শুটিংয়ে রাম রাজত্ব কায়েম করেছেন অপু

প্রকাশ : ২৩ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

শুটারদের মাধ্যমে বিদেশ থেকে অস্ত্র এনে বিক্রি করে অর্থ আয়, শুটিং ফেডারেশন ভাড়া দিয়ে অবৈধভাবে ইনকাম, নিজের বাড়ির পাহারায় শুটারদের রাখার মতো দুর্নীতি ও গর্হিত কাজ করতেন শুটিং ফেডারেশনের মহাসচিব ইন্তেখাবুল হামিদ অপু। শুধু তাই নয়, জালিয়াতি ধরা পড়ার ভয়ে বড় ভাই সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর প্রভাব খাটিয়ে নির্বাচিত কমিটি ভেঙে দেয়ার মতো অনৈতিক কাজও করেছিলেন তিনি। যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও নিজের মেয়ে আমিরা হামিদকে নিয়ে গেছেন আর্জেন্টিনায় খেলাতে।

এভাবেই স্বেচ্ছ্বারিতা, দূর্নীতি আর স্বজনপ্রীতির ছত্রছায়ায় শুটিংকে বন্দি করে রেখেছিলেন অপু।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকার পদত্যাগের পর অন্য ক্রীড়া ফেডারেশনের মতো বেরিয়ে আসছে শুটিংয়ে অপুর দুঃশাসনের কাহিনী। গুশলানের শুটিং স্পোর্ট ফেডারেশনের জায়গাটি মাত্র এক টাকার বিনিময়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ লিজ দিয়েছিল শুটিং ফেডারেশনকে। কিন্তু দশ বছর আগে চেয়ারে বসার পর সেই শুটিংকেই গিলে খাওয়ার পায়তারা করেছেন অপু। পরবর্তীতে শুটিংয়ের অডিটোরিয়াম নানাভাবে ভাড়া দিয়ে অর্থ আয়ের উৎস বানিয়েছিলেন তিনি। শুধু তাই নয়, চুক্তি করে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকে নিয়মিত মাসোহারার মাধ্যমে ভাড়ার ব্যবস্থা করেছিলেন অপু। জানা গেছে, অর্থলোভে পড়ে শুটিং ফেডারেশনের স্থানে ১৫ থেকে ২০তলা করার জন্য বোরাক নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে দিতে চেয়েছিলেন মহাসচিব। যেখানে এই নির্মান প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কোলাবরেশনে থাকতে চেয়েছিল হামিদ গ্রুপের প্রিয় প্রাঙ্গণও। বিষয়টি প্রকাশ হয়ে পড়লে তৎকালীন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলকে দিয়ে সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরীকে বলির পাঠা বানিয়ে অ্যাডহক কমিটি গড়তে সহায়তা করেন নসরুল হামিদ বিপু।

এ ছাড়া ফেডারেশনের ক্ষমতাধর মহাসচিবের বিরুদ্ধে শুটিংয়ের সরঞ্জাম কেনা, শুটিং রেঞ্জের সংস্কার কাজেও নয়ছয়ের অভিযোগ আছে।

নিজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডেলকো বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন লিমিটেড দিয়ে শুটিংয়ের প্রত্যেকটি চেঞ্জার ক্রয়ে ২৬ লাখ টাকা দেখিয়ে বিপুল অংকের অর্থ আত্মসাত করেছেন অপু। অথচ একই চেঞ্জার অন্য ক্লাবে কেনা হয়েছে মাত্র ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা করে। অভিযোগে আরও জানা যায়, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে বাংলাদেশ শুটিং দল জার্মানি থেকে দেশে ফেরত আসার সময় কতিপয় শুটারের মাধ্যমে প্রায় ২০টি রাইফেল ও পিস্তল শুল্ক ফাঁকি দিয়ে দেশে এনে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করেন অপু। বিমান বন্দরে কাস্টমস কর্মকর্তাদের হাত করতে বড় ভাই প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদকে কাজে লাগান অপু।

সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে সাবেক স্বর্ণজয়ী শুটার সাবরিনা সুলতানা শুটিং স্পোর্ট ফেডারেশনের বর্তমান মহাসচিব ইন্তেখাবুল হামিদের পদত্যাগ ও অপসারণের দাবি করে বলেন, ‘স্বৈরাচারী সরকারের দুর্নীতিবাজ দোসর ইন্তেখাবুল হামিদ ১০ বছর ধরে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। তার স্বেচ্ছাচারিতা একসময়ের সম্ভাবনাময় খেলা শুটিংকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। এই মহাসচিব শুটিং ফেডারেশনকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসাবে ব্যবহার করেছে। আমরা তার অপসারণ চাই।’

পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ভাইয়ের ক্ষমতাবলে শুটিংয়ে রাম রাজত্ব কায়েম করেছে অপু। এখনকার সভাপতি তার কিছুই জানেন না। শুটিংয়ে আমাদের বিদেশি জাজেস লাইসেন্সগুলো পড়ে আছে। যা রিনিউ করতে পাঠায় না বর্তমান মহাসচিব। অরাজকতা থেকে মুক্তি চাই আমরা। আমরা স্বাধীন ও স্বচ্ছ্ব কমিটি চাই, যারা শুটিং রক্ষা করবে। এটা কারো বাবার সম্পত্তি নয়।’

সূত্রে জানা গেছে, ফতুল্লার বাড়ির কম্পাউন্ডে তিনটি বিলাসবহুল পারিবারিক ইয়োট পড়ে রয়েছে বিপু ও অপুর। যার দাম যথাক্রমে ২০, ১২ ও ৫ কোটি টাকা। অথচ এই বিলাসবহুল ইয়োটকে স্পিডবোড দেখিয়ে কর ফাঁকি দিয়েছেন এই দুই ভাই।