হারজিত চিরদিন থাকবে তবুও এগিয়ে যেতে হবে বাঁধাবিঘ্ন না পেরিয়ে বড় হয়েছে কে কবে? ‘পুরস্কার’ সিনেমায় গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখা গানটি অনেকের কাছেই অনুপ্রেরণার। খেলা মানেই জয় অথবা পরাজয়। দুর্বল প্রতিপক্ষও খেলায় নেমে জয়ের আশা করে। কিন্তু সমর্থকরা তো আর সেটি বোঝেন না তারা শুধু জয় চান। বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকরাও তার ব্যতিক্রম নন। এই সমর্থকদের উন্মাদনা ও ভালোবাসা ক্রিকেটারদের জন্য নিরন্তর প্রেরণার উৎস। তবে সেই সমর্থন দলের দুঃসময়েও দেখতে চান নাজমুল হোসেন শান্ত। সামনে বিশ্বকাপেও যদি দল ভালো করতে না পারে, সেই সময়টাতেও সমর্থকদের পাশে থাকার অনুরোধ আগেই জানিয়ে রাখলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
বিশ্বকাপের আগেই অবশ্য প্রবল সমালোচনার মুখে আছে বাংলাদেশ দল। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সিরিজে হারার পর দলকে নিয়ে প্রত্যাশা যেমন কমে গেছে অনেকেরই, তেমনি সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনা, ট্রল, তাচ্ছিল্যের ঝড় বইছে। ক্রিকেট উন্মাদনার এই দেশে যদিও আগ্রহের কমতি নেই। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও বাংলাদেশের দুই ম্যাচে প্রচুর সংখ্যক প্রবাসী সমর্থক মাঠে থাকবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সম্ভাব্য সেই সমর্থন নিয়ে রোমাঞ্চ অনুভব করছেন শান্ত। তবে মাঠের পারফরম্যান্সে প্রত্যাশার প্রতিফলন না পড়লেও যেন সমর্থনের চিত্র পাল্টায় না, সেই আর্তি অধিনায়ক জানালেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের আয়োজন ‘গ্রিন-রেড স্টোরি’-তে। ‘এটা তো অবশ্যই রোমাঞ্চকর একটা ব্যাপার, দেশের বাইরে যখন সমর্থকরা সমর্থন করেন। এটা একটা বাড়তি অনুপ্রেরণা। আমাদের দেশের প্রতিটি মানুষ যেভাবে ক্রিকেট অনুসরণ করেন, প্রেরণা জোগান, এটা অবশ্যই দলকে উৎসাহিত করে।’ তবে লাল সবুজের সমর্থকদের কাছে একটু বাড়তি আবদার রেখেছেন শান্ত। ‘বাড়তি চাওয়া বলতে, বিশ্বকাপের সময় এতটুকু চাইব, আল্লাহ না করুক, কোনো খারাপ পরিস্থিতিতে যদি পড়ি আমরা, ওই সময়টায় যেন দলের পাশে থাকেন, দলকে সমর্থন করেন।’
দলের জন্য সময়টা ভালো না হলেও বিশ্বকাপ নিয়ে বড় স্বপ্ন আছে বলেই জানালেন অধিনায়ক। তবে সেটি তিনি খোলাসা করতে চান না, সেই ভাবনায় বুঁদ হতেও চান না। বরং প্রক্রিয়া ও প্রস্তুতি ভালোভাবে নেওয়াটাই তার কাছে সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ। ‘প্রতিটি ক্রিকেটারের তো স্বপ্ন থাকেই।
আমরা যখন একটা বড় টুর্নামেন্টে খেলতে যাব, অবশ্যই বড় স্বপ্ন নিয়েই যাই। তবে ‘আউটকাম’ নিয়ে চিন্তা করাটা আমি খুব একটা পছন্দ করি না। আমাদের প্রক্রিয়া ঠিক আছে কি না, প্রস্তুতি ঠিক আছে কি নাৃ এসব জায়গায় যদি ঠিকভাবে কাজগুলো করতে পারি, তাহলে আমার মনে হয় ফলাফল আসবে।’ কেনো খেলোয়াড়ই চাননা দল হারুক। এ বিষয়ে নাজমুল হোসেন শান্ত বলেন, ‘চূড়ান্ত লক্ষ্য তো আমরা সবাই জানি যে, দল হিসেবে অনেক ভালো ক্রিকেট খেলতে চাই, অনেক ভালো জায়গায় যেতে চাই। যেগুলো আমরা অতীতে কখনও করতে পারিনি, এই ধরনের ফলাফল করতে চাই। এগুলো সবসময় থাকবেই। সবার সেই প্রত্যাশা থাকবেই। তবে প্রত্যাশা নিয়ে বেশি চিন্তা করলে তা বাড়তি একটা চাপ, আমার কাছে মনে হয়। তাই প্রক্রিয়া ধরে রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি ছোট ছোট কাজগুলো ঠিকভাবে করতে পারি, তাহলে ভিন্ন কিছু হবে, আমার মনে হয়।’
দলের সম্ভাবনা নিয়েও সুনির্দিষ্ট কিছু বলতে নারাজ শান্ত। আবারও বললেন, প্রক্রিয়া ধরে রাখাতেই সবটুকু মনোযোগ দিতে চান তারা। ‘সম্ভাবনা আসলে আমি ওভাবে বলতেই চাই না। আপনিও চান, বাংলাদেশ দল কাপ জিতুক। ক্রিকেটাররা চায় বাংলাদেশ কাপ জিতুক, সবচেয়ে বড় যে লক্ষ্য। তবে অধিনায়ক হিসেবে আমার কাছে যেটা গুরুত্বপূর্ণ, প্রস্তুতি ঠিকমতো নিয়েছি কি না, ছোট ছোট কাজগুলি করছি কি না, প্রক্রিয়া ঠিক আছে কি না। এগুলো যদি আমরা ঠিকঠাক করতে পারি, নিজেদের শক্তি অনুযায়ী যদি খেলতে পারি, ফলাফল আসবে। ‘আউটকাম’ নিয়ে তাই খুব একটা চিন্তা নেই। ছোট ছোট জিনিসগুলো যেন ঠিক করতে পারি, এটাতেই বেশি মনোযোগ।’
ক্রিকেটারদের কাছে আলাদা করে কোনো প্রত্যাশা অধিনায়কের নেই। তবে বাড়তি কিছু চান তিনি দলের অভিজ্ঞতম ক্রিকেটার ও সবকটি বিশ্বকাপে খেলা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের কাছে। ‘আলাদা করে চাওয়ার কিছু নেই। প্রতিটি ক্রিকেটারের কাছ থেকে, সবার কাছেই আমার সমান প্রত্যাশা। যার যে ভূমিকাগুলো থাকবে, সেভাবেই যেন দলে অবদান রাখতে পারে, এটাই প্রধান চাওয়া থাকবে। আলাদা করে যদি বলেন, আমি চাইব সাকিব ভাই তার অভিজ্ঞতা প্রতিটি ক্রিকেটারের সঙ্গে ভাগাভাগি করবেন। গত বছরগুলোতে যে অভিজ্ঞতাগুলোর মুখোমুখি হয়েছেন তিনি, ধারণাগুলো তরুণ ক্রিকেটারদের দিলে তারা অনেক উপকৃত হবেন। এমনিতেও তিনি এটা করেন। আলাদাভাবে প্রত্যাশা বললে, তার কাছে এই চাওয়া থাকবে।’ প্রথমবার বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দিতে যাওয়া শান্তর ব্যক্তিগত কোনো লক্ষ্য তেমন নেই বলেই দাবি করলেন। দলে নিজের ভূমিকাটুকু শুধু পালন করতে চান তিনি। ‘আমার নিজের ব্যক্তিগত ওরকম কোনো লক্ষ্য নেই। আমি যেভাবে চিন্তা করি যে, প্রতিটি ম্যাচে দলে কীভাবে অবদান রাখতে পারি, এটাই লক্ষ্য।’ আগামী ৮ জুন ডালাসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অভিযান। এর আগে আগামী ১ জুন ভারতের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে নামবে শান্তর দল। গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচ ভেসে গিয়েছে বৃষ্টিতে।