বিসিবি পুনর্গঠনে আলোচনায় যারা

প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

প্রায় ১৬ বছর পর দেশে ক্ষমতার পট পরিবর্তন হয়েছে। ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আত্মগোপনে আছেন বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনসহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী বোর্ড পরিচালক। এই অবস্থায় স্থবির দেশের ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। স্থবিরতা কাটিয়ে দেশের ক্রিকেট সচল করতে কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ নেই। একটি সূত্র জানিয়েছে বর্তমান সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন পদত্যাগ করতে সম্মত হয়েছেন। বিসিবির এক শীর্ষ পরিচালককে তিনি দেশের বাইরে থেকে ফোনে এই ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। সরকার পরিবর্তনের পর নাজমুল হাসান লন্ডনে চলে গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই গুঞ্জনের পর থেকেই বিসিবি পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। আইসিসির আইনি কাঠামোর মধ্যে অ্যাডহক কমিটি অথবা গঠনতন্ত্র মেনেই নতুন-পুরনোর সমন্বয়ে হতে পারে পরিচালনা পর্ষদ। সেখানে বর্তমান চার পরিচালককে রেখে সাবেক পাঁচ জনের নাম আলোচনায় এসেছে। এই মুহূতে মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড কার্যালয়ে সেনা পাহারায় রয়েছে। স্বাভাবিক কাজে স্থবিরতা। সভাপতি নাজমুল হাসান পদত্যাগে রাজি হলেও কবে, কিভাবে কার্যকর হবে তাতে রাজ্যের গোপনীয়তা। তবে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে বোর্ড পরিচালকদের মধ্যে যারা থাকতে চান আর ঢুকতে চান তাদের মধ্যে। কিভাবে বোর্ড পুনর্গঠন হবে তা নিয়ে নানামুখী বিকল্প সামনে আসছে। তার একটি অ্যাডহক কমিটি গঠন। সেক্ষেত্রে দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিতে আইসিসিকে অনুরোধ করতে হবে। অথবা গঠনতন্ত্র মেনে বর্তমান বোর্ডের কিছু পরিচালককে রেখে নতুন কয়েকজনকে যুক্ত করা। সেক্ষেত্রে বোর্ডের বর্তমান পরিচালকদের মধ্যে থাকতে পারেন ইফতেখার রহমান মিঠু, আকরাম খান, মাহবুব আনাম ও ফাহিম সিনহা। বাইরে থেকে আসতে পারেন সৈয়দ আশরাফুল হক। নাজমুল আবেদীন ফাহিম, ফারুক আহমেদ, খালেদ মাসুদ পাইলট এমনকি তামিম ইকবালের নামও শোনা যাচ্ছে। এ প্রক্রিয়া বাস্তবায়নযোগ্য বলে মনে করেন বোর্ডের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল হক। তিনি বলেন, ‘পুরো বিশ্ব জানে বাংলাদেশে কি হয়েছে, আইসিসিও জানে। তাই আমার মনে হয় না আইসিসির কোনো আপত্তি থাকবে। ধারাবাহিকতার জন্য আমাকে বলতে হয় যে, পুরোনো বোর্ডে বেশ কিছু সৎ লোক ছিল। তাদেরকে অন্তর্ভূক্ত করে একটি বোর্ড গঠন করে চালালে কোনদিক থেকেই কোনো অসুবিধা নেই।’ সঙ্কটে দেশের ক্রিকেটের দায়িত্ব নিতে রাজি, এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের সাবেক এ প্রধান নির্বাহী। আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পেলে প্রক্রিয়া শুরু করবেন। কোনো ভাবেই নারী বিশ্বকাপ অন্য দেশে চলে যাক সেটা চান না সৈয়দ আশরাফুল। যদিও সে জন্য খুব বেশি সময়ও বাকি নেই। সৈয়দ আশরাফুল হক আরো বলেন, ‘একটা স্বৈরাচার যেভাবে দেশটা চালায়, সেভাবেই বিসিবিটা চালানো হতো। সেগুলোর সমাধান করে যদি একটা ভালো বিসিবি বোর্ড করা হয় তাহলে ভালো হবে। আর বাংলাদেশে তো ভালো লোকের অভাব নেই, আমরা লোক পাব যারা বিসিবিকে ভালোভাবে চালাতে পারবে।’ তবে সব ছাপিয়ে এখন আলোচনায় সাবেক ক্রিকেটার ও প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদের নাম। জানা গেছে, গত শনিবার ফারুক আহমেদের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। বৈঠকে বিসিবির গঠনতন্ত্রসহ বিভিন্ন বিষয়ে হয়েছে আলোচনা। সেখানে বোর্ডে কাজ করার জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়েছে ফারুককে। বিষয়টি নিশ্চিত করে গতকাল রোববার ফারুক বলেন, ‘আমাকে বোর্ডে কাজ করার কথা বলা হয়েছে। আমাকে বলেছে আমি পজিটিভভাবে নিয়েছি। আগে এক সময় বোর্ড থেকে রিজাইন করেছিলাম, এখন যদি পরিবেশ ভালো হয়। নিজের মতো কাজ করতে পারি তাহলে কেন নয়। ক্রিকেটকে তো ভালোবাসি। ক্রীড়া উপদেষ্টার সঙ্গে তো মিটিং হচ্ছে।’ বিসিবি সভাপতি হওয়ার দৌড়ে আপনার নাম শোনা যাচ্ছে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পেয়েছেন কি না এমন প্রশ্নে ফারুক বলেন, ‘আমাকে সভাপতির জন্য এখনো প্রস্তাব দেয়া হয়নি বলতে পারছি না এখনই। সভাপতি হওয়ার প্রস্তাব প্রস্তাব পাইনি, জিজ্ঞেস করেছে কাজ করব কিনা। সভাপতি হবো কি না যখন প্রস্তাব দেবে তখন চিন্তা করব।’ তবে পরিবর্তনের প্রথম ধাপ হিসেবে আগে পদত্যাগ করতে হবে সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনকে। তখন বর্তমান পরিচালকদের একজন আপাতত সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে নেবে কার্যক্রম। কেউ পদত্যাগ না করে তিন সভায় অনুপস্থিত থাকলে এমনিই বাতিল হবে পদ।

এদিকে বিসিবির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অন্তবর্তীকালিন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া প্রায় শেষের পথে। অপেক্ষা শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণার। যেখানে সভাপতি হিসেবে দেখা যেতে পারে ফারুক আহমেদকে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মনোনীত পরিচালক হয়ে তিনি বোর্ড প্রধানের দায়িত্ব নেবেন।