ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

প্রশ্নবিদ্ধ বাফুফের মেডিকেল কমিটি

কৃষ্ণার চোটে দায় কার?

কৃষ্ণার চোটে দায় কার?

বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় কৃষ্ণা রানী সরকার। যিনি ২০২২ সালে নারী সাফ শিরোপা জয়ের অন্যতম কারিগর। সেই কৃষ্ণা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চোটে ভুগছেন। অথচ বাফুফের মেডিক্যাল কমিটি এ নিয়ে মোটেও অবগত নয়। বিষয়টি বিস্ময়কর হলেও তিক্ত সত্য ও বাস্তব। বাফুফের মেডিক্যাল কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যান আলী ইমরান। গত দুই দশক ধরেই তিনি বাফুফের সঙ্গে জড়িত। ফুটবলারদের ইনজুরি-সংক্রান্ত বিষয়ও দেখভাল করেন তিনি। কৃষ্ণার এক বছরের বেশি সময় চোটে থাকার কথা ফেডারেশন জানায়নি বলে অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেন থেকে বলছেন ইমরান, ‘কৃষ্ণাকে ফেডারেশন আমার কাছে পাঠায়নি। আমি ও আমার কমিটি এই ব্যাপারে অজ্ঞাত।’

রিহ্যাবিলিটেশন মেডিসিন-সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক এক সেমিনারে অংশ নিতে তিনি বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছেন। ইমরানের অজ্ঞতা কৃষ্ণার চোট নিয়ে নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। কৃষ্ণা গত এক বছরে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরিসহ অনেক ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়েছেন। অনেক জায়গায় তিনি নিজেই গিয়েছেন, আবার কিছু জায়গায় সঙ্গী ছিলেন বাফুফের নারী ফিজিও লিপা। অথচ চিকিৎসক নির্বাচন ও চিকিৎসা পদ্ধতি এসব কিছু হওয়া উচিত ছিল মেডিক্যাল কমিটির তত্ত্বাবধানে। বাফুফের নারী উইং সম্পূর্ণ নির্ভরশীল ফিজিও লিপার ওপর। ফিজিও আর ডাক্তারের মধ্যে বিস্তর ফারাক। চিকিৎসক রোগ নির্ণয় ও সমাধানের পথ বাতলে দেন। ফিজিও শুধু চিকিৎসকের নির্দেশনাই অনুসরণ করতে পারেন। বাফুফে কর্তারা এই পার্থক্য কতটুকু বোঝেন- সেটাও বড় প্রশ্ন।

বাফুফেতে একাধিক বিভাগ থাকলেও এতদিনেও মেডিক্যাল বিভাগ দাঁড়াতে পারেনি। তৃতীয় তলায় এক কক্ষে ফিজিওথেরাপি হয়। তেমন যন্ত্রপাতিও নেই সেখানে। বাফুফে ভবনে ৭০ জন নারী, কমলাপুরে এলিট একাডেমিতে ৫০ জন বালক থাকেন। ১২০ জনের জন্য ছোটখাটো একটা মেডিক্যাল সেন্টারই প্রয়োজনে বাফুফেতে। সেন্টার তো দূরের কথা, ফেডারেশনের স্থায়ী কোনো চিকিৎসকই নেই। মেডিক্যাল কমিটির চিকিৎসকরা ফুটবলে সেবা দিলেও এখন বাফুফের সঙ্গে টানাপড়েন চলছে। কারণ, তাদেরও বেশ কয়েক লাখ টাকা সম্মানী বকেয়া। লিগ ম্যাচে ও জাতীয় দলের সঙ্গে বিদেশ সফরে গিয়ে অনেক অর্থই বকেয়া পড়েছে চিকিৎসকদের। তাই মেডিক্যাল কমিটিকে পাশ কাটিয়েই অনেক কাজ করার চেষ্টা করে বাফুফে।

কৃষ্ণার মতো গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় চোট থেকে সেরে উঠতে বিক্ষিপ্তভাবে দৌড়াদৌড়ি করছেন। এখনও সুস্থ হতে না পেরে দেশের জার্সি গায়ে নামতে পারেননি। এই দায় সম্পূর্ণভাবে ফেডারেশনের কাঁধেই দিয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক জাহিদ হাসান এমিলি, ‘ফুটবল ফেডারেশনে মেডিক্যাল ইস্যু বরাবরই অবহেলিত। কৃষ্ণার মতো খেলোয়াড় এখনও মাঠে ফিরতে পারেনি, এটা অবশ্যই ফেডারেশনের দায়। তারা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নেয়নি।’

এক্ষেত্রে এমিলি ক্রিকেট বোর্ডের উদাহরণ টেনে বলেন, ‘ক্রিকেটে আলাদা মেডিক্যাল বিভাগই রয়েছে। ছোটোখাটো ক্রিকেটারদের ইনজুরি পুনর্বাসন ও চিকিৎসা নিয়ে রয়েছে বেশ সুন্দর কাঠামো। ক্রিকেটারদের নিজ থেকে কিছুই করতে হয় না। আমাদের ফুটবলের প্রক্রিয়াই ভুল। একজন সাফজয়ী ফুটবলারকে কেন ফেডারেশনের পেছন পেছন ঘুরতে হবে? ফেডারেশন সকল ব্যবস্থা করে তাকে প্রয়োজনীয় জায়গায় নিয়ে যাওয়া উচিত ছিল।’ বাফুফের কয়েকজন কর্মকর্তা ক্রিকেট বোর্ড ও ক্রিকেট নিয়ে টিপ্পনী কাটেন মাঝেমধ্যে। ফুটবলাররা ইনজুরিতে পড়লে সেই ক্রিকেট বোর্ডের চিকিৎসক দেবাশীষের কাছেই ছুটতে হয় তাদের। এটি বেশ লজ্জার বলেও মন্তব্য করেন এমিলি, ‘ফুটবল ফেডারেশন কেন একজন দেবাশীষ তৈরি করতে পারল না। অনেক ফুটবলারের ক্যারিয়ার শেষ হয়েছে ইনজুরিতে এবং চিকিৎসা না পেয়ে। বাফুফেতে এখন অনেক স্টাফ। এদের চেয়ে একজন দক্ষ স্থায়ী চিকিৎসক প্রয়োজন।’ বাফুফের নির্বাহী কমিটিতে একাধিক সাবেক জাতীয় ফুটবলার আছেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি তাদের নজরেই আসে না। তাই জাতীয় দলের আরেক সাবেক অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম ক্ষোভে এই সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতেই রাজি হননি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত