ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সাফ শিরোপা শহীদ ছাত্র জনতা ও বন্যার্তদের উৎসর্গ

সাফ শিরোপা শহীদ ছাত্র জনতা ও বন্যার্তদের উৎসর্গ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের স্মরণ করেই সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপ মিশন শুরু করেছিল বাংলাদেশ দল। আসরে দলের হয়ে প্রথম গোলদাতা মিরাজুল ইসলাম আলাদা টি শার্ট পরে গোল উদযাপন করেছিলেন। স্মরণ করা হয় আবু সাঈদ ও মুগ্ধদের জীবন উৎসর্গের কথা। এবার নেপালকে উড়িয়ে চ্যাম্পিয়ন লাল-সবুজের যুবারা। ট্রফি জিতেও শহীদ ছাত্র-জনতাকে ভোলেননি তারা। শিরোপা জয়ের পর প্রতিক্রিয়ায় কোচ, খেলোয়াড়দের মুখে উঠে এলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রাণ হারানোদের কথা, চলমান বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মানুষের প্রসঙ্গও। গতকাল বুধবার ললিতপুরের আনফা কমপ্লেক্সে সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে স্বাগতিকদের ৪-১ গোলে উড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো বয়সভিত্তিক এই ক্যাটাগরিতে সাফল্যের উচ্ছ্বাসে ভাসল দল। তারা সবাই এই আনন্দ, অর্জন উৎসর্গ করলেন গত জুলাই ও অগাস্টের গণআন্দোলনে শহীদদের উদ্দেশে। দুই গোল করে ও রাব্বী হোসেন রাহুলের গোলে অবদান রাখা মিরাজুল যেমন বললেন, তারা নিজের জন্য নয়, দেশের মানুষের জন্য খেলেছেন। এই তরুণ ফরোয়ার্ড হেরে যাওয়া নেপালের প্রশংসাও করতে ভোলেননি। ‘আলহামদুলিল্লাহ, সবকিছুর জন্য আল্লাহ সাহায্য করেছেন, নইলে পারতাম না। নেপাল ভালো খেলেছে, নেপাল দলেও অনেক ভালো খেলোয়াড় আছে, কিন্তু ভাগ্য ওদের পক্ষে ছিল না। আমাদের পক্ষে ছিল।’ মিরাজুল বলেন, ‘সত্য কথা বলতে, এখানে আমাদের প্রথম থেকে লক্ষ্য ছিল ফাইনালে খেলা। আমাদের দেশে এখন খারাপ অবস্থা, অনেক কিছু হয়েছে, বন্যা চলছে, এই পুরো খেলাটা আমরা বাংলাদেশের মানুষের জন্য খেলেছি। নিজের জন্য আমরা খেলিনি। দেশের মানুষের জন্য খেলেছি। ফুটবল যেন এগিয়ে যায় এজন্য খেলেছি।’ রাব্বীর কণ্ঠে থাকল গ্রুপপর্বে নেপালের বিপক্ষে হারের মধুর প্রতিশোধ নেয়ার তৃপ্তি। উঠে এলো দেশের সাম্প্রতিক প্রসঙ্গও।

‘নেপালের কাছে গ্রুপ পর্বে আমরা ২-১ গোলে হেরেছিলাম। এবার আমাদের লক্ষ্য ছিল, যেভাবেই হোক ফাইনালে জিততে হবে। সেই নিবেদন ও মনোযোগ আমাদের ছিল। স্টেডিয়ামে পরিবেশ, সমর্থক সবকিছুই দারুণ ছিল। আমরা খুব উপভোগ করেছি। এই উপভোগ্য পরিবেশের মধ্যে সেরাটা দিতে পেরেছি, এ কারণে জিততে পেরেছি।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের অবস্থা এখন ভালো নয়। বন্যার্ত যারা আছেন এবং গত জুলাই মাসে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের আমরা অনেক শ্রদ্ধা করি এবং তাদের জন্য এই ট্রফিটা উৎসর্গ করলাম।’ কোচ মারুফুল হকও স্মরণ করলেন আন্দোলনে প্রাণ হারানোদের। বন্যায় ক্ষুধা, তৃষ্ণায় দুঃসময় দিন কাটানো দেশবাসীর কথাও। এই শিরোপা নতুন বাংলাদেশ গড়তে অনুপ্রেরণা যোগাবে বলেও মনে করেন বাংলাদেশ কোচ। ‘আজকের ম্যাচের আগে আমাদের পরিকল্পনা ছিল ধীরলয়ে খেলার। কেননা, গত পরশুই আমরা একটা ম্যাচ খেলেছিলাম (ভারতের বিপক্ষে সেমি-ফাইনাল), নেপাল দুই দিন সময় পেয়েছিল বিশ্রামের জন্য। ভেবেছিলাম, শুরুতে তেড়েফুঁড়ে খেলতে যাওয়াটা ছেলেদের জন্য চাপের হয়ে যাবে।

শুরুর ১০ মিনিটেৃনেপাল আসলেই ভালো দল, মেধাবী খেলোয়াড় আছে, কিন্তু দেখলাম তারা চাপ অনুভব করছে। তখন ছেলেদের বললাম, যদি তোমরা সহজাত খেলতে পার, পাস-মুভ ধারাবাহিকভাবে করে যাও (ফল আসবে)।’ লাল সবুজের যুবাদের কোচ বলেন, ‘প্রথমত আমি এই ট্রফি উৎসর্গ করছি গত মাস এবং এ মাসে নতুন বাংলাদেশের জন্য যে নায়করা জীবন দিয়েছে, তাদের উদ্দেশে। গত মাসে (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে) আমরা অনেক নায়ককে হারিয়েছি। এরপর গত কিছুদিন ধরে ভীষণ বন্যা চলছে। অনেক পরিবার খাবার, পানির জন্য ভুগছে। সরকার চেষ্টা করছে (পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের)। আমি মনে করি, এই জয় নতুন বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে সবাইকে অনুপ্রাণিত করবে।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত