ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সাইক্লিংয়ের ‘হল অব ফেমে’ বাংলাদেশ ও রাকিবুল

সাইক্লিংয়ের ‘হল অব ফেমে’ বাংলাদেশ ও রাকিবুল

পাহাড়ে সাইক্লিং করা কঠিন কাজ। সেই কঠিন কাজের স্বীকৃতি দেয় অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এভারেস্টিং। এভারেস্টের বেইজ ক্যাম্পের মতো উচ্চতা কোনো পাহাড়ে সাইক্লিং করে আহরণ করলে স্বীকৃতি প্রদান করে এভারেস্টিং। স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সাইক্লিস্টকে তাদের ‘হল অব ফেমে’ জায়গা দেয়। বাংলাদেশের সাইক্লিস্ট রাকিবুল ইসলাম আজ সেই মর্যাদাবান ফেমে জায়গা পেয়েছেন। গতকাল বুধবার সকালে সাইক্লিস্ট রাকিবুলের এই আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি এসেছে। স্বীকৃতি আসার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘এখানে আমার ব্যক্তিগত প্রাপ্তি বলতে তেমন কিছু নেই। এই হল অফ ফেমে বাংলাদেশ ছিল না। বাংলাদেশের নাম লেখাতে চেয়েছি। দেশের নাম লেখাতে পেরেছি এটাই সবচয়ে বড় প্রাপ্তি।’

এই স্বীকৃতির পর আর্থিকভাবে লাভবান বা খুব বেশি জনপ্রিয়তাও পাবেন না রাকিবুল। এরপরও এটিকে আলাদা শক্তি হিসেবে দেখছেন তিনি, ‘শক্তির সৃষ্টি আছে, ধ্বংস নেই-রুপান্তর হয়। হল অব ফেমে বাংলাদেশের নাম আসার এক ধরনের মর্যাদা-সম্মানের শক্তি সৃষ্টি হয়েছে, যা এখন অন্যদের মধ্যে প্রবাহিত হবে।’ মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতার অর্ধেক ৪, ৪২৪ মিটার। এই উচ্চতা সাইক্লিং করে আহোরণ করতে পারলে এভারেস্ট বেইজ ক্যাম্প ব্যাজ মিলে। সাইক্লিংয়ের ব্যাপক কষ্টসাধ্য এই বিশ্বজনীন চ্যালেঞ্জটি বাংলাদেশের আগে কেউ চেষ্টা করেনি। রাকিবুলই প্রথম করেছেন। ৯ জুন রোববার সকালে তিনি খাগড়াছড়ির জিরোমাইল সমতল থেকে তারেং পাহাড়ের চূড়া পর্যন্ত টানা ১৮ বার উঠানামা করেন। উচ্চতায় অতিক্রম করেছেন ৪ হাজার ৮৩২ মিটার এবং দূরত্ব ১৪৫ কিলোমিটার। এভারেস্টিং কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য-উপাত্ত পাঠানোর পর আজ সেই স্বীকৃতি মিলেছে। খাগড়াছড়ির তারেং পাহাড় বেছে নেয়ার কারণ এবং এই চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে রাকিবুল বলেন, ‘খাগড়াছড়ির প্রতি আমার দায়বদ্ধতা রয়েছে। এই জেলায় আমি নিজে ট্রেনিং করেছি এখন ট্রেইনার হিসেবে কাজ করছি। এভারেস্টিংয়ে নাম আসলে তখন খাগড়াছড়ির পাহাড়ের নাম ও লোকেশনও আসবে। একটা পর্যটন আকর্ষণ তৈরি হবে সেই হিসেবে বেছে নেয়া।

কাজটি অবশ্যই অনেক কঠিন ছিল। তেমন বিশ্রাম না নিয়ে টানা সাইক্লিং করে পাহাড়ে উঠা নানা শর্ত পালন করে খুবই কষ্টসাধ্য। সাইক্লিং যেহেতু আমার ধ্যানজ্ঞান এজন্য চেয়েছি বাংলাদেশকে নতুন একটা উচ্চতায় নিতে।’ রাকিবুল ইসলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসিতে স্নাতকোত্তর করেছেন। সবুজ ক্যাম্পাসেই তার সাইক্লিংয়ে হাতেখড়ি। বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা শেষ করে রাজধানীর একটি শীর্ষ হাসপাতালে ফার্মাসিস্ট হিসেবে চাকরি শুরু করেন। সাইক্লিং নেশার জন্য সেই চাকরি ছেড়ে দেন। সাইক্লিং ফেডারেশন আয়োজিত জাতীয় সাইক্লিংয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন।

দেশের বাইরেও প্রতিনিধিত্ব করেছেন একাধিকবার, গিনেস বুকেও নাম লিখিয়েছেন। ফার্মাসিস্ট রাকিবুল এখন সাইক্লিং শেখানো ও ফিটনেস ট্রেইনার হয়েই জীবিকা নির্বাহ করছেন। এতে বেশ খুশিও তিনি, ‘সাইক্লিং ফেডারেশন ও সরকার থেকে আমি কোনো ভাতা বা সহায়তা পাই না। সেটা প্রত্যাশাও করি না। এই উচ্চতার রেকর্ড গড়েছি নিজের প্রচেষ্টায়। সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে হলে নাগরিকদের সুস্থ এবং কর্মক্ষম থাকতে হবে। এজন্য সাইক্লিং ও শরীর ঠিক রাখা প্রয়োজন। এগুলো শিখিয়ে মর্যাদার সঙ্গে আয় করছি এতে সন্তুষ্ট। আবার সামাজিক দায়বদ্ধতায় অনেককে ফ্রিও শেখাই।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত