ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আরুদুজ্জামানের রাজকীয় বিদায়

আরুদুজ্জামানের  রাজকীয় বিদায়

দলের শিরোপার সঙ্গে নিজের বিদায়। এ যেন স্বপ্নের মতো এক চিত্রনাট্য। গতকাল সোমবার এমনটাই দেখা গেছে মিরপুর শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে, যার সাক্ষী ছিলেন প্রায় ১৫ হাজার দর্শক। এদিন বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তর্জাতিক কাবাডি টুর্নামেন্টের ফাইনালে হিমালয়ের দেশ নেপালকে হারিয়ে ‘ফোরট্রিক’ করে স্বাগতিক বাংলাদেশ। খেলা শুরুর আগে ঘোষণা দিয়ে, পাগড়ি পরে ম্যাট প্রদক্ষিণ করে এবং খেলা শেষে গলায় মালা পরে, হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে সতীর্থদের কাঁধে চড়ে ম্যাট প্রদক্ষিণ করেন আরুদুজ্জামান মুন্সী। বাংলাদেশের অধিনায়ক ও তারকা এই রেইডারের এটিই ছিল শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে মাঠ থেকে এমন মধুর বিদায় নেয়ার নজির খুবই কম।

ফাইনালের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতা আরুদুজ্জামান কান্নামিশ্রিত কণ্ঠে বলেন, ‘সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। লাল-সবুজের জার্সি আর খেলব না, এটা ভেবে খুব কষ্ট হচ্ছিল। আজ হোক কাল হোক, তারপরও তো বিদায় নিতে হবেই। শেষ পর্যন্ত সুন্দরভাবে বিদায় নিতে পেরেছি, এজন্য আমি সুখী।’ দলের শিরোপা জেতার প্রসঙ্গে ৩৮ বছর বয়সি আরুদুজ্জামান বলেন, ‘এবার শুরু থেকেই আমাদের টিম কম্বিনেশন অনেক ভালো ছিল। আপনারা দেখেছেন, এই আসরে অনেক ভালো ভালো দল এসেছে। কোনো টিমই দুর্বল না। আমাদের খেলার ধারাবাহিকতা এতই সুন্দর ছিল যে, শুরু থেকেই শেষ পর্যন্ত আমাদের কখনই চাপে পড়তে হয়নি। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ পারফরম্যান্স দিয়েই দলকে জেতাতে পেরেছি।’

৫ ফুট ১০ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী আরুদুজ্জামান বলেন, ‘আসলে এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। এভাবে এত আয়োজন করে, ঘটা করে আমাকে বিদায় দেয়া হবে- এটা কল্পনাও করিনি। আমাকে এত সুন্দর করে বিদায় দেয়াতে বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’ চাপ ছিল কতটা? এই প্রশ্নের উত্তরে বাগেরহাটের ছেলে আরুদুজ্জামান বলেন, ‘ফাইনালের আগে একটা মেন্টালি চাপ থাকে। কিন্তু আমি কোনো চাপ নিইনি। আমার পুরো খেলোয়াড়ি জীবনেই আমি কোনো দলকে বা কোনো প্লেয়ারকে নিয়ে কখনই চাপ নিইনি। রিলাক্সে খেলার চেষ্টা করেছি। আজকেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে আশা করেছিলাম ফাইনালে কেনিয়াই আমাদের প্রতিপক্ষ হবে। কেনিয়া হলেও আমরা এমন ব্যবধানেই জিততে পারতাম। আসলে কেনিয়া নিয়েই আমাদের একটা পরিকল্পনা ছিল। নেপালকে নিয়ে ছিল না। আগের দিন সেমিতে নেপালের খেলা দেখে আমরা একটা পরিকল্পনা সাজাই এবং সেভাবেই খেলার চেষ্টা করেছি।’ অবসর নেয়া বিষয়ে আরুদুজ্জামানের ভাষ্য, ‘আন্তর্জাতিকভাবে কাবাডি থেকে বিদায় নিলেও কাবাডি থেকে বিদায় নিচ্ছি না। বাংলাদেশের লাল-সবুজ জার্সি গায়ে আমাকে আর দেখা যাবে না মাঠে; কিন্তু কাবাডির সঙ্গেই ইনশাআল্লাহ থাকার চেষ্টা করব।’ এশিয়ান লেভেলে বাংলাদেশের ব্যর্থতা নিয়ে আরুদুজ্জামান বলেন, ‘সর্বশেষ এশিয়ান গেমসে দলে ছিলাম না। তবুও আশা করেছিলাম অন্ততঃ একটা পদক আসবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমরা একটা ম্যাচ করি, বঙ্গবন্ধু কাপে যে চাইনিজ তাইপেকে আমরা অনায়াসেই হারাই, সেই তাইপের কাছেই আমরা হেরে বসি। তবে আমি দৃঢ় আশাবাদী নেক্সট এসএ গেমসে ও এশিয়ান গেমসে আমাদের পদক থাকবে। বঙ্গবন্ধু কাপে পাকিস্তানকে আমন্ত্রণ জানালেও তারা আসেনি। তাদের কাছে সাফ গেমসে আমরা হারলেও আমি বিশ্বাস পরের সাফ গেমসে আমরা তাদের হারিয়ে রৌপ্যপদক আনতে পারব।’

২০০৯-২০২৪, দীর্ঘ ১৫ বছরের ক্যারিয়ারে ইন্দোর এশিয়ান গেমস, ২০১০ এসএ গেমস, এশিয়ান গেমস, ইন্দো-বাংলাদেশ গেমস, ২০১৪ বিচ গেমস, এশিয়ান গেমস, প্রো-কাবাডি, ২০১৬ এসএ গেমস, ২০১৬ বিশ্বকাপ, প্রো-কাবাডি, ২০১৮ এশিয়ান গেমস এবং ২০২১-২০২৪ পর্যন্ত চারটি বঙ্গবন্ধু কাপ কাবাডি টুর্নামেন্ট...। এই হচ্ছে আরুদুজ্জামানের আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলার সারমর্ম। আরুদুজ্জামান ঘরোয়া কাবাডিতে এখন খেলছেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর হয়ে। এই সংস্থায় এখন পেটি অফিসার হিসেবে চাকরিরত। এর আগে খেলেছেন বাংলাদেশ পুলিশে। সবশেষে তিনি বলেন, ‘ক্রিকেটের মতো কাবাডিতেও যদি সুযোগ-সুবিধা, পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হয় এবং জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের বেতনের আওতায় আনা হয়, তাহলে নিশ্চয়তা থেকে বলতে পারি, বাংলাদেশ একসময় অলিম্পিক থেকেও পদক নিয়ে আসতে পারবে।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত