকে। সাকিব যদিও সেই মেঘ দূর করার চেষ্টা করে যান। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে দ্রুত রান বাড়ান তিনি। বাংলাদেশের সম্ভাবনাও উজ্জ্বল হয় কিছুটা। কিন্তু আলি খানের অনেক বাইরে বল কাট করার চেষ্টায় স্টাম্পে টেনে আনেন সাকিব (২৩ বলে ৩০)। বাংলাদেশও একের পর এক উইকেট হারাতে থাকে।

সাকিবের পর ওই ওভারে তানজিম হাসানকেও আউট করেন আলি খান। জাকের আলি তো আগেই ফেরেন স্রেফ ৩ রান করে। শেষ আশা ছিলেন রিশাদ হোসেন। শেষ ওভারে প্রয়োজন পড়ে ১২ রানের। প্রথম বলে ‘বাই’ রান থেকে স্ট্রাইক পান রিশাদ, দ্বিতীয় বলে মারেন বাউন্ডারি। কিন্তু পরের বলেই তিনি ধরা পড়েন উইকেটের পেছনে। বাঁধনহারা উদযাপনে মেতে ওঠেন বোলার আলি খান। বিপিএল খেলে যাওয়া এই পেসার তিন উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা। ১৬ বলের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ হেরে যায় বাংলাদেশ। তাদের সামনে এখন হোয়াইট ওয়াশড হওয়ার শঙ্কা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত