সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন ফিকে

প্রকাশ : ২৪ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

সুপার এইটের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ভারতের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করলেন টাইগাররা। তাতে চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন কার্যত শেষ বাংলাদেশের জন্য। শেষ আটের লড়াইয়ে টানা দ্বিতীয় হারে ট্র্যাক ছিটকে গিয়েছে লাল-সবুজ দল। এ ম্যাচেও হতশ্রী পারফর্ম করছেন ব্যাটাররা। তাইতো বাংলাদেশের ব্যাটারদের পারফরম্যান্স নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

বিশ্বকাপের শুরু থেকেই ছন্দে নেই টপঅর্ডার ব্যাটাররা। ব্যাটারদের মধ্যে নিবেদনে প্রবল ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়েছে। তাদের মধ্যে লড়াইয়ের কোনো তাড়নাই নেই। বিশ্বকাপের মতো আসরে যে জৌলুস থাকার কথা, যে শরীরী ভাষা থাকার কথা তা একদমই সেটা ছিল না। সব চেয়ে বড় চমক হল ভারতের বিপক্ষে অধিনায়ক শান্ত টস জিতে নিলেন ফিল্ডিং। তবে টিম ম্যানেজম্যান্ট বড় চমকে দেয় একাদশ নির্বাচনে। তাসকিন আহমেদকে রাখা হয় একাদশের বাইরে। কিন্তু তার বদলে শরিফুল ইসলামকে নয়, সুযোগ দেয়া হয় জাকের আলিকে। তাতে বোলিং হয়ে পড়ে কিছুটা ধারহীন। ব্যাটিংয়ে শক্তি বাড়ালেও সেটির কোনো প্রভাব দেখা যায়নি ব্যাটিংয়ের ধরন কিংবা তাড়নায়। টস জিতে বোলিংয়ে নামা বাংলাদেশের বোলিংয়ের শুরুটা ছিল কৌতূহল জাগানিয়া। দুই ডানহাতি ব্যাটসম্যানের সামনে শেখ মেহেদি হাসানকে আক্রমণে আনেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। ম্যাচের প্রথম বলেই উড়িয়ে মেরে দুটি রান আদায় করেন রোহিত শার্মা। ওভারের শেষ বলে মারেন বাউন্ডারি। নতুন বলে আরেকপ্রান্তে সাকিব আল হাসানের শুরুটা ছিল আরো খরুচে। তবে দুই ওভারে দুটি ছক্কা ও দুটি চার হজমের পর প্রথম উইকেট পান বাংলাদেশের অভিজ্ঞ অলরাউন্ডারই। জায়গা বানিয়ে উড়িয়ে মারার চেষ্টায় রোহিত বিদায় নেন ১১ বলে ২৩ রান করে। কোহলি ও রিশাভ পান্তের ব্যাটে তবু ছুটতে থাকে ভারত। মোস্তাফিজুর রহমানের লেংথ বলে অসাধারণ এক শটে ছক্কা মারেন কোহলি, রিশাদ হোসেনকে প্রথম ওভারে উড়িয়ে দেন মাথার ওপর দিয়ে।

নবম ওভারে জোড়া উইকেট নিয়ে একটু রাশ টেনে ধরেন তানজিম হাসান। প্রথমটি বলা যায় উপহার। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে বোল্ড হন কোহলি। আগের চার ইনিংস মিলিয়ে ২৯ রান করা ব্যাটসম্যান ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিলেন ৩ ছক্কায় ২৮ বলে ৩৭ রানের ইনিংসে। সুরিয়াকুমার ইয়াদাভ নেমে প্রথম বলেই বাউন্সারে হুক করে উড়িয়ে দেন ছক্কায়। পরের বলেই বাড়তি লাফানো দারুণ ডেলিভারিতে তাকে ফিরিয়ে শোধ তোলেন তানজিম। তবে ভারতকে চাপে পড়তে দেননি রিশাভ পান্ত। মুস্তাফিজের এক ওভারে এক ছক্কা দুটি চার মারেন তিনি। রিশাদকে টানা দুই বলে মারেন ছক্কা ও চার। এই লেগ স্পিনারকে রিভার্স সুইপ করে পান্তের ইনিংস থামে ২৪ বলে ৩৬ রানে। শিভাম দুবে ও হার্দিক পান্ডিয়া এরপর সময় নেন কিছুটা। পরে তা পুষিয়েও দেন দুজন। রানের জোয়ার ফিরে আসে আবার।

রিশাদকে বিশাল এক ছক্কার পর স্লগ করার চেষ্টায় বোল্ড হন দুবে (২৪ বলে ৩৪)। তবে শেষ দিকের দাবি মিটিয়ে ভারতকে বড় স্কোরে নিয়ে যান পান্ডিয়া। শেষ তিন ওভারে তিনটি করে ছক্কা ও চার আসে তার ব্যাট থেকে। ইনিংসের শেষ বলে বাউন্ডারিতে ফিফটি স্পর্শ করেন তিনি ২৭ বলে। শেষ ৬ ওভারে ভারত তোলে ৭৬ রান। এই রান তাড়ায় প্রয়োজন ছিল উড়ন্ত শুরু। কিন্তু বাংলাদেশের টপ অর্ডার তো বহুদিন ধরেই ডানাভাঙা পাখির মতো ভূপাতিত হয়ে ছটফট করছে! এই ম্যাচেও দাওয়াই মেলেনি। প্রথম চার ওভারে তানজিদ হাসান চারটি বাউন্ডারি মারলেও অনেক বল থেকে রান করতে পারেননি। রানের গতিও তাই প্রত্যাশিত হয়নি।

দীর্ঘদিন ধরে ছন্দহীন লিটন কুমার দাস একটি ছক্কার পর আউট হয়ে যান ১০ বলে ১৩ করে। তানজিদের ব্যাট প্রায় থমকে যায় এরপর। শান্তর শুরুটাও হয় মন্থর। পঞ্চাশ ছুঁতেই বাংলাদেশের লেগে যায় ৮ ওভার।

পান্ডিয়ার এক ওভারে দুটি ছক্কা মেরে শান্ত জেগে ওঠেন। কিন্তু এত বড় রান তাড়ায় তো স্রেফ এইটুকুই যথেষ্ট নয়। চতুর্থ ওভারের পর ১০ ওভার পর্যন্ত আর বাউন্ডারির দেখা পাননি তানজিদ। কুলদিপ ইয়াদাভের গুগলিতে আউট হন ৩১ বলে ২৯ রান করে। স্পিনের বিপক্ষে ঝড় তুলতে পারতেন যিনি, সেই তাওহিদ হৃদয়ও কাবু হয়ে যান কুলদিপের স্পিনে। এরপর বলা যায় কেবল পরাজয়ের ব্যবধান কমানোর চেষ্টা। সেখানে কিছুটা সফল হন কেবল রিশাদ হোসেন। কুলদিপকে ছক্কা মারার পরের বলে আউট হয়ে যান সাকিব। তিনটি ছক্কা মারলেও ৩২ বলে শান্ত করতে পারেন ৪০ রান। রিশাদ ৩ ছক্কায় ১০ বলে ২৪ করে কিছুটা বিনোদন উপহার দেন।

অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ শেষদিকে দৃষ্টিকটূ ব্যাটিংয়ে ১৫ বলে করেন ১৩ রান। গোটা ম্যাচে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সের প্রতীকী হয়ে থাকে যেন এটা। সুপার এইটে বাংলাদেশের পরের ম্যাচ আফগানিস্তানের বিপক্ষে মঙ্গলবার সকালে। অতি নাটকীয় কিছু না হলে এবারের আসরে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচ সেটিই।