ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নিজেকে প্রস্তুত করে ফিরলেন জাহানারা

নিজেকে প্রস্তুত করে ফিরলেন জাহানারা

অভিষেকের পর থেকেই বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের নিয়মিত সদস্য ছিলেন জাহানারা আলম। ছিলেন জাতীয় দলের অধিনায়কও। এরপর টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে সিনিয়র ক্রিকেটারদের বিরোধের সূত্র ধরে দল থেকে বাদ পড়েন তিনি। যে কারণে গত এক বছরে জাতীয় দলে দেখা যায়নি এই পেসারকে। এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপসহ ঘরের মাঠে ভারত-পাকিস্তানের মতো দলের বিপক্ষেও ব্রাত্য ছিলেন জাহানারা। শেষ হওয়া মেয়েদের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি বোলার ছিলেন এই তারকা পেসার। আবাহনীর হয়ে খেলা ৯ ম্যাচে ২৫ উইকেট শিকার করেন তিনি। সেই পারফরম্যান্সের কল্যাণেই তার জন্য খুলে গেছে জাতীয় দলের দরজা। তবে লম্বা সময় ধরে জাতীয় দলের বাইরে থাকলেও পথহারা হননি জাহানারা। ফেরার লড়াইয়ে সর্বোচ্চটুকু দিয়ে নিজেকে প্রস্তুত রেখেছেন যেকোনো সময়ের জন্য। তাইতো বলছেন জাহানারা, ‘প্রতিটি সময় আমি নিজেকে প্রস্তুত রেখেছি যেন নারীর দলে যখনই আমার প্রয়োজন হবে আমি যেন প্রস্তুত হয়ে থাকতে পারি।’ আসন্ন নারী এশিয়া কাপ সামনে রেখে দল ঘোষণা করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। সেই দলে রাখা হয়েছে এই ডানহাতি পেসারকে। ১৪ মাস পর তাকে লাল-সবুজের জার্সিতে বল হাতে দৌড়াতে দেখা যাবে। এই সময়টুকুতে কিভাবে কাজ করেছেন জাহানারা? দেশসেরা কোচ মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনের অধীনে অনুশীলন করে জাতীয় দলের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছেন তিনি। সুদীর্ঘ এক বছরের মধ্যে নয় মাসই সাকিব আল হাসানের মাস্কো অ্যাকাডেমিতে অনুশীলন করেছেন জাহানারা। সেখানে তার দুর্বলতাগুলো নিয়ে কাজ করেছেন সালাহউদ্দিন নিজেই। এ বিষয়ে জাহানারা আলম বলেন,

‘এই দীর্ঘ এক বছরের মধ্যে আমি ৯ মাস ট্রেনিং করেছি মাস্কো একাডেমিতে। সালাউদ্দিন স্যারসহ ওখানে যারা কোচিং স্টাফ ছিলেন তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন আমার সাথে।’ জাতীয় দলে ফেরার প্রতিক্রিয়ায় জাহানারা বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ দীর্ঘ এক বছর পর আবার জাতীয় দলে ফিরেছি। আল্লাহর অশেষ রহমত, শোকর আলহামদুলিল্লাহ। শুকরিয়া জানাই আল্লাহর প্রতি।’ এবারের নারী প্রিমিয়ার লিগে তাক লাগানো পারফরম্যান্স করেছেন আবাহনীকে নেতৃত্ব দেয়া জাহানারা। মাত্র ৯ ম্যাচে নিয়েছেন সর্বোচ্চ ২৫ উইকেট। ওভার প্রতি দিয়েছেন মাত্র ৩.১২ রান করে। এমন পারফরম্যান্সের জন্য খুলে যায় জাতীয় দলের দরজা। ‘শেষ প্রিমিয়ার লিগেও একটি দারুণ পারফরম্যান্স হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। দীর্ঘ নয় মাসের পরিশ্রম বলতে পারেন। সবকিছু মিলিয়ে এটা দারুণ অনুভূতি যে আমি আবারো বাংলাদেশ দলকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারব।’

আসন্ন এশিয়া কাপে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে লড়াই দিয়ে শুরু হবে বাংলাদেশের মিশন। গ্রুপ ‘বি’ থেকে বাংলাদেশের অন্য দুই প্রতিপক্ষ হলো থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়া। জাহানারার চোখ এশিয়া কাপের সেমিফাইনালে। ফেরাতে চান ২০১৮ সালের সুখস্মৃতি। সেবার বাংলাদেশ ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। জাহানারা বলেন, ‘এশিয়া কাপে দলের প্রথম লক্ষ্যই থাকবে ভালোভাবে সেমিফাইনাল খেলা। আমরা যদি গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিফাইনাল খেলতে পারি তাহলে পাকিস্তানের সাথে সেমিফাইনালে লড়তে হতে পারে। এদিক থেকে আমাদের জন্য একটু সহজ হতে পারে। এবং অবশ্যই আমরা সেটাই চেষ্টা করব।’ এশিয়া কাপে প্রতিটা ম্যাচে অবদান রাখতে চান জাহানারা। ‘পজিটিভ রেজাল্ট, আমরা যদি বাংলাদেশ দলের জন্য নিয়ে আসতে পারি এটা আমাদের জন্য ভালো হবে। আমার ব্যক্তিগত লক্ষ্য থাকবে প্রত্যেকটা ম্যাচে আমি যেন অবদান রাখতে পারি দলের জয়ে।’ ৩১ বছর বয়সী পেসারের মতে, সবসময় ফিটনেসকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়াতেই ক্যারিয়ারের নানা পথ মাড়িয়ে এত বছর পরও এতটা তরতাজা ও চনমনে তিনি। ‘আমি সবসময়ই ফিটনেস-ফ্রিক। ৯ বছর বয়স থেকেই খেলাধুল করি, সেটা হ্যান্ডবল, ভলিবল সবাই জানেন এসব আন্তস্কুল, আন্তজেলা, আন্তঃবিভাগ, তখন থেকেই আসলে শুরু। ২০০৭ সালে যখন ক্রিকেট শুরু করি, তখন থেকে চেষ্টা করেছি যেন ফিটনেস ভালো পর্যায়ে থাকে।’ ফিটনেস নিয়ে জাহানারা আরও বলেন, ‘আমি যেহেতু একজন পেস বোলার ২০০৭ সাল থেকে চেষ্টা করেছি একই গতি ধরে রাখতে। বরং গতি বেড়েছে আমার, কমেনি। আমার ফিটেনস ও শক্তি আমাকে সহায়তা করেছে। আপনারা জানেন যে, জিম ও রানিং করতে আমি খুবই পছন্দ করি। বিশেষ করে, এই বয়সে এসে, সাড়ে ১৫ বছর জাতীয় দলকে সার্ভিস দিয়েছি, সাড়ে ১৭ বছর আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ার সবকিছু মিলিয়ে এখনও যে পর্যায়ের ‘ওয়েট ট্রেনিং’ করি বা অনুশীলন করি, ওই ‘পাওয়ার’ আমাকে সহায়তা করে গতি ও ফিটনেস ধরে রাখতে।’ ছেলে-মেয়ে মিলিয়েই এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় ট্রফি এসেছে জাহানারাদের হাত ধরেই। ২০১৮ এশিয়া কাপে সবাইকে চমকে দিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। কুয়ালা লামপুরে রোমাঞ্চকর ফাইনালে শেষ বলে দুই রান নিয়ে জাহানারাই ছিলেন ঐতিহাসিক মুহূর্তটির স্বাক্ষী। এরপর দেশের মাঠে গত এশিয়া কাপে চরমভাবে ব্যর্থ হয়ে সেমি-ফাইনালেই খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। সেই হতাশা পেছনে ফেলে এবার ছয় বছর আগের উৎসব ফেরাতে চান জাহানারা। ‘প্রথম ম্যাচই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে। ইতিবাচক ফল যদি আমরা বাংলাদেশ দলের জন্য আনতে পারি, এটা ভালো হবে এবং অবশ্যই আমরা চেষ্টা আমাদের সুখস্মৃতি ফিরিয়ে আনার জন্য, যেটা আমরা ২০১৮ সালে করেছিলাম।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত