ব্যাটিংয়ে এতো লম্বা খারাপ সময় দেখিনি

দেশে ফিরে তাসকিন আহমেদ

প্রকাশ : ২৯ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

বিশ্বকাপ এলেই আশায় বুক বাঁধেন সমর্থকরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রতিবারই হতাশ হতে হয় তাদের। যে কারণে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টাইগারদের নিয়ে বাড়তি প্রত্যাশা না করার অনুরোধ করেছিলেন লাল সবুজ দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। আইসিসির সহযোগী দেশ ও সহআয়োজক যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে প্রস্তুতিমূলক সিরিজ হেরে খাদের কিনারে ছিল হাথুরুসিংহের শিষ্যরা। তবে বিশ্বকাপে গ্রুপপর্বে চার ম্যাচের তিনটি জিতে সুপার এইটে জায়গা করে নিয়েছিল বাংলাদেশ। তাতে বেড়েছিল প্রত্যাশাও। শেষ আটে টানা দুই ম্যাচ হারলেও সুযোগ ছিল সেমিফাইনালে খেলার। কিন্তু সমীকরণ মেলাতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। জয়ের সুযোগ পেয়েও আফগানিস্তানের কাছে হেরেছে টাইগাররা। বিশ্বকাপের মিশন শেষে গতকাল শুক্রবার সকালে দেশে ফিরেছে বাংলাদেশ দল। অ্যান্টিগা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামি ও দুবাই হয়ে ঢাকায় এসেছে তারা। বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন দলের সহঅধিনায়ক তাসকিন আহমেদ। তিনি মনে করেন, টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ আগে থেকেই অনেক পিছিয়ে ছিল। তবে ‘ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। সব মিলিয়ে সাত ম্যাচে জয় তিনটি। অবিশ্বাস্য মনে হলেও জয়ের সংখ্যায় এটিই বাংলাদেশের সেরা। এর আগের চার আসরে তারা জিতেছিল তিনটি করে ম্যাচ। এবার সেটি ছাপিয়ে প্রথম আসরের পর আবার নাম লিখিয়েছে সুপার এইটে। তাসকিন বলেন, ‘ধীরে ধীরে তো উন্নতি হচ্ছে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে শুরু থেকেই আমাদের পরিসংখ্যান ভালো ছিল না। আগের থেকে তো উন্নতি হচ্ছে। খালি মাইনাস পয়েন্ট দেখলে তো হবে না। এমনিতে মাইনাসেই আছি আমরা। প্লাসে আসার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি, করেই যাব। আপনারা হতাশ হচ্ছেন, স্বাভাবিক। আবার আমরাও আপনাদের ভালো জয় উপহার দেব। বিশ্বাস রাখেন আমাদের ওপর। আমরা সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করছি।’

সুপার এইটে নিজেদের শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছে হতাশাজনক হার মেনে নিয়ে দলের সহ-অধিনায়ক বলেন, ‘আসলে সত্যি কথা বলতে, ভালোর তো কখনো শেষ নেই। ভালো হোক আর খারাপ হোক হ্যাঁ, আরো অনেক ভালো হতে পারত। বিশেষ করে শেষ ম্যাচটা, আমরা সবাই একটু হতাশ হয়েছি। আমরা জেতার চেষ্টা করেছি প্রথমে, ১২ ওভারের মধ্যে। পরে যখন বুঝতে পারলাম ১২ ওভারের মধ্যে শেষ করা সম্ভব না, তখন স্বাভাবিকভাবে খেলার চেষ্টা করেছিল সবাই। তাও জিততে পারিনি।’ তবে দলের বোলিং বিভাগ, জয়ের সংখ্যায় ইতিবাচক দিক দেখানোর চেষ্টা করেন তাসকিন। ‘ইতিবাচক দিক আছে। পুরো টুর্নামেন্টে বোলিং বিভাগ যথেষ্ট ভালো করেছে। সুপার এইটে উঠেছি। সর্ব প্রথম এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আমরা তিনটা জয় পেয়েছি। মানে ইতিবাচক আছে। কিন্তু নেতিবাচকের সংখ্যাটা একটু বেশি। সবার মতো আমরাও একটু হতাশ। প্রত্যাশা অনুযায়ী ভালো হয়নি।’ যুক্তরাষ্ট্রে খেলা ম্যাচগুলোতে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার পেছনের অবশ্য উইকেটের দায় দেয়া যায় অনেকটাই। হিউস্টনে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ বা নিউইয়র্ক ও ডালাসে বিশ্বকাপে উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য একদমই সহায়ক ছিল না। তবে বোলাররা পান বাড়তি সুবিধা। ‘বোলিং বিভাগ আগাগোড়াই গত কয়েকটি বছর ধরে ভালো উন্নতি করে এসেছে। সে ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে। সামনে আরও ভালো হবে। ভালোর তো শেষ নেই। আর ব্যাটিং বিপর্যয় যেটা, সত্যি বলতে বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডে যুক্তরাষ্ট্রে যখন খেলা হয়েছে, তখন উইকেট ব্যাটসম্যানদের পক্ষে খুব কম ছিল।’ ব্যাটসম্যানদের টানা এমন ব্যর্থতা তিনি নিজেও আগে কখনও দেখেননি তাসকিন। ‘আমি বাংলাদেশ দলের হয়ে ক্রিকেট খেলার সময়, প্রায় ১০ বছর ধরে খেলছি, কখনোই ব্যাটিংয়ে এত লম্বা খারাপ সময় দেখিনি। আশা করি এটা খুব দ্রুত কেটে যাবে।’

হতাশার এই আঁধারে টিমটিমে আশার আলো রিশাদ হোসেনের পারফরম্যান্স। পেস বিভাগে দারুণ করেন তানজিম হাসানও। সব সংস্করণ মিলিয়েই বিশ্ব আসরে বাংলাদেশের প্রথম লেগ স্পিনার হিসেবে এবার সুযোগ পান রিশাদ। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধারাবাহিক পারফর্ম করেন তরুণ এই স্পিনার। সব মিলিয়ে ৭ ইনিংসে তার শিকার ১৪ উইকেট। বিশ্বকাপের এক আসরে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেটের রেকর্ড এটি। সাকিব আল হাসানের ১১ উইকেট ছিল আগের রেকর্ড। রিশাদের মতোই প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে গিয়ে সাকিবের রেকর্ড স্পর্শ করেছেন তানজিম। সাত ম্যাচের সবকটিই খেলেছেন ২১ বছর বয়সী পেসার। তানজিম ও রিশাদের আলাদা করে প্রশংসা করে তাসকিন বলেন, ‘তানজিম সাকিব, রিশাদ ওরা সর্বোচ্চ উইকেট শিকারিদের মধ্যে ছিল, সেরা পাঁচে ছিল।

রিশাদ এখনও আছে। সব মিলিয়ে ভালো করেছে। এটা খুবই ইতিবাচক যে বাংলাদেশ থেকে ভবিষ্যতের তারকারা উঠে আসবে। এর মধ্যে বিশ্বকে বোঝানো হয়েছে যে আমাদের সবার মধ্যে বিভিন্ন সামর্থ্য আছে।’ দুই সিনিয়র ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবারের বিশ্বকাপে অফফর্মে ছিলেন। সাকিব শুধু একটি ম্যাচ ভালো করেছেন নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। আার মাহমুদউল্লাহ নিজের অভিজ্ঞতার কোনো কিছুই দেখাতে পারেননি এই আসরে। তাদের অফফর্মে থাকা দলের উপর প্রভাব পড়েছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে তাসকিনকে। তাসকিন বলেন, ‘দুইজন সিনিয়র ক্রিকেটার অফফর্মে থাকার প্রভাব দলের উপর অবশ্যই পড়েছে। তবে মাঠের বাইরে কোনো ধরনের প্রভাব পড়েনি। কারণ, মাঠের বাইরে তারা সবসময় ভালো টিমম্যান। আল্লাহর রহমতে এই যে ৪৭ দিনের মতো একসাথে ছিলাম, সবার আচরণ ভালো ছিল। সবাই একসাথে ছিলাম। মাঠের বাইরে সবই ঠিক ছিল। দলের প্রধান ক্রিকেটাররা অফফর্মে থাকলে সমস্যা হওয়াটাই স্বাভাবিক।’