প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে এসে চমক দেখিয়ে সুপার এইটে জায়গা করে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইতিহাস গড়ার পাশাপাশি পাকিস্তানের হৃদয় ভেঙেছে নবম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সহ-আয়োজকরা। চলতি আসরের উদ্বাধনী ম্যাচে কানাডাকে হারিয়ে বিশ্বকাপযাত্রা শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্রের। নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তানকে সুপার ওভারে হারিয়ে বিশ্ববাসীকে নিজেদের শক্তিমত্তার কথা জানান দিয়েছিলো নবাগত দলটি। তারা ভারতের বিপক্ষেও জাগিয়েছিলো জয়ের সম্ভাবনা। গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে আয়ারল্যান্ডকে হারিয়েই সুপার এইটের টিকিট নিশ্চিত করতে চেয়েছিল স্বাগতিকরা। তবে কষ্ট করতে হয়নি তাদের। বৃষ্টির কারণে ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ায় শেষ আটে জায়গা করে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আগের দিনের ভারী বৃষ্টিতে আউটফিল্ড ছিল ভেজা। ম্যাচ শুরুর চেষ্টায় কাজ করেন মাঠ কর্মীরা। দফায় দফায় পরিদর্শন করেন আম্পায়াররা। শেষ দিকে যখন মাঠে খেলার জন্য প্রায় প্রস্তুত, তখনই আবার আসে বেরসিক বৃষ্টি। তাতে শেষ পর্যন্ত বৃষ্টির পেটেই যায় ম্যাচটি। মূল্যবান এক পয়েন্ট নিয়ে সুপার এইটে নাম লেখায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বিদায় ঘণ্টা বেজে যায় পাকিস্তান ও আয়ারল্যান্ডের।
গতকাল শুক্রবার আয়ারল্যান্ড এবং যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাচ বৃষ্টি-বজ্রপাতে পরিত্যক্ত হয়। পয়েন্ট ভাগাভাগিতে যুক্তরাষ্ট্র ১ পয়েন্ট পেয়ে যায়। পাকিস্তানকে হারানোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র জয় পায় কানাডার বিপক্ষে। দুই জয়ে ৪ পয়েন্টের সঙ্গে প্রকৃতির কারিশমায় তাদের পুঁজিতে আরো ১ পয়েন্ট। প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে এসেই তারা এখন সুপার এইটে। আয়োজকরা প্রথম রাউন্ডের পর দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলবে, বিশ্বকাপ শুরুর আগে এমন বাজি ধরার লোক ছিল না। কিন্তু পাকিস্তানের তালগোল পাকানো পারফরম্যান্সেই সব ওলটপালট। অস্ট্রেলিয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের রানার্সআপ পাকিস্তান। ইংল্যান্ড তাদের দ্বিতীয় শিরোপা পায়। পাকিস্তান ২০০৭ সালের পর হেরে যায় আরেকটি ফাইনাল। এবার সুপার এইটে পাকিস্তানের না খেলাটা সত্যিই বিব্রতকর। টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশিবার সেমি ফাইনাল খেলেছে তারা। রেকর্ড ছয়বার। অথচ শিরোপা জিতেছে একবার। ফাইনাল খেলেছে আরো দুইবার। এবার বাবর আজমের দল প্রথম রাউন্ডেই বিদায়। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে তাদের হারই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে জয়ের অবস্থানে থেকে শুরুতে ম্যাচ টাই করে। পরে সুপার ওভারে অদ্ভুত এবং প্রশ্নবিদ্ধ পারফরম্যান্সে তারা ম্যাচ হেরে যায়। পরের ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে একই কাণ্ড। ভারতের বিপক্ষে যখন তারা জয় দেখছিল, ম্যাচ যখন তাদের হাতের মুঠোয়, জয় কেবল সময়ের অপেক্ষা ঠিক তখন নিষ্প্রাণ ক্রিকেটে ম্যাচটা প্রতিবেশী দেশকে স্রেফ উপহার দিয়ে আসেন তারা। বিশ্বকাপ মঞ্চে টানা দুই হারে পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের নিয়ে শুরু হয় কড়া সমালোচনা। বাবর আজমের নেতৃত্ব, খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স, নিবেদন, ফিটনেস এসব নিয়েও প্রশ্ন উঠতে থাকে। সাবেক ক্রিকেটাররা তাদেরকে স্রেফ ধুয়ে দেন গণমাধ্যমে। সঙ্গে নির্বাচক এবং পিসিবির সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। দল নির্বাচনে পক্ষপাত করা হয়েছে এমন অভিযোগও উঠেছে। পাকিস্তান তৃতীয় ম্যাচে কানাডাকে হারিয়ে চেনা রূপে ফিরলেও শেষ ম্যাচের আগেই তাদের শিবিরে বাদ পড়ার দুঃসংবাদ পৌঁছে যায়। আমির, আফ্রিদি, নাসিম, হারিস রউফদের নিয়ে দলটির পেস আক্রমণ। স্পিন অলরাউন্ডার হিসেবে ইমাদ ওয়াসিম ও শাদাব খান ছিলেন। বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ান, ফখর জামান, ইফতেখার আহমেদরা ছিলেন ব্যাটিংয়ের দায়িত্ব সামলানোর জন্য। কিন্তু অবাক করার মতো ব্যাপার, এই বিশ্বকাপে পাকিস্তানের কোনো বিভাগই পারেনি জ্বলে উঠতে। ব্যাট-বলের পারফরম্যান্স নেই। নেই মনে রাখার মতো কোনো বোলিং স্পেল কিংবা ব্যাটিং ইনিংস। বরং প্রশ্ন তোলার মতো বেশ কয়েকটি ঘটনাই রয়েছে।
প্রথম ম্যাচে শেষ ওভারে বাবরের ফিল্ডিং সাজানো, সুপার ওভারে আমির তিন ওয়াইডসহ ৭ রান দেওয়া, ব্যাটিংয়ে বাঁহাতি পেসারের বিপক্ষে বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে ব্যাটিংয়ে না পাঠানোৃসব কিছুতেই রয়েছে রহস্য। দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে রিজওয়ানের ধীরগতির ব্যাটিং, থিতু হওয়ার পরও ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ না পাল্টানো, ইমাদের স্ট্রাইক রোটেট সমস্যা, ইফতেখারের পাওয়ার হিটিংয়ে দুর্বলতা বের হয়। ওই ম্যাচ হারের পর নাসিম শাহ চোখের জলে মাঠ ছেড়েছিলেন। বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়ে এখন হয়তো গোটা দলেরই এক অবস্থা। আবার নাও হতে পারে! দলটাই যে আনপ্রেডিক্টেবল। যুক্তরাষ্ট্র সেমি ফাইনালে উঠায় তারা ২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। পাকিস্তানও নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে। এবারের বিশ্বকাপে যারা সুপার এইটে খেলবে, স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা এবং র্যাংকিংয়ে পরের তিনটি দল সরাসরি ২০২৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলবে। পাকিস্তান এবং নিউ জিল্যান্ড নিশ্চিতভাবেই র্যাংকিংয়ে সেরা তিনেই থাকবে। তৃতীয় দলটি হতে পারে আয়ারল্যান্ড।