দুর্নীতিবাজ ও ব্যর্থ বাফুফে কর্তাদের পদত্যাগ দাবি

প্রকাশ : ৩১ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

ফুটবল খেলেই অনেকে ব্যবসায়ী, কেউ রাজনীতিবিদ আবার কেউবা হয়েছেন প্রবাসী। সবার পরিচয়ই ফুটবলার। ফুটবল আমাদের অনেক কিছু দিয়েছে, কিন্তু ফুটবল ফেডারেশনের শীর্ষ পদে থেকেও ফুটবলকে কিছু দিতে পারছে না তারা। উল্টো ফিফার জরিমানার মুখে পড়ে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। তাই সাবেক তারকা ফুটবলাররা বাফুফে থেকে সালাউদ্দিন-সালাম মুর্শেদীর পদত্যাগ চেয়েছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করেন তারা। ‘ঘোর অমানিশায় দেশের ফুটবল দুর্নীতিবাজ ও ব্যর্থ বাফুফে কর্মকর্তাদের অপসারণ চাই’ নামক ব্যানারে সাবেক ফুটবলাররা একত্রিত হয়েছিলেন। তারা ফেডারেশনের নানা অসঙ্গতি ও সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত ফিফা রিপোর্টে ফেডারেশন কর্মকর্তাদের ব্যর্থতার চিত্র তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনের আয়োজক সাবেক জাতীয় ফুটবলার আব্দুল গাফফার বলেন, ‘আমরা এখন অনেকে ব্যবসায়ী, কেউ রাজনীতিবিদ আবার কেউ প্রবাসী। সবার পরিচয়ই ফুটবলার হিসেবে। ফুটবল ফেডারেশনের দুই শীর্ষ ব্যক্তি সাবেক ফুটবলার, অথচ আমাদের ফুটবল ফেডারেশনের কর্মকর্তা ফিফার জরিমানায় পড়ছে এবং স্টাফরা নিষিদ্ধ হচ্ছে, যা অত্যন্ত লজ্জার ও দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। আমরা এর প্রতিবাদ স্বরূপ এখানে একত্রিত হয়েছি। তারা নৈতিকভাবে পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। ফুটবলের স্বার্থে তাদের সরে যাওয়া উচিৎ, এটাই আমাদের দাবি।’

ফিফার অর্থে কেনাকাটায় অনিয়ম নিয়ে সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ নিষিদ্ধ হয়েছিলেন। একই ঘটনায় সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর শুধু জরিমানা হওয়ায় খানিকটা বিস্মিত সাবেক তারকা ফুটবলার দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল, ‘প্রায় একই ঘটনায় দুই জনের একই শাস্তি হওয়ার কথা। সেখানে একজনকে শুধু জরিমানা করেছে।’ সালাম মুর্শেদীর ফিফার রিপোর্টে ফেডারেশন সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের নামও এসেছে। তাই সালাউদ্দিনের এক সময়ের সতীর্থ আশরাফ উদ্দিন চুন্নুর কাঠগড়ায় সভাপতিও, ‘ফেডারেশনের সভাপতি হিসেবে তাকেও এর দায় নিতে হবে। দায় হিসেবে পদত্যাগ করা উচিত।’ সালাউদ্দিন-সালামের সতীর্থ ফুটবলার ছাড়াও আজকের সংবাদ সম্মেলনে পরবর্তী প্রজন্মের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সাবেক জাতীয় তারকা ফুটবলার আরমান মিয়া বলেন, ‘আমরা গত বেশ কয়েক বছর ধরেই বাফুফের অসঙ্গতি নিয়ে কথা বলছি। আমাদের কথা কেউ কর্ণপাত করেনি। এখন স্বয়ং ফিফাই বলছে বাফুফের অনিয়মের বিষয়গুলো। এটা আমাদের ফুটবল সমাজ ও দেশের জন্য খুবই লজ্জার।’

সৈয়দ রুম্মন বিন ওয়ালী সাব্বির এর সঙ্গে যোগ করে বলেন, ‘আমরা যখন খেলতাম তখন বাংলাদেশের র‍্যাংকিং অনেক ভালো ছিল। সালাউদ্দিন ভাইয়ের নেতৃত্বে ১৬ বছর দেশের ফুটবলে অবস্থা ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। এখন ১৮৪ নম্বরে, এক সময় দু’শোর কাছাকাছি ছিল। ফলে ফুটবল দিনকে দিন নিচে নামছে, তারা উন্নয়ন করতে ব্যর্থ। তাদের হাতে ফুটবল আর নিরাপদ নয়।’ সাবেক ফুটবলাররা অনেকদিন থেকেই কাজী সালাউদ্দিন-সালাম মুর্শেদীর সমালোচনা করে আসছেন। দাবিও করেছেন অপসারণের। সাবেক মন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের কাছেও স্মারকলিপি দিয়েছিলেন। এরপরও কোনো প্রতিকার হয়নি। নতুন মন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপনের ওপর আশা করছেন সাবেক তারকা ফুটবলার দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল, ‘সাদেক হোসেন খোকার পর আমরা আরেকজন মন্ত্রী পেলাম যিনি ক্রীড়াঙ্গনের লোক। তিনি আবাহনীর সঙ্গে যুক্ত ও ক্রিকেট বোর্ডে আছেন অনেক দিন। তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীরও বেশ কাছের। তিনি জনপ্রিয় খেলা ফুটবলের গুরুত্ব ও ফুটবল ফেডারেশনের সমস্যার বিষয়টি অনুধাবন করবেন নিশ্চয়ই।’ টুটুলের সঙ্গে গাফফার যোগ করে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির ব্যাপারে জিরো টলারেন্স। সম্প্রতি পুলিশের সাবেক আইজিপির ব্যাপারে তদন্ত চলছে। ফুটবল ফেডারেশনের কর্মকর্তারাও নিশ্চয়ই পার পাবে না। কারণ শুধু ফিফার ফা-, সরকারি অনেক অর্থও তারা সঠিকভাবে ব্যবহার করেনি। রাসেল সাহেবের আমলে ১০ কোটি টাকার সঠিক হিসাব দিতে পারেনি।’

ফুটবল ফেডারেশন ২১ জনের নির্বাহী কমিটি হলেও সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের হাতেই মূল ক্ষমতা। তার ঘনিষ্ঠ দুই-তিন জন ফেডারেশনের নীতি-নির্ধারক হিসেবে কাজ করেন। বাকিরা থাকেন একেবারে অজ্ঞাত। এদের নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন গাফফার, ‘ফেডারেশন সালাউদ্দিন ও তার দুই একজন লোকই চালায়। কমিটির অনেকে অনেক কিছু জানে না। আমাদের ফুটবলার ইলিয়াস, রুপু অনেকেই আছেন তারা কিছু বলতে পারেন না, তাও থাকেন। মুন একমাত্র প্রতিবাদ করে সরে এসেছে।’ সালাউদ্দিনের আস্থাভাজন সহ-সভাপতি আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিককে ইঙ্গিত করে গাফফার বলেন, ‘ফুটবল ফেডারেশনে অনেক সাবেক ফুটবলার রয়েছে। ডেভলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান এমন একজনকে করেছে যিনি একজন ঠিকাদার। ফুটবল সম্পর্কে তার কোনো ধারণাই নেই। প্রতি নির্বাচনে সালাউদ্দিন সাহেব একজন করে লোক নির্বাচন করেন। প্রথমে ছিলেন রব্বানী হেলাল, এরপর মঞ্জুর কাদের, তারপর তরফদার রুহুল আমিন, এখন তিনি (আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক)।’ সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন শামসুল আলম মঞ্জু, আবু ইউসুফ, মো. সুলতান, কাজী আনোয়ার ও বিপ্লব ভট্টাচার্য্য।