বাফুফের এজিএম অনুষ্ঠিত

নতুন কাউন্সিলরশিপ অনুমোদন

প্রকাশ : ৩০ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

আর্থিক অস্বচ্ছতার নানা বিতর্কে ফিফার নিষেধাজ্ঞা ও জরিমানার পর অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম)। এবারের এজিএমে চারটি দলকে নতুন কাউন্সিলরশিপ দেয়া হয়েছে। গতকাল শনিবার হোটেল সোনারগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত হয় এজিএম। মূলত সভার উদ্দেশ্যই ছিল নারী ফুটবল লিগে শীর্ষ চার দলের (নাসরিন স্পোর্টস একাডেমি, আতাউর রহমান ভূঁইয়া কলেজ স্পোর্টিং ক্লাব, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও সদ্যপুষ্করনী যুব সংসদ ক্লাব) কাউন্সিলরকে আসন্ন নির্বাচনে ভোটাধিকারের সুযোগ করে দেয়া। যার ষোলকলা পূর্ণ হলো অনুমোদন দেয়ার মাধ্যমে। সেই সঙ্গে প্রায় ২২ কোটি টাকার ঘাটতি নিয়ে ২০২৪ সালের জন্য ৫৩ কোটি টাকা বাজেট অনুমোদন করিয়ে নেয়া হয়েছে। ২০২২-২৩ অডিট রিপোর্টে বাফুফের ভয়াবহ দুর্নীতির চিত্র থাকলেও অনেকটা গায়ের জোরে অনুমোদন করা হয়েছে। কাউন্সিলরদের কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়নি। সবার শেষ পর্যায়ে বেশ কিছু কাউন্সিলর অনেকটা জোর করেই প্রতিবাদের সুরে কথা বলেছেন। তাছাড়া বাফুফের নিষিদ্ধ সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ কিংবা অন্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জরিমানার বিষয়টি উঠে আসলেও নিজের বক্তব্যে কাজী সালাউদ্দিন এড়িয়ে গেছেন। বাফুফের কর্তারাই বছর দেড়-দুই আগে ফিফার বরাত দিয়ে বলেছিলেন নির্বাহী কমিটির আকার ও কাউন্সিলর কমাতে হবে। বাফুফে গঠনতন্ত্র সংশোধনের জন্য কমিটিও করেছিল। দুই বছর না পেরুতেই ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে কাউন্সিলর বৃদ্ধি করলেন বাফুফের কর্তারা। এ বিষয়ে কাজী সালাউদ্দিন বলেন, ‘ফিফা আমাদের নির্দেশনা দিয়েছিল, আমরা বলেছি কমালে ফিফাকেই কমাতে হবে। সাধারণ সভা ছাড়া কমানো বা বাড়ানো সম্ভব নয়। সাধারণ সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা এখন ফিফাকে জানাব।’ কাউন্সিলরশিপ পাওয়া চারটি দলের মধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ফুটবল দল ছাড়া বাকি তিন দলই বাফুফে কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট। চ্যাম্পিয়ন হওয়া নাসরিন স্পোর্টস একাডেমির সঙ্গে মহিলা ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণের সম্পৃক্ততার কথা শোনা যায় ফুটবলাঙ্গনে।

আতাউর রহমান ভুইয়া কলেজ স্পোর্টিং ক্লাব বাফুফে সহ-সভাপতি আতাউর রহমান ভুইয়া মানিকেরই। সূত্রে জানা যায়, বাফুফে কর্তাদের ভোট বৃদ্ধি করতেই ৩ মাস আগে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলো ৪ বছরে ৭০-৮০ কোটি টাকার মতো খরচ করে। এরপর বাফুফের নির্বাচনে একটি ভোটাধিকার পায়। সেখানে নারী দল একটি লিগে মাত্র ৬-৭ ম্যাচ খেলেই ভোটাধিকার পেল। এ নিয়ে বাফুফে সভায় চরম মতবিরোধ ছিল। এতে আপত্তি তুলে অনেকে মতামত জানাতে চাইলেও সুযোগ দেয়া হয়নি। নতুন সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার কণ্ঠরোধ করেছেন। বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর এই অভিযোগ তুলেছেন। তড়িঘড়ির ভোটাভুটিতে উপস্থিত অনেকেই নিশ্চুপ ছিলেন। কেউ সবুজ বোর্ডে হ্যাঁ আবার কেউ লাল বোর্ডে নাও তুলেছিলেন।

দুই তিনজন জোরে পাশ পাশ বলায় নির্বাহী কমিটির মঞ্চ থেকে হ্যাঁ জয়যুক্ত ধরে কাউন্সিলরশীপ অনুমোদন আসে। বাফুফের পদত্যাগ করা নির্বাহী সদস্য ও নীলফামারী জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আরিফ হোসেন মুনও এসেছিলেন এজিএমে। তার কথা, ‘এ রকমটা হবে প্রত্যাশিতই ছিল। সব কিছুই তাদের অনুকূলে ও সাজানো। কথা বলেও কোনো প্রতিকার বা পরিবর্ত হয় না। তাই অনেকেই কথা বলার আগ্রহও হারিয়ে ফেলেছে। এজিএম এখন শুধুই আনুষ্ঠানিকতা। তাদের যদি বোধহয় তাহলেই শুধু ফুটবল উন্নয়ন সম্ভব, অন্যথায় নয়।’ শরীয়তপুর জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি মোজাম্মেল হক চঞ্চল নারী ক্লাবগুলোর কাউন্সিলরশিপ দেয়ার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘অনেকেই এই কাউন্সিলরশিপ না দেয়ার বিষয়ে ‘না’ বোর্ড তুললেও শেষ পর্যন্ত তারা পাশ করেছে।’ তার কথা, ‘এটা প্রহসনের এজিএম হয়েছে। বাফুফের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যে কোথাও জেলা কিংবা তৃণমূল পর্যায়ের ফুটবলের কথা ছিল না। ফুটবলটা ছিল ঢাকা কেন্দ্রিক। এটা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন হতে পারে না। এটার নাম হওয়া উচিত ঢাকা ফুটবল ফেডারেশন।’