ক্রীড়াঙ্গনে সাকিব ছাড়া আওয়ামী লীগের কোনো প্রতিনিধি নেই

প্রকাশ : ১৬ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্পোর্টস ডেস্ক

প্রায় দেড় দশক ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের ‘দখলে’ ছিল দেশের ক্রীড়াঙ্গন। জাতীয় রাজনীতির মতো ক্রীড়াঙ্গনেও বিরোধী দলের সংগঠকদের কোণঠাসা করে ফেলেন আওয়ামী লীগের নেতারা। যেমন দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) কলকাঁঠি নেড়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য নাজমুল হাসান পাপন। তার আগে বিসিবির সভাপতির দায়িত্ব পালন আওয়ামী লীগের নামকরা নেতা ও সংসদ সদস্য এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। এ ছাড়াও বিসিবির সাবেক সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী, বিসিবির সাবেক পরিচালক গোলাম দস্তগীর গাজীও ছিলেন আওয়ামী লীগের সংসদের সদস্য। পরিচালকদের মধ্যে আ জ ম নাসির উদ্দিন ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোশনের সাবেক মেয়র এবং চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা। তবে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তাদের প্রায় সবাই এখন ‘নিখোঁজ’। সিলেটের শফিউর রহমান নাদেল, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক নাইমুর রহমান দুর্জয় এবং নড়াইলের সাবেক সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজাও আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছেন। তারাও এখন অনেকটা ‘আত্মগোপনে’। তবে সাকিব আল হাসান ব্যতিক্রম, কানাডায় টি-টোয়েন্টি লিগ শেষ করে এখন পাকিস্তানে টেস্ট সিরিজে অংশ নিতে বাংলাদেশ দলের সঙ্গে যোগ দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ক্রিকেটে বাইরে ফুটবলেও আওয়ামী লীগের দাপট ছিল। দুই সাবেক সংসদ সদস্য আবদুস সালাম মুর্শেদী এবং বাফুফের সহ-সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদও এখন কোনো খবরে নেই। বাফুফের আরেক সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মহী ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কর্মকর্তা।

বাফুফে সদস্য সাইফুল, ওয়াদুদ পিন্টু, হারুনর রশীদ, সত্যজিৎ দাশ রুপুসহ অনেকে আওয়ামী লীগের নানা পর্যায়ের নানা পদে রয়েছেন। সাবেক রেফারি ও বাফুফের সাবেক সহ-সভাপতি বীর বাহাদুরও নির্বাচিত হয়েছেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরেই পরিচিত বীর বাহাদুর। তাকেও দেখা যায়নি ৫ আগস্টের সরকার পতনের পর থেকে। ক্যারম ফেডারেশনের সভাপতি জুনাইদ আহমেদ পলক ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। সরকার পতনের পর দেশত্যাগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছিলেন তিনি। স্কোয়াশ ফেডারেশনের সভাপতি ফারুক খান, রোলার স্কেটিং ফেডারেশনের সভাপতি আবুল কালাম আজাদকেও দেখা যায়নি সরকার পতনের পরদিন থেকে। ঢাকা-১ আসনে নির্বাচিত হয়েছেন সালমান এফ রহমান। ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি হিসেবে তার মূল পরিচিতি হলেও ঢাকা আবাহনীর চেয়ারম্যান ছিলেন দীর্ঘদিন থেকে। আবাহনী ক্লাবের অন্যতম পরিচালক নসরুল হামিদ বিপুও নেই কোনো খবরে। টেনিস ফেডারেশনের সভাপতি খালিদ মাহমুদ চৌধুরিও প্রতিমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য রুমানা আলী প্রথমবার এমপি হয়েই প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন। হকি ফেডারেশনের সাবেক সহ-সভাপতি এবং আবাহনী ক্লাবের পরিচালক শাহরিয়ার আলম ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। নিখোঁজ আছেন তিনিও। ক্রীড়াঙ্গনে সাঁতার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এমবি সাইফ গোপালগঞ্জ যুব লীগের সাধারণ সম্পাদক। তার আগে ছিলেন রফিজ উদ্দিন তিনিও দলীয় ব্যবস্থায়। অ্যাথলেটিক্সে কৃতি অ্যাথলেট ও সংগঠকদের সরিয়ে দাপট দেখাচ্ছেন আব্দুর রকিব মন্টু। তিনিও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন।এত এত নামের অনুপস্থিতিতে ক্রীড়াঙ্গনে স্বাভাবিকভাবেই দেখা দিয়েছে বড় রকমের শূন্যতা। অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়া আসিফ মাহমুদ দেশের রাজনীতির নবীনতম এক মুখ। দায়িত্বের বড় পদে আসার পরেই তার সামনে আছে শূন্যতা পূরণের বড় চ্যালেঞ্জ। সেখান থেকে ক্রীড়াজগতের এই দুর্দশা ঠিক কীভাবে সামাল দেবেন এই ছাত্রনেতা, সেটার অপেক্ষায় দেশের ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ।