বাংলাদেশ দলে একজন লেগ স্পিনারের আক্ষেপ বহুদিনের। আসলে আক্ষেপ বলা উচিত হবে না, উপেক্ষা বলা যায়। লেগ স্পিনার যে নেই এমনটিও না। তবে ম্যাচ খেলার সুযোগ মেলে না। টেস্ট খেলুড়ে দেশ হিসেবে লেগ স্পিনার ছাড়াই আগের বিশ্বকাপগুলোতে খেলেছেন টাইগাররা। আমিনুল ইসলাম, যুবায়ের হোসেন লিখন, মিনহাজুল আবেদীন আফ্রিদির সঙ্গে উপেক্ষিত হয়েছেন রিশাদ হোসেনও। অভিষেকের পর থেকে টি-টোয়েন্টি দলে রিশাদ পরিণত হয়েছেন নিয়মিত সদস্যে। বিশ্বকাপে প্রথমবার মাঠে নেমেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে লেগ স্পিনে ম্যাচসেরা পারফরম্যান্সে দেখিয়েছেন ঝলক। সেই প্রসঙ্গ টেনে বাংলাদেশের ক্রিকেটে লেগ স্পিনারদের সম্পর্কে প্রচলিত নেতিবাচক ধারণা ও মনোভাব তুলে ধরেছেন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে।
বাংলাদেশের জন্য একজন কার্যকর লেগ স্পিনার খুঁজে বের করার চেষ্টা দায়িত্বের প্রথম মেয়াদেও করেছিলেন প্রধান কোচ হাথুরুসিংহে। তার অধীনে তিন সংস্করণেই অভিষেক হয়েছিল জুবায়ের হোসেন লিখনের। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সমর্থন না পাওয়ায় জুবায়ের থিতু হতে পারেননি। শুধু জাতীয় দল নয়, দেশের ঘরোয়া পর্যায়েও লেগ স্পিনাররা মূলত উপেক্ষার পাত্র। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে এই পরিস্থিতিতে সামান্য উন্নতির ছোঁয়া লেগেছে। রিশাদকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে উঠে আসার জন্য বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। অনেক দিন জাতীয় দলের আশপাশে থাকার পর গত বছরের মার্চে চট্টগ্রামে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয় তার। এরপর ওয়ানডে অভিষেকের স্বাদ নেন গত ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ড সফরে। তবে দলে জায়গা পাকা ছিল না ২১ বছর বয়সি তরুণের। চলতি বছরের মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঘরের মাঠের সিরিজ দিয়ে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হন তিনি। এরপর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচেই করেন বাজিমাত। ২২ রানে ৩ উইকেট নিয়ে গত শনিবার ডালাসে শ্রীলঙ্কাকে হারানোর মূল নায়ক ছিলেন রিশাদ।
বাংলাদেশের ক্রিকেট অঙ্গনে লেগ স্পিনারদের অবস্থান নিয়ে ক্ষোভের সুর শোনা গেছে হাথুরুসিংহের কণ্ঠে, ‘আপনারা সবাই জানেন, আমাদের জন্য দলে লেগ স্পিনার নেওয়া কিছুটা চ্যালেঞ্জের। আমি কাউকে দোষ দিচ্ছি না। এটাই মূলত আমাদের সংস্কৃতি। আমরা এর (লেগ স্পিনার) মূল্য বুঝি না।’ লঙ্কানদের বিপক্ষে প্রথম দুই ওভারে ১৬ রান দিয়ে ফেলেছিলেন রিশাদ। তবে তার ওপর ভরসা হারাননি বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। ১৫তম ওভারে রিশাদকে আক্রমণে ফেরানো হলে ধরেন জোড়া শিকার। নিজের শেষ ওভারে আরেক উইকেট নিয়ে শ্রীলঙ্কার বড় পুঁজির আশা ভেস্তে দেন তিনি। তাকে সমর্থন যোগানোর বিষয়ে বাংলাদেশের কোচ বলেছেন, ‘প্রথম দুই ওভারে রান দেওয়ার পরও শান্ত শেষ দুই ওভারের জন্য ওকে বোলিংয়ে এনেছে এবং ম্যাচ বদলে দিয়েছে। শান্তকে তাই কৃতিত্ব দিতেই হবে। তো আমার মতে, আমরা এখন দল হিসেবে লেগ স্পিনের মূল্যটা বুঝতে পারছি। দলের ভেতরে আমরা তাকে সমর্থন করছি।’ এখন পর্যন্ত খেলা ১৮ টি-টোয়েন্টিতে ২১.৯৪ গড় ও ৭.০৫ ইকোনমিতে রিশাদের শিকার ১৮ উইকেট। লঙ্কানদের বিপক্ষে ২ উইকেটের নাটকীয় জয়ের ম্যাচে তার নৈপুণ্য ভীষণ তৃপ্তি দিয়েছে হাথুরুসিংহেকে, ‘আমি মনে করি, সবশেষ ম্যাচে এটিই (রিশাদের বোলিং) সবচেয়ে তৃপ্তিদায়ক ছিল। কারণ, আমরা এখন প্রায় এক বছর ধরে তাকে সমর্থন করছি। আমরা জানতাম, সে আমাদের ম্যাচ জেতাবে। আর ওই ম্যাচটি জেতানো, খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাই খুবই সন্তোষজনক ছিল (রিশাদের পারফরম্যান্স)।’