ঈদের আনন্দ বাড়িয়ে দিতে চান সাকিব

প্রকাশ : ১৫ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

গত বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপের সময় থেকেই বড্ড দুঃসময় পার করছিলেন সাকিব আল হাসান। চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও সেটি অব্যাহত ছিল। অবশেষে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে হাসল তার ব্যাট। বাংলাদেশও সহজ জয়ে সুপার এইটে এক পা দিয়ে রাকল। গ্রুপ পর্বে বাকি আর একটি ম্যাচ। সে ম্যাচ জিতলেই সুপার এইট নিশ্চিত হবে টাইগাররদের। আর সেই ম্যাচটি হবে ঈদ-উল-আযহার দিন। ওই ম্যাচ জিতে দেশের মানুষের ঈদ আনন্দ বাড়িয়ে দিতে চান সাকিব আল হাসান। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার পর নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে সুপার এইটের দুয়ারে পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ। আগামী সোমবার বাংলাদেশ সময় ভোর সাড়ে ৫টায় গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচে নেপালের মুখোমুখি হবে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। ওই ম্যাচে পরাজয় এড়াতে পারলেই ২০০৭ সালের পর আবার সুপার এইটে নাম লেখাবে তারা। প্রায় ১৫ হাজার কিলোমিটার দূরের দেশে সেদিন প্রথম প্রথরে নেপালকে হারিয়ে ঈদ উৎসবে বাড়তি মাত্রা যোগ করার আশা সাকিবের। নেদারল্যান্ডসকে হারানোর পর সংবাদ সম্মেলনে অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার বললেন, নেপালকে হারাতেও তারা মুখিয়ে আছেন। ‘অবশ্যই নেপালের সঙ্গে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। জিততে পারলে আমরা দ্বিতীয় রাউন্ডে যাব। আমাদের জন্য অনেক বড় একটা অর্জন হবে। তাই স্বাভাবিকভাবেই আমরা মুখিয়ে আছি সামনে ম্যাচের জন্য। ঈদের দিন, মুসলমান যারা আছি তাদের জন্য আনন্দের একটা দিন। বিশেষ করে বাংলাদেশে সবাই উদযাপন করে। অন্য ধর্মের মানুষরাও আসলে ঈদের দিন আনন্দ করে। তো আশা করব, এরকম ঈদের একটা দিনে তাদের মুখে আরও বেশি হাসি ফোটাতে পারব।’ নেপালকে হারিয়ে ঈদের আনন্দ বাড়ানোর জন্য বড় চাবি থাকবে সাকিবেরই হাতে। শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচে ব্যাটে-বলে বিবর্ণ এই অলরাউন্ডার জ্বলে উঠেছেন ডাচদের বিপক্ষে। চার নম্বরে নেমে খেলেছেন ৪৬ বলে ৬৪ রানের ইনিংস। পরে বোলিংয়ে উইকেট না পেলেও শেষ দিক দারুণ দুটি ওভারে আটকে রেখেছেন নেদারল্যান্ডসের ব্যাটসম্যানদের। বিশ্বকাপে প্রায় ৮ বছর ও ১৭ ইনিংস পর এবং সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১৯ ইনিংস পর পঞ্চাশের দেখা পেলেন সাকিব। মাঝের সময়ে ব্যাটিং যে খুব খারাপ করেছেন তা নয়। তবে চোখের সমস্যা দেখা দেওয়ার পর চলতি বছর প্রথম ছয় ইনিংসে সাবলীল ব্যাটিং করতে দেখা যায়নি তাকে। ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ে কিংবা বিশ্বকাপের আগে যুক্তরাষ্ট্র সিরিজে সাকিবের ব্যাটিংয়ে অস্বস্তি ছিল স্পষ্ট। পরে বিশ্বকাপেও শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শর্ট বলের সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ করে নিজের উইকেট দিয়ে আসেন তিনি। ব্যাটিংয়ের খারাপ সময়ের সঙ্গে যোগ হয় বল হাতে তেমন সাফল্য না পাওয়া। চলতি বছর ৮ ইনিংসে সাকিবের উইকেট ছয়টি। এর মধ্যে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এক ম্যাচেই নেন চারটি। পরের ৭ ম্যাচে তার উইকেট শুধু দুটি। তবে ইকোনমি বেশ ভালো, ৬.৭২। নেদারল্যান্ডস ম্যাচেও যেমন প্রথম দুই ওভারে ১৯ রান খরচ করলেও শেষ দুই ওভারে মাত্র ১০ রান দিয়ে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোয় বড় অবদান রাখেন সাকিব। ব্যাটে-বলে কৃতিত্ব দেখিয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কারটাও জেতেন তিনি। অথচ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আনরিখ নরকিয়ার বাউন্সারে বাজেভাবে ক্যাচ দেওয়ার পর সাকিবকে নিয়ে শুরু হয় নানান সমালোচনা। ভারতের সাবেক ওপেনার ভিরেন্দার শেবাগ তো কটাক্ষ করে সরাসরি বলেই দেন, এখন অবসর নেওয়া উচিত সাকিবের। পরের ম্যাচেই দলকে জেতানোর পর সাকিবের সামনে রাখা হলো সেই প্রসঙ্গ। দীর্ঘ দিন পর রানে ফেরা, ম্যাচ সেরা পারফরম্যান্স কোনো রকমের জবাব দেয়া কি না, জানতে চাওয়া হলে দলের জন্য অবদান রাখতে পারার তৃপ্তির কথা বলেন তিনি। ‘একজন ক্রিকেটার কখনও কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে আসে না। ক্রিকেটারের কাজ হলো, সে যদি ব্যাটসম্যান হয় রান করা, দলের জন্য অবদান রাখা। সে যদি বোলার হয়, তার কাজ হচ্ছে ভালো বোলিং করা। উইকেট পাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার থাকে। সে যদি ফিল্ডার হয়, তার কাজ হচ্ছে প্রতিটা রান বাঁচানো, যতগুলো ক্যাচ যায়, ততগুলো ধরা।’ সাকিব আল হাসান আরও বলেন, ‘এখানে আসলে কাউকে উত্তর দেওয়ার কিছু নেই। আমি মনে কই, একজন ক্রিকেটারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো, দলের হয়ে সে কতটা কৃতিত্ব রাখতে পারে। সেটা যখন রাখতে পারে না, স্বাভাবিকভাবেই কথা হবে। আমি মনে করি সেটা খুব বেশি খারাপ কিছুও না।’ অবশ্য শুধু শেবাগ নয়, দেশেও সামাজিক মাধ্যম থেকে শুরু করে সংবাদ মাধ্যমেও সাকিবের সাম্প্রতিক ফর্ম নিয়ে হয়েছে অনেক আলোচনা। চোখের সমস্যার কারণে তার নতুন স্টান্স ও নড়বড়ে হেড পজিশনে হওয়া ব্যাটিংয়ের অস্বস্তির কারণে সাকিবের শেষটাও দেখে ফেলেছিলেন কেউ কেউ। সেসব আলোচনা আর বাড়তে না দিয়ে ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্সের পর সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন সাকিব। ‘আলহামদুলিল্লাহৃ আল্লাহ সবসময় আমার প্রতি অনেক দয়াশীল। এরকম পরিস্থিতি যখনই আসে, আল্লাহ ভালো কিছু দিয়ে দেন। তার প্রতি শুকরিয়া যে ভালো কিছু করতে পেরেছি।