ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিসিবিকে ঢেলে সাজানোর দাবি

বিসিবিকে ঢেলে সাজানোর দাবি

বিগত কয়েক দশক ধরে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের আর্শিবাদপুষ্ঠরা। বিভিন্ন ফেডারেশনের শীর্ষ পদে বসানো হয়েছে দলীয় বিবেচনায়। এক্ষেত্রে অবসরে যাওয়া ক্রীড়াবিদদের উপেক্ষা করা হয়েছে।

তাদের অভিজ্ঞতার মুল্যায়ন করা হয়নি। যে কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এগোনোর চেয়ে পিছিয়ে পড়েছে বিভিন্ন খেলা। সম্প্রতি কোটা সংস্কার ইস্যুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে পতন হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের। ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে গেছেন শেখ হাসিনা। দীর্ঘ ১৬ বছর পর ক্ষমতার পালাবদল ঘটেছে। গঠন করা হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। অন্যান্য ফেডারেশনের মতো বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) শীর্ষ পদধারীরা আত্মগোপনে রয়েছেন। ফলে দৈনিন্দন কাজ চললেও নানাবিধ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বোর্ডকে। মাঠের ক্রিকেটে স্বাভাবিক অবস্থা ফেরানোর চেষ্টা থাকলেও ভেতরের অবস্থা এখনো বৈরি। বিসিবি প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপনসহ শীর্ষস্থানীয় সব কর্তাদের কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিসিবিকে বিশৃঙ্খল প্রতিষ্ঠান হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব নাজমুল আবেদীন ফাহিম। গতকাল শনিবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বিসিবিকে ঢেলে সাজানোর দাবি তুলেছেন তিনি। মিরপুরে ফাহিম বলেন, ‘আমি যেহেতু খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি, আমার মনে হয় না বিসিবি খুব একটা সুশৃঙ্খল সংস্থা। বাইরে থেকে এর চাকচিক্য দেখে হয়তো মনে হয় বিসিবি খুব দারুণ একটা সংস্থা। বিসিবির যে সুযোগ ছিল, সেটার ম্যাক্সিমাম ইউটিলাইজেশন হয়নি। অনেক কারণেই হয়নি। অনেক ইচ্ছাকৃত ভুলের কারণে হয়নি।’

‘আমার মনে হয় এখানে পরিবর্তন আনা দরকার। এখানে যে অনিয়ম হয় ভেতরে ভেতরে, সেটার পরিবর্তন আনা দরকার। কারণ এগুলো শক্তিশালী করতে পারলে আমাদের অনেক ধরনের সমস্যার সমাধান হবে।’- যোগ করেন ফাহিম। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন ফাহিম। বিসিবিতে কাজ শুরু করেছিলেন কোচ হিসেবে। এরপর হাইপারফরম্যান্স ইউনিট, ক্রিকেট একাডেমি, বয়সভিত্তিক দল এবং সর্বশেষ নারী বিভাগে কাজ করেছিলেন ফাহিম। বিসিবির চাকরির পর বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। সরকার পতনের পর বাংলাদেশ ‘এ’ দলের পাকিস্তান সফর পিছিয়ে যায় তিন দিন। আসন্ন পাকিস্তান সিরিজের অনুশীল শুরু হয়নি এখনো। কোচিং স্টাফের কোনো সদস্য এমন পরিস্থিতি বের হচ্ছেন না। এ সব দেখার জন্য যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা এখন বিসিবিতেই আসছেন না। বিশেষ করে ক্রিকেট অপারেশন্স চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস আছেন আড়ালে। তাদের সমালোচনা করে ফাহিম বলেন, ‘তারা যদি ক্রিকেটের সত্যিকার অর্থেই সেবক হতেন, তাহলে কিন্তু তারা আসতেন। আমার মনে হয় না তারা ক্রিকেটের সেবক ছিলেন। তাদের নিজস্ব অ্যাজেন্ডা ছিল। সে অ্যাজেন্ডাই তারা বাস্তবায়ন করেছেন। আমরা দেখেছি ক্রিকেটের কী হয়েছে। ক্লাব ক্রিকেট বলি, পুরো খেলাটাকেই নষ্ট করে দেয়া হয়েছে।’

‘আমার মনে হয় দায়টা সবচেয়ে বেশি নেতৃত্বের। নেতৃত্ব যদি ঠিক থাকে তাহলে বাকি জিনিসগুলো এমনিতেই চ্যানেলাইজ হয়ে যায়। এখন আইসিসির আইন সংক্রান্ত অনেক বিষয় আছে’-আরো যোগ করেন ফাহিম।

পুরো দেশের সিস্টেমকে সংস্কারের অঙ্গীকার নিয়ে দায়িত্ব নিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ব্যতিক্রম নয় বিসিবিও। তারই ধারবাহিকতাই বিসিবিকে সংস্কারের রূপরেখা নিয়ে প্রস্তুত রয়েছেন ক্রিকেট কোচ ও বিশ্লেষক ফাহিম। তিনি বলেন, ‘এটা (রূপরেখা) নিয়েই তো আমরা বছরের পর বছর আমরা চিন্তাভাবনা করেছি, বিশেষ করে আমি। কোন জায়গায় কি করলে আরেকটু এগোনো যায়, কোন জায়গায় ঘাটতি আছে। আমাদের কি রিসোর্স আছে যা দিয়ে আমরা ওভারকাম করতে পারি। সামনে হয়তো এটা নিয়ে আমি আলাপও করব। কোন জায়গায় আমরা পিছিয়ে আছি, অথচ সে জায়গায় আমাদের পিছিয়ে থাকার কোন কারণ নেই।’ ফাহিম দীর্ঘদিন ধরে ক্রিকেটের সঙ্গে আছেন। ক্রিকেট কোচ হিসেবে চাকরি শুরু করেন বিসিবিতে। এরপর হাইপারফর্মেন্স বিভাগ, ক্রিকেট একাডেমি, বয়সভিত্তিক দল এবং সর্বশেষ বিসিবির নারী বিভাগে কাজ করেছেন। বিসিবির ছাড়ার পর বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা ছিলেন লম্বা সময়।

গত জানুয়ারিতে প্রথমবারের মতো যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছিলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনিসহ ক্রীড়াঙ্গনের অনেকেই আত্মগোপনে চলে গেছেন। ফলে নেতৃত্বের সঙ্কট তৈরি হয়েছে নতুন করে।

এছাড়া তিনি থাকাকালেও যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে বিসিবির কর্মকাণ্ড সঠিক পথে ছিল না বলেও মনে করেন নাজমুল আবেদীন ফাহিম। তাই তো যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের হাতে দায়িত্ব দিয়ে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার মাধ্যমে বিসিবি পরিচালনার পক্ষে তিনি। ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হয়েছেন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ। বিসিবিতে পরিবর্তন আনার ব্যাপারে তার সঙ্গেও বসতে আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন কোচ ফাহিম। এর আগে দেশের ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিকেএসপিএর এই কোচ বিসিবির সর্বশেষ নির্বাচনেও অংশ নিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত