ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাংলাদেশের স্বপ্ন ভেঙে আফগানিস্তানের ইতিহাস

বাংলাদেশের স্বপ্ন ভেঙে আফগানিস্তানের ইতিহাস

মোটা অঙ্কের বেতন-ভাতা, বিদেশি কোচিং স্টাফসহ অধুনিক সব সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। অপরদিকে ক্ষুদা দরিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করা আফগানিস্তানের এত সুযোগ-সুবিধা নেই। এত সুযোগ-সুবিধা পেয়েও দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে টাইগাররা। অথচ যুদ্ধ বির্ধ্বস্ত হয়েও তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে আফগানরা। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে রুপকথার মতোই তাদের পথচলা।

নবম আসরের সুপার এইটে নিজেদের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান। সেমিফাইনালে উঠতে উভয় দলের সামনে ছিল সমীকরণ। হাতছানি ছিল বাংলাদেশের সামনেও। সুযোগও তৈরি হয়েছিল। কিন্তু প্রশ্নবিদ্ধ কৌশল ও ব্যাটিং অর্ডার, ব্যাটারদের আরও একবার ব্যর্থতায় সেই সুযোগ তারা হারিয়ে ফেলে। এরপর লড়াইটা ছিল মূলত আফগানিস্তান আর অস্ট্রেলিয়ার। বাংলাদেশ জিতে গেলে সেমিফাইনালে উঠে যেত অস্ট্রেলিয়াই। কিন্তু একই সঙ্গে বাংলাদেশ ও অস্ট্রলিয়ার আশা গুঁড়িয়ে স্বপ্নের মঞ্চে পা রাখে আফগানরা।

মূলত, ১৩তম ওভারেই বাংলাদেশ সমীকরণ থেকে ছিটকে যাওয়ায় এই ম্যাচে না থেকেও প্রবলভাবে ছিল অস্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে ছিল তারা, বাংলাদেশ জিতলেই যে মিচেল মার্শের দল উঠত সেমিফাইনালে। অজিদের আশার পালে হাওয়া দিচ্ছিলেন দারুণ খেলতে থাকা লিটন দাস। তবে বাংলাদেশের ওপেনারকে সঙ্গ দিতে পারলেন না আর কেউ। তাকে রেখে আউট হয়ে গেলেন বাকি সবাই। দফায় দফায় বৃষ্টি, নানান সমীকরণের হিসাব আর প্রবল উত্তেজনায় ঠাসা ম্যাচ শেষ পর্যন্ত জিতে নিল আফগানিস্তান। প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠার গৌরব অর্জন করল তারা।

গতকাল মঙ্গলবার সেন্ট ভিনসেন্টে সুপার এইটের অঘোষিত কোয়ার্টার ফাইনালে ডিএলএস মেথডে আফগানরা জিতেছে ৮ রানে। আগে ব্যাট করে ১১৫ রান করে তারা। জবাবে বৃষ্টির বাগড়ায় এক পর্যায়ে ১৯ ওভারে ১১৪ রানের নতুন লক্ষ্যের পেছনে ছুটে ১০৫ রানে অলআউট হয় নাজমুল হোসেন শান্তর দল। তখনও বাকি ছিল ৭ বল। ৪৯ বলে দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৫৪ রান করে অপরাজিত থাকেন ওপেনার লিটন। রান তাড়ায় ১২.১ ওভারে জিতলে অভাবনীয়ভাবে সেমিফাইনালে উঠত বাংলাদেশ। এমন অবস্থায় লক্ষ্য তাড়ায় শুরু থেকে আগ্রাসী খেলেন লিটন। প্রথম ওভারে চার-ছক্কায় শুরু করেন তিনি। কিন্তু আরেক পাশে পড়তে থাকে একের পর এক উইকেট। কোনো রান না করেই আউট হন তানজিদ হাসান তামিম। অধিনায়ক শান্ত টিকতে পারেননি। সাকিব আল হাসান ফেরেন গোল্ডেন ডাকের তেতো স্বাদ নিয়ে। ২ ওভারে ২৩ রান আনলেও তাই ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। এরপর বৃষ্টিতে আরেক দফা বন্ধ থাকে খেলা। বেশ খানিকটা সময় হারিয়ে গেলেও ওভার কাটা যায়নি। তবে কাটা পড়েন সৌম্য সরকার। মারার অভিপ্রায়ে ছিলেন তিনি, হয়নি। রশিদ খানের গতিময় ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি। ছয়ে নামেন তাওহিদ হৃদয়। নেমেই জীবন পেয়ে মারেন দুই চার। তবে রশিদকে ছক্কা মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ৯ বলে ১৪ রান করে। লিটন আরেক পাশে টিকে আশা জারি রাখছিলেন। তাড়নাও ছিল তার মাঝে। একপর্যায়ে, সেমিতে ওঠার জন্য সমীকরণ ছিল ১৯ বলে ৪৩ রানের। কিন্তু অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ওই অবস্থায় খেলেন মন্থর ইনিংস। ৯ বলে ৬ রান করে তিনি আউট হওয়ার পর সমীকরণ থেকেও ছিটকে যায় বাংলাদেশ। তার আউটের পর রিশাদ হোসেন এসেই বোল্ড হয়ে যান। নিজেদের সেমির স্বপ্ন শেষ হয়ে যাওয়ায় ম্যাচটা জেতার চেষ্টা করতে থাকে বাংলাদেশ। তানজিম হাসান সাকিবকে নিয়ে লিটন এগোতে থাকলেও তানজিম বাজে শটে দেন আত্মাহুতি। তার আউটে ভাঙে ১২ রানের জুটি। এরপর তাসকিন আহমেদকে সঙ্গী করে জেতার সম্ভাবনা জাগাচ্ছিলেন লিটন। ৪১ বলে স্পর্শ করেন ফিফটি। ১৭ ইনিংস পর ফিফটি করে বাংলাদেশের জয়ের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার আশাও বাড়াচ্ছিলেন তিনি। মাঝে আরেক দফা বৃষ্টিতে ম্যাচ বিলম্ব হলে ১৯ ওভারে নেমে আসে খেলা। ১৮তম ওভারে ভুল করে ফেলেন তাসকিন। নাভিন উল হকের বলে বোল্ড হয়ে যান তিনি। আবার বৃষ্টি বিরতির পর মোস্তাফিজুর রহমানকে এলবিডব্লিউ করে স্মরণীয় প্রাপ্তির উল্লাসে মাতোয়ারা হয় আফগানরা। অন্য প্রান্তে ৫৪ রান করে অপরাজিত থেকে যান লিটন। এর আগে টস জিতে সতর্ক শুরু করে আফগানিস্তান। কঠিন উইকেটের সুবিধা কাজে লাগিয়ে তাদের দ্রুত রান আনতে দেয়নি বাংলাদেশ। ওপেনিং জুটিতে ৫৯ ও দ্বিতীয় উইকেটে ২৫ আসার পর পথ হারায় তারা। তবে শেষ দিকে রশিদ করেন দারুণ ব্যাটিং। তানজিমকে শেষ ওভারে মারেন দুই ছক্কা। এসব ছোট ছোট মুহূর্তই শেষমেশ গড়ে দেয় তফাৎ। তিন ম্যাচের প্রতিটিতে জিতে আগেই এই গ্রুপ থেকে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছিল ভারত। অস্ট্রেলিয়ার পর বাংলাদেশকে হারিয়ে সুপার এইটে পাওয়া দ্বিতীয় জয়ে শেষ চারে তাদের সঙ্গী হয়ে ইতিহাস গড়ে আফগানিস্তান। অস্ট্রেলিয়া ২ ও বাংলাদেশ শূন্য পয়েন্ট নিয়ে ছিটকে গেছে আসর থেকে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত