ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিদায় বেলায় ক্ষোভ উগরে দিলেন জাভি

বিদায় বেলায় ক্ষোভ উগরে দিলেন জাভি

বিশ্বাসঘাতকতা কিংবা প্রতারণার শিকার হওয়ার অনুভূতি হতেই পারে জাভি হার্নান্দেজের। সরাসরি অবশ্য এমন কথা বলেননি। তবে তার কথাতে ফুটে উঠছে তা। বার্সেলোনার দায়িত্বে শেষ ম্যাচের পর আক্ষেপ, হতাশা, অভিমান, ক্ষোভণ্ড সবই মিশে থাকল তার প্রতিক্রিয়ায়। বার্সেলোনার নতুন কোচিং স্টাফের জন্য সতর্কবার্তাও জানিয়ে রাখলেন বিদায়ী কোচ। গত রোববার সেভিয়ার মাঠে ২-১ গোলের জয় দিয়ে এবারের মৌসুম শেষ করে বার্সেলোনা। কাতালান ক্লাবটির কোচ হিসেবে জাভির পথচলাও শেষ হয়ে যায় এই দফায়। অথচ এখন তার আগামী মৌসুমের জন্য দল গোছানোর ভাবনা থাকার কথা, কিছুদিনের বিশ্রাম শেষে নতুন পরিকল্পনা নিয়ে ক্লাবে ফেরার কথা। কিন্তু কদিন আগেই তার মাথায় ভেঙে পড়ে আকাশ, যখন জানতে পারেন বরখাস্ত হওয়ার খবর। মৌসুম শেষে ক্লাব ছাড়ার সিদ্ধান্তটি তিনি গত জানুয়ারিতে নিয়েছিলেন নিজেই। ক্লাব সভাপতি হুয়ান লাপোর্তার অনুরোধে নাটকীয়ভাবে গত মাসে মত পরিবর্তন করে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ক্লাবের এই কিংবদন্তি। মৌসুম শেষের আগেই আরও নাটকীয়ভাবে তাকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় নেন সেই লাপোর্তাই।

দায়িত্বের শেষ দিনটিতে জাভি ফিরে গেলেন সেই শুরুতে, যখন ক্লাবের দুর্দিনে তিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন। সেখান থেকে ক্লাবকে যেভাবে এগিয়ে নিয়েছেন, সেটির পুরস্কার পাননি বলেই মনে করেন তিনি। ‘আমার মনে হয় না, যে কাজগুলো আমরা করেছি, সেসবের যথেষ্ট মূল্যায়ন করা হয়েছে, বিশেষ করে যে পরিস্থিতিতে আমরা দায়িত্ব নিয়েছিলাম। আমরা আসার সময় বার্সা ছিল পয়েন্ট তালিকায় ৯ নম্বরে। সেখান থেকে আমরা রানার্স আপ হয়ে লিগ শেষ করি। প্রথম পূর্ণাঙ্গ মৌসুমে আমরা দুটি ট্রফি জিতে নেই (লা লিগা ও স্প্যানিশ সুপার কাপ)।’ তিনি বলেন, ‘এই মৌসুমে অবশ্যই আমরা প্রত্যাশিত পর্যায়ে থাকতে পারিনি। তবে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের বিস্তারিত নানা কিছু বিবেচনায় নেওয়া উচিত ছিল। অন্তত চারটি ম্যাচে আমরা দারুণ খেলেও শেষটা ভালোভাবে করতে পারিনি। যেভাবে সব হলো (বরখাস্ত), এটা খুবই বিব্রতকর। আমি হতাশ। তবে কোচের জীবনই এমন।’ জানুয়ারিতে যখন দায়িত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন, এরপর বেশ কবারই তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে, এই ক্লাবে কাজ করার উপযুক্ত পরিবেশ তিনি পাননি। তার কাজকে কঠিন করে তোলা হয়েছে।

বিদায় বেলায়ও একই অভিযোগের সুর তার কণ্ঠে। ‘আমার মনে হয়, গত আড়াই বছরে আমরা যা করেছি, তাতে ভূমিকম্প হয়ে গেছে। অনেক পরিস্থিতিতেই আমাকে নানা সময়ে ‘টার্গেট’ বানানো হয়েছে। শান্তিতে কাজ করতে দেয়া হয়নি আমাকে।’ জাভি বলেন, ‘এক মাস আগেই আমাদের দাবি ছিল স্থিতিশীলতা যে থাকে। সেই প্রতিশ্রুতি পেয়েই আমরা থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। আরো কঠোর পরিশ্রম করতে ক্ষুধার্ত ছিলাম আমরা। কিন্তু ফুটবল কোচদের জীবনই এমন।’

অনুরোধ করে দায়িত্বে রেখে দেয়ার কিছুদিন পরই কেন এভাবে জোর করে বিদায় দেওয়া হলো, সেই কারণ শাভি নিজেও জানেন না বলেই জানালেন। ‘(বরখাস্ত করার) পেছনের কারণ বা উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করার দায়িত্ব আমার নয়। ক্লাব সভাপতি তা করতে পারেন। আমার স্রেফ সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া এবং সম্মান জানানো ছাড়া উপায় নেই। তাদের কথার সঙ্গে আমি একমত কি না, এসবেরও কোনো মূল্য নেই। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেছে, পেছন ফিরে তাকানোর উপায় নেই। সবার ওপরে ক্লাব।’

গত মাসে মত পরিবর্তন করার পর যে তীব্র তড়না নিয়েই দায়িত্বে থেকে যেতে ও কাজ করতে মুখিয়ে ছিলেন, তা সরাসরিই বললেন শাভি। তবে বিদায় নিতে হলেও নিজের কাজ ঠিকঠাক করার তৃপ্তি তার সঙ্গী। ‘আমি অবশ্যই থাকতে চেয়েছিলাম। তবে সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে আমাকে এবং সেটিকে সম্মান করতে হবে। তবে খুবই হতাশাজনক তা। অনুভূতি খুব পরস্পরবিরোধি ও মিশ্র। কারণ, এই মৌসুমে ট্রফি জিততে না পারলেও ইতিবাচক কাজ করছিলাম আমরা। আমার মনে হচ্ছিল, আমরা সঠিক পথেই আছি এবং এখনও তা মনে করি। তবে ফুটবল এমনই। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেছে। আমরা যা করেছি, তাতে আমি খুশি, গর্বিত ও সন্তুষ্ট। ক্লাবের এমন কঠিন সময়ে এসে আড়াই বছরে দুটি ট্রফি জিতেছি, এটিই বাস্তবতা।’ বার্সার সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের একজন হয়ে কোচের দায়িত্বে আসায় কাজটা আরো কঠিন হয়ে উঠেছে বলেই মনে করেন শাভি। সম্ভাব্য নতুন কোচ হান্সি ফ্লিক ও তার কোচিং স্টাফকে বড় ধরনের সতর্কবার্তা জানিয়ে রাখলেন বিদায়ী কোচ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত