ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ

সুপার এইটের দুয়ারে বাংলাদেশ

সুপার এইটের দুয়ারে বাংলাদেশ

প্রস্তুতিমূলক সিরিজ কিম্বা অফিসিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে রীতিমতো ধুকতে হয়েছে টাইগারদের। তবে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নবম আসরে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ দল। নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয়ের একেবারে কাছাকাছি গিয়েও শেষ মুহূর্তে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। ফলে বিশ্বকাপে নিজেদের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে নেদারল্যান্ডসকে হারাতেই হতো বাংলাদেশকে। তাই ডাচদের বিপক্ষে লড়াইটা কেবলই ক্রিকেটীয় স্কিলের লড়াই ছিল না। উইকেট, টুর্নামেন্ট পরিস্থিতি এবং নিজেদের সাম্প্রতিক ফর্ম মিলিয়ে পাহাড় প্রমাণ চাপের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে লড়াই করতে হয়েছে টাইগারদের। তবে সাকিব আল হাসানের লড়াইটা ছিল ব্যক্তিগত মর্যাদা রক্ষার।

স্নায়ুক্ষয়ী সেই লড়াই শেষে জিতলেন সাকিব আর বাংলাদেশই। সাকিবের ব্যাটিং, মোস্তাফিজ-রিশাদের বোলিং আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে সেইন্ট ভিন্সটাউনে বাংলাদেশ নেদারল্যান্ডসকে হারিয়েছে ২৫ রানের ব্যবধানে। শেষ ৬ ওভারে নেদারল্যান্ডসের প্রয়োজন ৫৬ রান। প্রথম তিন বলে ৭ রান দিলেন রিশাদ হোসেন। তবে পরের তিন বলে তিনি নিলেন ২ উইকেট। এতেই ঘুরে গেল ম্যাচের মোড়। পরের ওভারে রিশাদ ধরলেন আরো এক শিকার। তার সঙ্গে ডেথ ওভারে দুর্দান্ত বোলিং করলে মোস্তাফিজুর রহমান। লক্ষ্যের কাছাকাছিও যেতে পারল না নেদারল্যান্ডস। গত বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশের ১৬০ রানের লক্ষ্যে ৮ উইকেটে ১৩৪ রানের বেশি করতে পারেনি নেদারল্যান্ডস। অনায়াস জয়ে সুপার এইটে এক পা দিয়ে রাখল বাংলাদেশ।

তিন ম্যাচের বাংলাদেশের ঝুলিতে এখন ৪ পয়েন্ট। তাদের জয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে তিন ম্যাচে ১ পয়েন্ট পাওয়া শ্রীলঙ্কার বিদায়। নেপালের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে পরাজয় এড়াতে পারলেই আর কোনো হিসেব-নিকেশ ছাড়া সুপার এইটে চলে যাবে নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্বাধীন দল। শেষ দিকে রিশাদ ও মোস্তাফিজের চমৎকার বোলিংয়ের আগে ব্যাট হাতে দলকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেন সাকিব আল হাসান। ১৯ ইনিংস বিরতির পর করা ফিফটিতে ৪৬ বলে তিনি খেলেন ৬৪ রানের ইনিংস। পরে বল হাতেও শেষ দুই ওভারে রানের চাকা আটকে রাখেন অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার। বাংলাদেশের ২৫ রানের জয়ে সাকিবই জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। বিশ্বকাপে এ নিয়ে ৪ বার এই স্বীকৃতি পেলেন অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার। টুর্নামেন্টে তার চেয়ে এই পুরস্কার জিতেছেন শুধু ৫ ক্রিকেটার।

উইকেটের সুবিধা কাজে লাগিয়ে মোস্তাফিজ করেন অসাধারণ বোলিং। বিশেষ করে ডেথে ১৭ ও ১৯তম ওভার মিলিয়ে তিনি দেন মাত্র ৪ রান, বিপরীতে নেন ১টি উইকেট। সব মিলিয়ে ৪ ওভারে ১২ রান খরচ করেন তিনি। প্রথম দুই ওভারে ১৯ রান দেওয়া রিশাদ শেষ দিকে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ান। মাত্র ১৪ রানে নেন ৩ উইকেট। ১৫তম ওভারে তার জোড়া উইকেটেই মূলত ঘুরে যায় ম্যাচ। পরে শেষ ওভারেও আরেক শিকার ধরেন রিশাদ। বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত তিন ম্যাচে তার শিকার ৭ উইকেট। নেদারল্যান্ডসের রান তাড়ায় পঞ্চম ওভারে প্রথম আঘাত হানেন তাসকিন আহমেদ। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে আরেক ওপেনার ম্যাক্স ও’ডাওডকে ফেরান তানজিম হাসান। এরপর ভিক্রাম সিংয়ের পাল্টা আক্রমণে দ্রুত কিছু রান তোলে ডাচরা। দশম ওভারে মাহমুদউল্লাহ আক্রমণে এলে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে মারায় চেষ্টায় স্টাম্পড হন ৩ ছক্কায় ১৬ বলে ২৬ রান করা ভিক্রাম। পরে সাইব্রান্ড এঙ্গেলব্রেশটকে নিয়ে এগোতে থাকেন স্কট এডওয়ার্ডস। ১৩ ওভারে ৯৯ রান করে ফেলে নেদারল্যান্ডস। পরের ওভারে মাত্র ৫ রান দেন সাকিব। রানের চাপ বোধ করেই হয়তো রিশাদের লেগ স্পিনে দূর থেকে খেলতে গিয়ে ক্যাচ দেন ২২ বলে ৩৩ রান করা এঙ্গেলব্রেশট। তার বিদায়ে ভাঙে ৪২ রানের জুটি। এরপর ধীরে ধীরে শুধু পেছাতেই থাকে ডাচরা।

১৭তম ওভারে আক্রমণে ফিরে প্রথম বলেই এডওয়ার্ডসের উইকেট নেন মোস্তাফিজ। এতেই অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের জয়। পরে নিজের বলে রিশাদের দারুণ ক্যাচে ফেরেন লোগান ফন বিক। শেষ দিকে টিম প্রিঙ্গল কোনোভাবেই খেলতে পারছিলেন না মোস্তাফিজকে। ১ রান করতে তিনি খেলেন ১০টি বল। ম্যাচের শেষ বলে তাকে বোল্ড করে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন তাসকিন।

এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে আরো একবার হতাশ করেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও লিটন কুমার দাস। দ্বিতীয় ওভারে আরিয়ান দত্তের বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দেন শান্ত। আরিয়ানের পরের ওভারে সুইপ করে ডিপ স্কয়ার লেগে ধরা পড়েন লিটন। চাপের মধ্যে পাল্টা আক্রমণে পথে হাঁটেন তানজিদ হাসান ও সাকিব। তৃতীয় ওভারে ভিভিয়ান কিংমার বলে দুই চারের সঙ্গে এক ছক্কায় ১৮ রান নেন তানজিদ। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে লোগান ফন বিকের বলে সাকিব মারেন ৪টি চার। সব মিলিয়ে আসে ১৯ রান। এরপর কিছুটা চেপে ধরে নেদারল্যান্ডস। পরের চার ওভারে আসে মাত্র ২২ রান। নবম ওভারে পল ফন মেকেরেনের বলে বড় শটের খোঁজে ডিপ স্কয়ার লেগ সীমানার অনেক ভেতরে ধরা পড়েন তানজিদ। ৫ চার ও ১ ছক্কায় ২৬ বলে ৩৫ রান করেন বাঁহাতি ওপেনার।

আগের দুই ম্যাচে দারুণ ব্যাটিং করা তাওহিদ হৃদয় এদিনই একদমই ছন্দ খুঁজে পাননি। শুরু থেকেই ধুঁকতে ধুঁকতে প্রিঙ্গলের বলে বোল্ড হন তরুণ মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান। ৯ রান করতে তিনি খেলেন ১৫ বল। পঞ্চম উইকেট জুটিতে সাকিবকে নিয়ে চাপ সামাল দেন মাহমুদউল্লাহ। দুজন মিলে ৩২ বলে গড়ে তোলেন ৪১ রানের জুটি। ৩৮ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন সাকিব। এর আগে সবশেষ ২০২২ সালের অক্টোবরে ৫০ করেছিলেন তিনি। ১৯ ইনিংস পর করেন ক্যারিয়ারের ১৩তম ফিফটি। বিশ্বকাপে এটি তার চতুর্থ। সাকিবের পঞ্চাশ ছোঁয়ার পরের বলে ড্রেসিং রুমে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ। ২টি করে চার-ছক্কায় ২১ বলে ২৫ রান করেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। শেষ দিকে ১৫ বলে ২৯ রান যোগ করেন সাকিব ও জাকের আলি।

৯ চারে নিজের ইনিংস সাজান সাকিব। ৩ চারে ৭ বলে ১৪ রান করেন জাকের। নেদারল্যান্ডসের পক্ষে৪ ওভারে মাত্র ১৫ রানে ২ উইকেট নেন ফন মেকেরেন। আরিয়ান ১৭ রানে ধরেন সমান ২ শিকার। এই জয়ের মাধ্যমে কার্যত বাংলাদেশ সুপার এইটে এক পা দিয়ে রাখলো। বল হাতে কোনো উইকেট না পেলেও ব্যাট হাতে অপরাজিত ৬৪ রান এবং নিজের স্পেলের শেষ দুই ওভারে মাত্র ১০ রান দিয়ে আয়ারল্যান্ডের উপরে চাপ তৈরির পুরস্কার হিসেবে ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হয়েছেন সাকিব আল হাসান।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত