‘বাংলাদেশ কাবাডি সঠিক পথেই হাঁটছে’

প্রকাশ : ২৯ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

এ দেশের মাটি ও মানুষের খেলা কাবাডি। এক সময় গ্রামের কাঁচা রাস্তায়, মাঠ, বাগানে বা খোলা স্থানে জমজমাট ও উৎসবমুখর পরিবেশে হতো এই কবাডি খেলাকে কেন্দ্র করে। কিন্তু কালের বিবর্তনে এই খেলা এখন আর তেমন দেখা যায় না। আধুনিকতার এ যুগে ক্রিকেট, ফুটবল কিম্বা ব্যাডমিন্টনের মতো খেলার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নতুন প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয়তা হারিয়েছে কবাডি। ফলে এক সময়ের জনপ্রিয় খেলাটা অনেকটাই হারিয়ে যেতে বসেছিল। তবে দেশের জাতীয় এই খেলাটিকে হারিয়ে যেতে দেয় বাংলাদেশের পুলিশের দায়িত্বশীল কিছু মানুষ। যাদের কল্যাণে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুনাম বয়ে আনছে কাবাডি। বিশেষ করে কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান তাদের অন্যতম। তার সুনিপুণ দক্ষতায় স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে টানা চতুর্থবারের মতো শুরু হয়েছে বঙ্গবন্ধু কাপ ২০২৪ আন্তর্জাতিক কাবাডি টুর্নামেন্ট। এরইমধ্যে টানা দুই ম্যাচ জিতে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে এগোচ্ছে স্বাগতিকরা। বাংলাদেশ কাবাডি সঠিক পথেই হাঁটছে বলে মন্তব্য করেছেন এশিয়ান কাবাডি ফেডারেশনের মহাসচিব মুহাম্মদ সারওয়ার রানা। তিনি বলেন ‘বাংলাদেশ অনেক বছর ধরেই এশিয়ান গেমসে পদক জিততে পারছে না। এমন কি, সাউথ এশিয়ান গেমসে রৌপ্য-ব্রোঞ্জ জিতলেও স্বর্ণপদক জিততে পারেনি। তাই বলে এদেশের কাবাডি পিছিয়ে যাচ্ছে, তা নয়। বরং এ মুহূর্তে বাংলাদেশ কাবাডি সঠিক পথেই হাঁটছে এবং ধীরে ধীরে উন্নতি করছে। যার প্রমাণ বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের গত তিনটি আসরে চ্যাম্পিয়ন হওয়া। আমার তো মনে হয় বিশ্ব কাবাডিতে অনেকদূর এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।’ গত সোমবার মিরপুর শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে এভাবেই বাংলাদেশের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন তিনি। পাকিস্তান জাতীয় কাবাডি দলের সাবেক অধিনায়ক (১৯৯৩ সালে) রানা আরো বলেন, ‘এই মেগা ইভেন্ট দেখে আমি খুব খুশি। এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো এ টুর্নামেন্টটি হচ্ছে। আমি জানি কাবাডি বাংলাদেশের জাতীয় খেলা এবং এই খেলাটির প্রসার ও উন্নয়নে হাবিবুর রহমান (বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক) সহ আরো অনেকেই চেষ্টা করে যাচ্ছেন।’ একটি দেশের কাবাডির মান উন্নত করতে হলে সদিচ্ছা, সুযোগ-সুবিধা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, উন্নত প্রশিক্ষণের কোন বিকল্প নেই বলে মনে করেন সাওয়ার। ৪৫ বছর ধরে কাবাডির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা সারওয়ারের বাংলাদেশের কাবাডির জন্য উপদেশ হচ্ছে, ‘কাবাডিতে সফল হতে গেলে সবচেয়ে বেশি জরুরি শারীরিকভাবে শক্তিশালী হওয়া। মাঝেমধ্যে ফিজিক ব্যাপারটা সব নিয়ম ভেঙে দেয়। আপনি আমাকে সফলভাবে ধরে ফেললেন ঠিকই; কিন্তু আমার শক্তি বেশি থাকলে সেই শৃঙ্খল ভেঙে বের হয়ে আসা যায়।’ এই টুর্নামেন্টে মানসম্পন্ন দল নিয়ে প্রশ্ন করলে সারওয়ারের ভাষ্য, ‘এই আসরে অনেক মানসম্পন্ন দল দেখতে পাচ্ছি। তবে ২/৩টি মানসম্পন্ন দল যেমন পাকিস্তান, ভারত, ইরান আসেনি।’ অতীতের সঙ্গে বর্তমানের কাবাডির পার্থক্য প্রসঙ্গে সারওয়ারের অভিমত, ‘এখন কাবাডি খেলা অনুষ্ঠিত হয় ম্যাটে। আগে হতো ক্লে-কোর্টে। ফলে এখন খেলার ধরণ ভিন্ন। খেলাটা আগের চেয়েও বেশি দ্রুতগতিসম্পন্ন হয়ে গেছে। আমি একসময় (১৯৯৫-২০০০) ইরান জাতীয় দলকে কোচিং করিয়েছি, আমাকে ইরানের কাবাডির প্রতিষ্ঠাতাণ্ডকোচও বলতে পারেন। এখন তারা এশিয়ান গেমসে চ্যাম্পিয়ন দল। তারা এতটাই উন্নতি করেছে যে একইসঙ্গে ভারত-পাকিস্তানের মতো দলকেও হারিয়ে দিয়েছে।’

ইরান প্রসঙ্গে সারওয়ারের ভাষ্য, ‘ইরান একসময় অনেক পিছিয়ে থাকলেও এখন তারা অনেক উঁচুতে উঠে গেছে। তাদের পুরুষ দলের মতো নারীও দলও সাফল্য পাচ্ছে। অথচ তারা হিজাব পড়ে খেলে! আমি ইরান দলের কোচ থাকাকালীন তাদের অনুপ্রাণিত করতাম এই বলে, তোমাদের দেশে রুস্তমণ্ডসোহরাবের মতো কালজয়ী কুস্তিগীরের দেশ। তোমরা কাবাডিও খেলতে পারবে। পরে তো তারা আমার নিজের দেশ পাকিস্তানকেই হারিয়ে দিল!’