ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ক্রিকেট এগিয়ে নেয়ার অঙ্গিকার বিসিবির নতুন সভাপতির

ক্রিকেট এগিয়ে নেয়ার অঙ্গিকার বিসিবির নতুন সভাপতির

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সূত্র ধরে প্রায় ১৬ বছর পর দেশে ক্ষমতার পটপরিবর্তন হয়েছে। নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়েছে। তারপর থেকে রাষ্ট্রের বিভিন্ন সেক্টরে পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেও (বিসিবি) পরিবর্তন এসেছে। গতকাল বুধবার বোর্ড সভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন নাজমুল হাসান পাপন। তার পরই নতুন সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ফারুক আহমেদের নাম ঘোষণা করা হয়। তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি কেবল ক্রিকেট মাথায় রেখে কাজ করার কথা জানান, ‘লক্ষ্য অনেক বড়। দেশের মুখ উজ্জ্বল করা, সেই সঙ্গে দলকে (জাতীয় দল) একটা জায়গায় দেখতে চাই। সেক্ষেত্রে এটা অনেক বড় ব্যাপার। অনেক জায়গায় আমাদের কাজ করতে হবে। আপনারা জানেন যে অনেকদিন ধরে কাজ হয়েছে, হয়নি অনেক প্রশ্ন আছে। আমার প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এটা যদি আমরা মাথায় রাখি বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ ক্রিকেট দল তাহলে আমাদের কাজগুলো সহজ হবে। আমরা যেন অন্য দিকে ডাইভার্ট না হই। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ও বাংলাদেশ দেশ হিসেবে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’ বিকালে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন বিসিবির নতুন সভাপতি ফারুক আহমেদে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে প্রাণ দেয়ার সবার প্রতি সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করে শুরু হয় সংবাদ সম্মেলন। জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে নতুন বিসিবিপ্রধান দিলেন অনেক প্রতিশ্রুতি, আশাবাদ ও নতুন দিনের জয়গান। করলেন পরিবর্তনের অঙ্গিকার। ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আমি অত্যন্ত গর্বিত। খুবই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব আমাকে দেয়া হয়েছে। আমার খেলোয়াড়ি জীবন থেকে ধরলে, ১৯৮২ থেকে আজকে ২০২৪ সাল, ৪২ বছরের বেশি হবে (ক্রিকেটে সম্পৃক্ত)। বিভিন্ন পরিক্রমায় আমি খেলেছি, অধিনায়কত্ব করেছি। নির্বাচক কমিটিতে ছিলাম। সবাই জানে দুই দফায়, আসলে তিন দফায় ছিলাম। ছোট্ট একটা মেয়াদে ছিলাম খেলোয়াড় থাকার সময়। তার পর এখানে এসেছি (সভাপতি হিসেবে)।’ নিজের প্রতিক্রিয়া জানানোর পরই ফারুক বললেন, দেশের ক্রিকেট পরিচালনার পদ্ধতি তিনি নতুন করে সাজাতে চান। ‘বাংলাদেশের মতো সম্ভাবনাময় একটা দেশের যতটা করার দরকার ছিল, আমরা ততটা পারিনি। আমাদের সাফল্য একদম কম নেই। তবে সুনির্দিষ্টি কিছু জায়গায় আমাদের আরো উন্নতি করার দরকার ছিল, আমরা পারিনি। আমাদের দায়িত্ব হবে, এই সিস্টেমটাকে পুনর্গঠন করা।’ তিনি বলেন, ‘অনেক সময় অনেক কাজ করা যায় না, অনেক বাইরের চাপ থাকে। আশা করব যে, এবার আমি সভাপতি থাকার অবস্থায়, যতটুকু সম্ভব, এটা সুন্দর সিস্টেম দাঁড় করাতে চাই।’ সংবাদ সম্মেলনে উঠে আসল তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান ও প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের প্রসঙ্গ। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে জাতীয় দলের বাইরে আছেন সাবেক অধিনায়ক তামিম। বিসিবির নতুন সভাপতি তাকে দেখতে চান দলে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এক্ষেত্রে কিন্তু খেলোয়াড়ের চিন্তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তামিম কী চিন্তা করছে, প্রথম তার সঙ্গে কথা বলা দরকার। এদিক-সেদিক না ঘুরিয়ে। তামিম খুব বিচক্ষণ ছেলে। আমার মনে হয়, সে বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরাদের একজন।’ ক্রিকেট প্রসাশকের ভূমিকায় আসা জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আপনি যদি আমাকে বলেন, আমি দেখতে চাই তামিম আরো ২-৩ বছর খেলবে। এটা আমার ব্যক্তিগত অভিমত। আমার ব্যক্তিগত অভিমতে কিন্তু কিছু যায় আসে না। ওর ফিটনেস, দলে আসতে হলে কী করতে হবে সেই বিষয়গুলো আছে। সভাপতি হিসেবে অফ দ্য রেকর্ড যদি জিজ্ঞেস করেন, আমি কিন্তু দেখতে চাই, সে আরো ২-৩ বছর ক্রিকেট খেলুক।’

এখনো জাতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য সাকিব আল হাসান। একই সঙ্গে সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। তবে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই গণ আন্দোলনের মুখে পতন হয়েছে সেই সরকারের। এমন রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে সাকিবের ক্রিকেট ভবিষ্যৎ নিয়েও শঙ্কা দেখা দেয়। তবে আপাতত সাকিবের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে রাজনীতির প্রভাব পড়ছে না। পাকিস্তান সিরিজে খেলছেন তিনি। তারপরও প্রশ্ন উঠছে, জাতীয় দলে খেলার সময়ে রাজনীতিতে যোগ দেয়া কতটা যুক্তিসঙ্গত? চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটাররা অন্যান্য পেশায় যোগ দিতে পারবেন কি না তা নিয়ে আলোচনা করবে বোর্ড। বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘এখন যদি বোর্ড থেকে বলে দেয়া হতো যে তাকে (সাকিব) দলে নিবা না, তাহলে সেটা পলিসির ব্যাপার হতো। তখন সেই দায়টা বোর্ডের ওপর আসতো। সাকিব বাইরে ঘুরে ঘুরে খেলতে পারবে কি না সেটা একটা ব্যাপার। সেটা আমরা ভালোভাবে দেখবো।’

বিসিবি সভাপতি হওয়ার আগেই চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে নিয়ে নিজের ভাবনা জানিয়েছিলেন ফারুক আহমেদ। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচের পদে হাথুরুসিংহেকে রাখার কোনো কারণ দেখেন না। নতুন সভাপতি হওয়ার পরও নিজের আগের অবস্থানে অনড় থাকলেন সাবেক এই ক্রিকেটার। বিসিবির নতুন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর হাথুরুসিংহের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্নে তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কান এই কোচকে দায়িত্বে রাখতে চান না, ‘হাথুরুসিংহের সঙ্গে চুক্তিটা কী, সেটা আমি ঠিক জানি না। আমি (তাকে না রাখার) আগের জায়গাতেই আছি। আমি যা বলেছি, সেটা থেকে সরে যাইনি। এখন আমাকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জিনিস দেখতে হবে। কীভাবে কী করা দরকার, তার চেয়ে ভালো কাউকে পাই কিনা বা কাছাকাছি যারা ভালো করতে পারব— এটা দেখব, তারপর কথা বলব। আমি আসলে ওই অবস্থান থেকে সরিনি।’ গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশের দায়িত্ব নেন হাথুরুসিংহে। আগামী বছরের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত রয়েছে বিসিবির সঙ্গে তার চুক্তির মেয়াদ। প্রধান কোচের পদে পরিবর্তন আনার বিষয়ে নতুন বিসিবি প্রধানের ভাষ্য, ‘এই মুহূর্তে বলা কঠিন। দুই-তিন দিন আমাদের কলিগদের সঙ্গে কথা বলে দেখি। একজন কোচকে যখন আনা হয়, তখন নিশ্চয়ই সম্ভাব্য তিন-চারজনের সংক্ষিপ্ত তালিকা থাকে। অন্যরা আসতে পারবে নাকি পারবে না— এটা দেখতে হবে।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত