সাত দফা দাবি

আজ বাফুফে ভবনে যাচ্ছেন পেশাদার ফুটবলাররা

প্রকাশ : ১৮ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে প্রায় ১৬ বছর পর দেশে ক্ষমতার পট-পরিবর্তন হয়েছে। পরবর্তীতে শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়েছে। তারপর থেকেই দেশজুড়ে পরিবর্তনের ঢেউ লেগেছে। পরিবর্তনের দাবি উঠেছে ক্রীড়াঙ্গনেও। এমন পরিস্থিতিতে উত্তাল মতিঝিলে অবস্থিত বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ভবন। প্রায় প্রতিদিন সেখানে কোনো না কোনো দাবি নিয়ে হাজির হচ্ছেন ফুটবল সংশ্লিষ্টরা। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল শনিবার ৭ দফা দাবিতে বাফুফে ভবনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন পেশাদার ফুটবলাররা। আজ আবারো সেখানে জড়ো হচ্ছেন তারা। আসন্ন ২০২৪-২৫ মৌসুমে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের দলবদল নিয়ে তৈরি হয়েছে জটিলতা। শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব, শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র ও চট্টগ্রাম আবাহনী- শীর্ষ পর্যায়ে এই তিন ক্লাব দলবদলের কার্যক্রমে যোগ না দেয়ায় অনিশ্চয়তায় পড়েছেন শতাধিক ফুটবলার। এতগুলো ক্লাব একসঙ্গে লিগে অংশ না নেয়াতে জাতীয় ফুটবলারদের পাশাপাশি বিপাকে পড়তে যাচ্ছেন দেশের শীর্ষ লিগে খেলা অন্য ফুটবলাররাও। কারণ প্রিমিয়ার লিগ হচ্ছে খেলোয়াড়দের রুটি-রুজির প্রধান উৎস। একসঙ্গে এতগুলো ক্লাব অংশ না নিলে আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির মুখে পড়বেন তারা। কারণ এরই মধ্যে লিগ থেকে নাম প্রত্যাহার করা ক্লাবগুলোর সঙ্গে আসন্ন মৌসুমের চুক্তিসম্পন্ন করেছেন প্রায় অনেক ফুটবলার। এখন ওই ক্লাবগুলো লিগে অংশ না নিলে প্রায় দেড়শ’ থেকে দুইশত ফুটবলারদের ভবিষ্যৎ হয়ে পড়বে অনিশ্চিত!

এমতাবস্থায়, নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় এক ছাতার নিচে এসে দাঁড়িয়েছেন ফুটবলাররা। গতকাল শনিবার বাফুফে ভবনে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন ফুটবলাররা। কর্মসূচির এখানেই শেষ নয়। আজ আরো বৃহৎ কর্মসূচি নিয়ে বাফুফে ভবনে জড়ো হবেন। তাদের সঙ্গে একাত্বতা জানাতে জাতীয় দলের সাবেক তারকা ফুটবলাররা থাকবেন বলেও নিশ্চিত করেছেন মানববন্ধনে অংশ নিতে আসা ফুটবলাররা। আশরাফুল ইসলাম রানা, শহিদুল আলম সোহেল, তৌহিদুল আলম সবুজ, রেজাউল করিম রেজা, ইমন মাহমুদ বাবু, হাবিব বিপু, রায়হান হাসান, রহমত মিয়া, শাকিল আহমেদ, রিয়াদুল হাসান রাফি, মো. নাঈম, ফয়সাল, ওমর বাবু, আবু সাঈদ, মেহেদী রয়েল, মান্নাফ রাব্বি, আমিনুর রহমান সজিব, মোনায়েম খান রাজু, টুটুল, মিনহাজ বাল্লু, নাজিম, মিঠু, মনির, সাজ্জাদ, রহিম, তাসিন, রুবেল, সুজন, পাপ্পু, লাল, বাবলু, সাহেদ, ইমনসহ জাতীয় দল ও প্রিমিয়ার লিগে বিভিন্ন ক্লাবের জার্সিতে খেলা প্রায় ৫০ জনের একটি দল আজ বাফুফে ভবনে এসে তাদের ৭ দফা দাবি সম্বলিত চিঠি বাফুফের পেশাদার লিগ কমিটির কাছে হস্তান্তর করতে আসেন। কিন্তু লিগ কমিটির প্রতিনিধিদের কেউ ভবনে না থাকায় খেলোয়াড়রা তাদের দাবির চিঠিটি বাফুফের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষারের হাতে তুলে দেন।

খেলোয়াড়দের দেয়া ৭ দফা দাবিগুলো হলো- ১. অনতিবিলম্বে দলবদল পেছানো নিশ্চিত করতে হবে। ২. লিগে প্রত্যেক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। ৩. দায়সারা লিগ চালানো যাবে না। ৪. যে দলগুলো খেলবে না বলছে ওই টিমের কনফার্ম করা খেলোয়াড়দের দায়ভার কে নেবে? ৫. এ বছর বিদেশি খেলোয়াড় ছাড়া লিগ চালাতে হবে। ৬. যে সকল পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান এর আগে ক্লাবের স্পন্সর ছিল তাদের পুনরায় ক্লাবের স্পন্সর করার ব্যবস্থা করতে হবে এবং ৭. যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সঙ্গে সকল খেলোয়াড়দের একটি মিটিং আগামীকালের মধ্যে ব্যবস্থা করতে হবে। গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে জাতীয় দল এবং আবাহনীয় ফুটবলার রেজাউল করিম রেজা বলেন, আমরা এখানে একত্রিত হয়েছি ফুটবল ফেডারেশনে আমাদের কিছু দাবি জানাতে। হঠাৎ করেই কিছু ক্লাব এবারের মৌসুমে দল করবে না বলে জানিয়েছে। এতে করে আমাদের অনেক ফুটবলারের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিয়তার মধ্যে পড়ে গেছে। প্রায় ১০০ জনের উপর রানিং ফুটবলার কোনো দল পাচ্ছে না। আমরা চাই ফুটবল ফেডারেশন এই বিষয়ে চেষ্টা করুক। দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে তাদের খেলানোর বিষয়ে রাজি করাক। এছাড়া আমরা বর্তমান সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার সঙ্গে বসতে চাই। বাফুফের সাধারণ সম্পাদককে জানিয়েছি যেন আগামীকালের (আজ) মধ্যে আমাদের বসার ব্যবস্থা করা হয়।’ রেজা আরো বলেন, এখন হাতে সময় নেই। হঠাৎ করে এতগুলো খেলায়াড় কোথায় যাবে? আমরা প্রয়োজনে স্যাক্রিফাইস করে খেলতে রাজি আছি। আরো খোলামেলা করে বলতে গেলে পারিশ্রমিক কম নিয়ে খেলতে রাজি আছি। তবুও খেলা হোক। মাঠে ফুটবল থাকুক। বাফুফে যেন ক্লাবগুলোকে মাঠে আনতে চেষ্টা করে। যে স্পন্সর প্রতিষ্ঠানগুলো সরে যাচ্ছে তাদের সঙ্গে বাফুফে আলাপ করা হোক। তারা যেন না যেয়ে দেশের ফুটবলের স্বার্থে ফিরে আসে। তাদের ফিরিয়ে এনে কম খরচে এবারের লিগ আয়োজন করা হোক।’ আমরা আগামীকাল সাবেক খেলোয়াড় এবং বিভিন্ন সমর্থক গোষ্ঠী নিয়ে আরো একটি কর্মসূচি পালন করব। আজ রোববার দুপুর ২টায় আমরা বাফুফের সামনে আসব জানান রেজাউল করিম রেজা।

জাতীয় দল এবং সবশেষ লিগে চট্টগ্রাম আবাহনীর জার্সিতে খেলা ডিফেন্ডার রায়হান হাসান বলেন, ‘দিনকে দিন প্রিমিয়ার লিগে দলের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ৫ বছর আগে ১৩ দল নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল প্রিমিয়ার লিগ। এরপর প্রতি বছর দল কমতে কমতে সবশেষ লিগে অংশ নেয় ১০টি দল। এখন যদি সেই সংখ্যা কমে ৬/৭ তে দাঁড়ায় তাতে কীভাবে খেলব আমরা। এমন দায়সারা লিগে আমরা অংশ নিতে চাই না। আমরা চাই সবার অংশগ্রহণ। ফুটবল বাঁচাতে সবার এগিয়ে আসা উচিত। কারণ আমরা ফুটবলার এর বাইরে আমাদের কোনো পরিচয় নেই। এটাই আমাদের রুটি-রুজি।’ সংবাদ সম্মেলনে বাফুফে প্রতিনিধি সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার বলেন, ‘দলবদলের সময় ১৯ আগস্ট পর্যন্ত ছিল। ফিফার অনুমতিক্রমে আরো তিনদিন বর্ধিত করে অর্থা’ ২২ আগস্ট পর্যন্ত করা হয়েছে। খেলোয়াড়দের দাবির কথা আমি শুনেছি। আমরা ক্লাবগুলোর সঙ্গে কথা বলে এটার সমাধানের দ্রুত চেষ্টা করব। এর বাইরে খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার সাক্ষাতের ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’